• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি, ২০২৫, ৮ মাঘ ১৪৩০, ২৩ রজব ১৪৪৬

হাসপাতালে ভারতীয় দুই নাগরিকের লাশ, দুই বছরে ব্যয় ২৪ লাখ টাকা


শরীয়তপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: জানুয়ারি ২২, ২০২৫, ০৮:৫২ পিএম
হাসপাতালে ভারতীয় দুই নাগরিকের লাশ, দুই বছরে ব্যয় ২৪ লাখ টাকা

প্রায় দুই বছর ধরে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ফ্রিজে সংরক্ষিত আছে ভারতের দুই নাগরিকের লাশ। এতদিনে মরদেহ গুলো সংরক্ষণ করতে গিয়ে বিপাকে পড়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। মরদেহগুলো সংরক্ষণে খরচ দাঁড়িয়েছে প্রায় ২৪ লাখ টাকা। যা রাষ্ট্রের টাকার অপচয় বলছে সচেতন মহল।

জেলা প্রশাসন বলছে, লাশ দুটি হস্তান্তরের বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত সমস্যার সমাধানের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

জেলা কারাগার ও সদর হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে ২০২২ সালের ১৮ মে বাবুল সিং এবং ৮ অক্টোবর সত্যেন্দ্র কুমার নামে দুই ভারতীয় নাগরিককে পদ্মা সেতু প্রকল্প এলাকা থেকে আটক করে পদ্মা দক্ষিণ থানা পুলিশ। আদালতের নির্দেশে তাদের শরীয়তপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়।

২০২৩ সালের ১৮ জানুয়ারি কারাগারে সত্যেন্দ্র কুমারের মৃত্যু হয়। একই বছর ১৫ এপ্রিল বাবুল সিং অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এরপর থেকে তাদের লাশ হাসপাতালের ফ্রিজে সংরক্ষণ করা হচ্ছে।

হাসপাতালে হিমঘর না থাকায় হাসপাতাল ভবনের নিচতলায় একটি কক্ষে ফ্রিজে ভারতের দুই নাগরিকের লাশ রাখা হয়েছে। তবে ফ্রিজে ধারণক্ষমতা চারজনের বেশি না হওয়ায় সংযোগ দেওয়া যায়নি। এ কারণে লোডশেডিংয়ের কারণে লাশে পচন ধরার আশঙ্কা করছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

স্থানীয়রা বলেন, “আমাদের দেশের অর্থ ব্যয় করে দীর্ঘদিন ধরে অন্য দেশের নাগরিকদের লাশ সংরক্ষণ করা হচ্ছে। এতে আমাদেরও অসুবিধা হচ্ছে।”

এবিষয়ে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের ডোম নুরুল ইসলাম বলেন, “ডিউটি থাকলেও সময়-অসময়ে এসে দেখতে হয়। পঁচা লাশের সঙ্গে কেউ লাশ রাখতে চায় না। অন্য লাশ এলেও আমরা রাখতে পারি না। আমরা চাই দ্রুত এগুলো তাদের নিজ দেশে নিয়ে অথবা যেভাবে ভালো হয় এই লাশগুলো এখান থেকে নিয়ে যাওয়া হোক।”

শরীয়তপুর সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. হাবিবুর রহমান বলেন, “এ দুটি লাশের জন্য বিদ্যুৎ খরচ বেশি হয়। অন্যরা ফ্রিজ ব্যবহার করতে পারছেন না। এমনকি জরুরি অবস্থায়ও ফ্রিজ ব্যবহার করা যাচ্ছে না। লাশ দুটি রাখার জন্য রুমের ভাড়া বহন করতে হচ্ছে কারা কর্তৃপক্ষকে। তাদের বরাদ্দ না থাকলে ভাড়া বকেয়া থাকে।”

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই ফ্রিজ ব্যবহারে কারা কর্তৃপক্ষ এখন পর্যন্ত ৯ লাখ ৭০ হাজার টাকা পরিশোধ করলেও এখনো প্রায় ১৪ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

শরীয়তপুর কারাগারের জেলার আসমা আক্তার পাপিয়া বলেন, “লাশগুলোর জন্য প্রতিদিন পাহারার ব্যবস্থা করতে হচ্ছে, যা জনবল সংকটের মধ্যেও চালাতে হচ্ছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে সুরাহার দাবি করছি।”

শরীয়তপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, “লাশ দুটি হস্তান্তর একটি আন্তঃরাষ্ট্রীয় বিষয়। এটি দুই দেশের কূটনৈতিক যোগাযোগ ও সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের ওপর নির্ভরশীল। বিষয়টি দ্রুত সমাধানের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হচ্ছে।”

Link copied!