সুখ্যাতির কারণে দেশ-বিদেশে চাঁদপুরের ইলিশের ব্যাপক চাহিদা। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ইলিশ কিনতে চাঁদপুর মৎস্য অবতরণকেন্দ্রে আসছেন ক্রেতারা। তবে ভরা মৌসুমেও পদ্মা-মেঘনা নদী থেকে ধরা ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে। দাম সাধ্যের বাইরে থাকায় অনেকেই খালি হাতে ফিরে যাচ্ছেন।
ক্রেতারা বলছেন, ঢাকার চেয়েও চাঁদপুরে ইলিশের দাম বেশি। এখন দুর্নীতি-চাঁদাবাজি নেই, তবু ইলিশ চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে।
শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) সকালে মাছঘাটে গিয়ে দেখা গেছে, খুচরা ও পাইকারি ইলিশ কেনাবেচাতে আড়তগুলো সরগরম।
তবে পাইকারির চাইতে খুচরা ইলিশের ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি।
ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে লোকজন এই ঘাটে প্রতিদিনই ইলিশ কিনতে আসেন। ঘাটের পাশেই পর্যটনকেন্দ্র তিন নদীর মোহনা। এ কারণে ভ্রমণে আসা লোকজনও ইলিশ কেনার জন্য এই ঘাটে ভিড় করেন।
ঢাকা থেকে ইলিশ কিনতে আসা ক্রেতা রবিন বলেন, ঢাকাতে যে ইলিশ প্রতি কেজি বিক্রি হয় ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ওই আকারের ইলিশ এখানে বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ টাকা। কারণ, হিসেবে ব্যবসায়ীরা ইলিশের সরবরাহ কম বলে জানাচ্ছেন।
লাকসাম থেকে ইলিশ কিনতে এসেছেন জাহাঙ্গীর। তিনি বলেন, “৭০০ থেকে ৮০০ টাকার মধ্যে ইলিশ পাব এ আশায় এসেছি। কিন্তু এখানে ৫০০ গ্রাম ওজনের ইলিশই বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ১০০ টাকা। আমাদের আয় কম। তাই ইলিশ না কিনে ফিরে যেতে হচ্ছে।”
একই এলাকা থেকে আসা মজিবুর রহমান বলেন, “ঘুরতে এসেছি তিন নদীর মোহনায়। ঘুরেছি কিন্তু ইলিশ কিনতে পারিনি। কারণ, ইলিশের যে দাম, তাতে আমাদের পক্ষে ইলিশ কেনা সম্ভব না।”
জহিরুল ইসলাম নামে আরেক ক্রেতা বলেন, “গত বছর ঠিক এই সময়ে এই ঘাটে ইলিশ কিনতে এসেছি। তখন এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হয়েছে ১ হাজার ২০০ থেকে ১ হাজির ৫০০ টাকা। কিন্তু এখন ওই আকারের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ২ হাজার টাকা। আর ১ কেজি ওজনের বেশি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকা। আগে দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি থাকায় ইলিশের দাম বেড়েছে। কিন্তু এখন সেগুলো না থাকলেও ইলিশের দাম কমছে না।”
একাধিক খুচরা ইলিশ বিক্রেতা বলেন, বেশি দামে ইলিশ কিনতে হচ্ছে। যে কারণে চড়া দামেই বিক্রি করতে হচ্ছে। আর গত বছর তুলনায় ইলিশের চাহিদা বেড়েছে। সে হিসাবে সরবরাহ নেই।
চাঁদপুর মৎস্য বণিক সমবায় সমিতি লিমিটেডের সভাপতি আব্দুল বারী জমাদার মানিক বলেন, “ইলিশ পর্যায়ক্রমে প্রতিবছর উৎপাদন কমছে। সে হিসাবে চাহিদা বেড়েছে। কিন্তু তুলনামূলক দাম বাড়েনি। কেনার আলোকে আমাদের বিক্রি করতে হয়। তবে মৌসুমের শেষ সময়েও যদি সরবরাহ বাড়ে এবং নদীতে ইলিশ ধরা পড়ে, তাহলে দাম কিছুটা হলেও কমবে। কিন্তু ক্রেতাদের অভিযোগে ইলিশের দাম কমানো যায় না।”