বন্যার পানি কমে আসায় ফেনীর কিছু কিছু এলাকায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরতে শুরু করেছেন বন্যার্তরা। তবে বন্যায় অনেকের ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি দেখা দিয়েছে খাবার ও নিরাপদ পানির সংকট।
এদিকে বিদ্যুৎ ও শুকনো জ্বালানি কাঠ না থাকায় এই এলাকায় বেড়েছে মোমবাতি ও এলপি গ্যাস সিলিন্ডারের চাহিদা। এই সুযোগে এই দুটি পণ্যের দাম প্রায় ৪ থেকে ৫ গুণ বাড়িয়ে দিয়েছেন মজুতদারেরা।
শুধু মোমবাতি ও গ্যাস সিলিন্ডারই নয়। জেলার বিভিন্ন দোকানপাট ডুবে যাওয়া এবং সরবরাহ বন্ধ থাকায় খাদ্যসহ প্রায় সব পণ্যের দাম বাড়ানো হয়েছে।
রোববার (২৫ আগস্ট) ফেনীর সোনাগাজি উপজেলার ডাক বাংলো এলাকায় দেখা যায়, ৫ টাকা দামের মোমবাতি বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। ১৪০০ টাকার সাড়ে ১২ কেজির গ্যাস সিলিন্ডার এখন বিক্রি হচ্ছে ৩ থেকে ৫ হাজার টাকায়। আবার কোনো কোনো এলাকায় টাকা দিয়েও পাওয়া যাচ্ছে না এই দুটি পণ্য।
তাই, একদিকে যেমন রান্নাবান্না করা যাচ্ছে না বলে শুকানো খাবার খেয়ে অর্ধাহারে দিন পার করতে হচ্ছে। অন্যদিকে সন্ধ্যার পর থেকে ঘুটঘুটে অন্ধকারে রাত পার করতে হচ্ছে বানভাসি মানুষগুলোকে।
চাল, ডাল, পেঁয়াজ, তেল, ডিম, লবণের পত পণ্যের সরবরাহ নেই বললেই চলে। শাকসবজির সরবরাহ না থাকায় প্রায় সবগুলো বাজারই বন্ধ। এতে, বেশ বিপাকে পড়েছেন বন্যাদুর্গত ফেনী জেলার ৯০ ভাগ এলাকার সাত লাখেরও বেশি বাসিন্দা। তাই, ত্রাণ হিসেবে পাওয়া শুকানো খাবার চিড়ামুড়ি ও বিস্কুটই একমাত্র ভরসা। অনেকের কপালে আবার তাও জুটছে না।
সোনাগাজি উপজেলার লকুর বাজার এলাকার দোকানি শাহাবুদ্দিন বলেন, “বাজারের বেশিরভাগ দোকানের মালামাল বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে গেছে। যেগুলো অবশিষ্ট ছিল, সেগুলো প্রথম দুই দিনে বিক্রি হয়ে গেছে। ফেনী শহরের পাইকারি দোকানগুলো থেকে নতুন পণ্য আনার উপায়ও নেই।”
শাহাবুদ্দিন আরও বলেন, “বিদ্যুৎ না থাকায় মোমবাতির চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ২০ কিলোমিটার পথ কোমর সমান পানি ঠেলে গিয়ে ৩-৪ গুণ দামে মাত্র ৫ প্যাকেট মোমবাতি কিনেছি। আসা-যাওয়ার খরচসহ প্রতিটি মোমবাতির দাম পড়েছে ২০ টাকা। আমি ২৫ টাকায় বিক্রি করছি।”
তবে, ইমাম হোসেন নামের এক যুবক অভিযোগ করে বলেন, “বাজারের দোকানাররা সিন্ডিকেট করে একেকটি মোমবাতি ৫০ টাকায় বিক্রি করছেন। যাদের কাছে গ্যাসের সিলিন্ডার ছিল তারা প্রতি সিলিন্ডার ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার টাকা দাবি করছে।”
এদিকে, চার দিন বন্ধ থাকার পর শনিবার (২৪ আগস্ট) সকাল থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে যান চলাচল শুরু হলেও গাড়ির গতি খুবই ধীর ছিল। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মহাসড়কের কয়েকটি পয়েন্ট পার হতে সময় লাগছিল অনেক।
চট্টগ্রামমুখী লেনে শনিবার রাত পর্যন্ত বন্যার পানি প্রবাহিত হওয়ায় ঢাকামুখী লেনে উভয় লেনের গাড়ি চলছিল। মহাসড়ক চালু হওয়ার খবর পেয়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম থেকে পণ্য ও যাত্রীবাহী গাড়ি ছাড়ায় যানজট আরও তীব্র আকার ধারণ করে।