• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

নেতাকর্মীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি


ফেনী প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২৪, ০১:৪২ পিএম
নেতাকর্মীদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে বিএনপি
জেলার মানচিত্র

রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর ফেনীতে বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন বিএনপি ও অঙ্গ-সংগঠনের বেশ কিছু নেতাকর্মী। তাদের সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন দলটির স্থানীয় নেতারা। গত ৫ আগস্টের পর জেলার দাগনভূঞা, পরশুরাম, ছাগলনাইয়া ও ফেনী সদর উপজেলার একাধিক জায়গায় স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটেছে। জেলা যুবদলের এক নেতার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবুও থামছে না বিতর্কিত কর্মকাণ্ড। এ নিয়ে বিব্রত অবস্থায় পড়েছেন দলের জেলা ও উপজেলার নেতারা।

অভিযোগ রয়েছে, পটপরিবর্তনের পর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের একাধিক নেতা-কর্মী জেলার বিভিন্ন স্থানে ব্যবসায়ীসহ ভিন্নমতের লোকজনকে মারধর করে টাকা দাবি করছেন। স্থানীয় আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে ফেনী সদর উপজেলার ফাজিলপুরে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি মো. শাহজাহান সিরাজীর নেতৃত্বে ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের নেতাদের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুরের অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় উপজেলা বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

এদিকে সদর উপজেলার ছনুয়ায় ছাত্রদলের দুপক্ষের সংঘর্ষে উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব নজরুল ইসলাম ও সাংবাদিকসহ ১২ জন আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় ফেনী মডেল থানায় পাল্টাপাল্টি মামলা করা হয়। একইভাবে ফেনী সদর উপজেলার ফরহাদনগর, মোটবী, লেমুয়া, শর্শদী, কালীদহ, কাজীরবাগসহ বিভিন্ন ইউনিয়নে দলীয় অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

অপরদিকে দাগনভূঞা উপজেলার বিএনপির সভাপতি আকবর হোসেনের সঙ্গে যুবদল-ছাত্রদলের অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে মারামারি ও পাল্টাপাল্টি মামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে জেলা যুবদল থেকে ইসমাইল হোসেন সবুজ নামের এক নেতাকে দল থেকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। আরও ১০ নেতাকে শোকজ করা হয়েছে এবং যুবদলের পক্ষ থেকে সোনাগাজী ও ছাগলনাইয়ার দুইটি অভিযোগের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

পরশুরামের মির্জানগর ইউনিয়নের মধুগ্রামে ত্রাণ বিতরণকে কেন্দ্র করে বিএনপির দুপক্ষের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে পাঁচ নেতা-কর্মী আহত হয়েছেন। একইভাবে জেলার ছাগলনাইয়া উপজেলার শুভপুরে অভ্যন্তরীণ বিরোধকে কেন্দ্র করে দুপক্ষের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে।

এ বিষয়ে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সালাহ উদ্দিন মামুন বলেন, ছাত্রদলের নাম ভাঙিয়ে কেউ অপকর্ম করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সাংগঠনিক সম্পাদক হাসান মাহমুদ সবুজ বলেন, “কিছু দুষ্কৃতিকারী, কিছু নব্য বিএনপি দলের নাম ভাঙিয়ে দলের বদনাম ছড়ানোর অপচেষ্টা চালাচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনা অনুযায়ী কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে না পারে সেজন্য সকলকে সতর্ক থাকতে হবে।”

পটপরিবর্তনের পর জেলার একাধিক স্থানে সংঘর্ষ, আহত ও পাল্টাপাল্টি মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ফেনী জেলা যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন খোন্দকার বলেন, “যুবদলের কোনো নেতা-কর্মী দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা কঠোর অবস্থানে রয়েছি।”

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জেলা বিএনপির এক সদস্য জানান, শেখ হাসিনার পতনের পর পরিস্থিতি এমন অবস্থায় গেছে, দলীয় নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষসহ বিতর্কিত কর্মকাণ্ড সামলানো যাচ্ছে না। এ নিয়ে বিব্রত জেলার শীর্ষ নেতারা। বিএনপির নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করতে চাইলে, তাকে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান তিনি।

ফেনী জেলা বিএনপির সদস্য সচিব আলাল উদ্দিন আলাল বলেন, জেলার বিভিন্ন স্থানে দলের মধ্যে অনুপ্রবেশকারীরা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে সংঘর্ষে জড়াচ্ছেন। কেন্দ্রীয় নেতাদের নির্দেশনা অনুযায়ী যাদের মাধ্যমে বিশৃঙ্খলাকারীদের অনুপ্রবেশ ঘটেছে, তাদের বিরুদ্ধেও সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া ছাত্রদলসহ অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীদের মধ্যে অভ্যন্তরীণ বিরোধের জের ধরে সংঘর্ষের ঘটনাগুলোর বিষয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে কেন্দ্র থেকে তদন্ত করা হচ্ছে এবং তদন্ত সাপেক্ষে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

আলাল উদ্দিন আলাল আরও বলেন, “জেলা বিএনপির পক্ষ থেকে উপজেলা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে নেতাদের অভ্যন্তরীণ বিরোধ এড়াতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যারা ফৌজদারি দণ্ডের অপরাধে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা ব্যবস্থা নেবেন।”

Link copied!