বিকট শব্দে ঘুম ভাঙে সোবহান আলীর। গাজীপুরের ভাওয়ালের কাছে বনখড়িয়া এলাকায় দুর্ঘটনাকবলিত ট্রেনের যাত্রী ছিলেন। ওই ট্রেনে নেত্রকোনা থেকে ঢাকা যাচ্ছিলেন তিনি।
সোবহান আলী বলেন, “রাইতে ঘুমাইয়া ছিলাম। আতকা বিকট শব্দ। বিরাট ঝাঁকি খাইলাম। এরপর কোনোরকমে জানালা দিয়া বগি থাইকা জীবন নিয়া বাইর হইলাম।”
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) ভোর সোয়া চারটার দিকে ঢাকা-ময়মনসিংহ রেলপথের বনখড়িয়া এলাকায় মোহনগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়।
কথা হয় ওই ট্রেনের আরেক যাত্রী হাবিবা খাতুনের সঙ্গে। দুই শিশুসহ ট্রেনের মাঝামাঝি একটি বগিতে তারা মোট চারজন ছিলেন। হঠাৎ বিকট শব্দে তাদের বগিটি পাশের নিচু জমিতে পড়ে যায়।
হাবিবা খাতুন বলেন, “শব্দের সঙ্গে সঙ্গে আমার সন্তানকে পাচ্ছিলাম না। বগি অন্ধকার হয়ে যায়। চিৎকার–চেঁচামেচি করছিলেন সবাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই স্বজনদের খুঁজে পেয়ে ওপরের দিকের জানালা দিয়ে বের হই। আমাদের অনেকেই শরীরে আঘাত পেয়েছেন।”
প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, দুর্বৃত্তরা নাশকতা করতে রেললাইনের অংশ কেটে রাখে। দুর্ঘটনায় ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার রওহা গ্রামের আসলাম হোসেন (৩৫) নামের এক যাত্রী নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন অন্তত ১০ জন।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা বলেন, “রেললাইনের ২০ ফুট অংশ কাটা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে অক্সি–অ্যাসিটিলিনের একটি সিলিন্ডার ও একটি এলপিজি সিলিন্ডার উদ্ধার করা হয়েছে। এ থেকে তাঁরা ধারণা করছেন, দুর্বৃত্তরা এগুলো দিয়ে রেললাইনের ২০ ফুট স্লিপার কেটে ফেলে। কাটা স্লিপারগুলো পাশেই রাখা ছিল।”
বাংলাদেশ রেলওয়ের সহকারী পরিবহন কর্মকর্তা-২ মো. মোশারেফ হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “দুর্ঘটনার পর জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ রেলপথে চলাচল বন্ধ আছে। ঢাকা থেকে ময়মনসিংহে চলাচলকারী ট্রেনগুলোকে আপাতত ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়কে চালানো হচ্ছে। ইতিমধ্যে ঢাকা থেকে ময়মনসিংহের উদ্দেশে রওনা করা তিস্তা এক্সপ্রেস ট্রেন এক ঘণ্টা দেরি করে বিকল্প পথে পাঠানো হয়েছে। অন্যদিকে ভোরে ময়মনসিংহ থেকে ঢাকাগামী যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন গাজীপুরের শ্রীপুরের কাওরাইদ রেলস্টেশন এলাকায় এসে থেমে থাকে। পরে কাওরাইদ স্টেশন থেকে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেন ঘুরিয়ে ময়মনসিংহ স্টেশনে নেওয়া হয়। সেখান থেকে ভৈরব-কিশোরগঞ্জ-ময়মনসিংহ সড়ক ধরে যমুনা এক্সপ্রেস ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে।”
রেলের এই কর্মকর্তা জানান, কর্তৃপক্ষের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে পরিচালিত তিনটি ট্রেন বলাকা কমিউটার, দেওয়ানগঞ্জ কমিউটার ও মহুয়া কমিউটার ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছে।
গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আবুল ফাতে মোহাম্মদ সফিকুল ইসলাম বলেন, “নাশকতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে রেললাইন কেটে রাখা হয়েছিল বলে প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত হওয়া গেছে।”
একই কথা জানালেন পুলিশ সুপার কাজী সফিকুল ইসলামও। তিনি জানান, ঘটনাস্থল থেকে এ–সংক্রান্ত বেশ কিছু আলামত ইতিমধ্যে জব্দ করা হয়েছে।”