টাঙ্গাইলের অভ্যন্তরীণ নদীগুলোতে পানি বাড়ার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নৌকা তৈরির ধুম। জেলার ১১টি উপজেলার ৩২টি হাটে বিক্রি হচ্ছে এসব নৌকা। দিনরাত হাতুরি আর বাটালের ঠুকঠুকানিতে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন জেলার কাঠমিস্ত্রিরা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কাঠমিস্ত্রিরা (সুতাররা) কেউ বাড়ির আঙিনায়, আবার কেউ কেউ হাটের পাশে নৌকা তৈরি করছেন।
জানা যায়, টাঙ্গাইলের ১২টি উপজেলার মধ্যে মধুপুর ছাড়া বাকি ১১ উপজেলায় বর্ষা মৌসুমে যাতায়াতে নৌকার প্রয়োজন হয়। আর তাই বর্ষা মৌসুমকে সামনে রেখে নৌকা তৈরির কাঠমিস্ত্রিরা ব্যস্ত হয়ে পড়েন। দিনরাত কাঠ চিরানো, তক্তা, গুড়া বানানো, তারকাঁটা ও পাতাম দিয়ে তক্তা জোড়া লাগানোর কাজে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন এসব কাঠমিস্ত্রি।
কাঠমিস্ত্রিরা জানান, এখন প্রায় সব এলাকার বড় রাস্তাই পাকা করা হয়েছে। ফলে দূরের যাত্রার জন্য কেউ বড় নৌকা তৈরি করে না। বর্ষায় এ পাড়া থেকে ওপাড়া যাতায়াতের জন্য ছোট ছোট নৌকার প্রয়োজন হয়। তাই এখন আর বড় নৌকা তৈরি করা হয় না। এছাড়া এলাকায় ছোট নৌকার কদর বেশি।
তবে অধিকাংশ কাঠমিস্ত্রি জানায়, বর্ষা মৌসুমে কাঠমিস্ত্রির কাজ করেই তাদের সংসার চলে। ছোট সময় থেকে বাপ-দাদার কাছে নৌকা বানানো মিখেছেন তারা। কাঠমিস্ত্রির কাজ তাদের নেশা ও পেশা। একটি নৌকা তৈরিতে তাদরে সময় লাগে ২-৩দিন।
প্রফুল্ল নামের এক কাঠমিস্ত্রি জানান, দীর্ঘ ৫৫ বছরের বেশি সময় ধরে কাঠমিস্ত্রির কাজ করছেন তিনি। বাপ-দাদার শিখিয়ে যাওয়া কাজ এখন তাদের নেশা ও পেশা হয়ে গেছে। একটি ছোট নৌকা তৈরি করতে ২-৩দিন সময় লাগে। আর এতে খরচ হয় ৮ থেকে ১৮ হাজার টাকা। হাটে এসব ছোট নৌকা ১০ থেকে ২০ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়।
কাঠমিস্ত্রি রমেন স্যানাল জানান, শিশুকালে হাতুড়ি-বাটালের সঙ্গে বড় হয়েছেন তিনি। পূর্বপুরুষের পেশাকেই মূল পেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। তিনি চুক্তিতে বায়নায় নৌকা তৈরি করেন। এতে প্রতিদিন ৭০০ থেকে এক হাজার টাকা মজুরি পান। বর্ষার সময় আয়-রোজগার ভালোই হয়। শুকনো মৌসুমে কৃষিকাজ করেন। তিনি এই পেশায় প্রায় ৩৫ বছর ধরে রয়েছেন।
অপর কাঠমিস্ত্রি সখী সরকার জানান, প্রায় ৩০ বছর ধরে তিনি এ পেশার সঙ্গে জড়িত। বর্ষার সময় নৌকা তৈরি ও অন্য সময় ঘর তৈরির কাজ করেন। বর্ষা মৌসুমে নৌকার খুবই কদর থাকে। এ সময় নৌকার কাজ বেশি করেন।