বিএনপি মাটি ফেটে বেরিয়ে আসে বলে মন্তব্য করেছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শনিবার (৩ ডিসেম্বর) রাজশাহীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসার মাঠে বিএনপির বিভাগীয় গণসমাবেশে বক্তব্যকালে তিনি এ কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, “আওয়ামী লীগ আর কোনো রাজনীতি দল নয়। এটা একটা লুটেরা দলে পরিণত হয়েছে। নিজেরা লুট করে করে সম্পদের পাহাড় করেছে, সাধারণ মানুষকে গরীব করছে। কয়দিন আগে ২৫ জন কৃষককে ২৫ হাজার টাকা ঋণ নেওয়ার জন্য তাদের জেলখানায় নেওয়া হয়েছিল। আর হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করে ব্যাংক খালি করে দিচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা হয় না।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আওয়ামী লীগের শাসনামলে ৬০০ নেতাকর্মী গুম হয়ে গেছে। এর মধ্যে পাবনার ঈশ্বরদীতে জাকারিয়া পিন্টুসহ ৯ জনের মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ২৫ জনকে যাবজ্জীবন সাজা দিয়েছে। এটাই এই সরকারের চরিত্র। এভাবে তারা বিরোধীদলকে নির্মুল করে দিতে চায়। এতে কি নির্মুল হয়েছে? রাজশাহীর মানুষ ভয় পেয়েছে? পায়নি। আরও উত্তালে জেগে উঠেছে। এই লড়াইয়ে আমাদের জয়ী হতেই হবে।”
তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিধান চাই দাবি করে মির্জা ফখরুল বলেন, “নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন হতে হবে। অন্যথা এই দেশে কোনো নির্বাচন হবে না। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, কী যেন নাম তার? ওবায়দুল কাদের সাহেব। তিনি বলছেন, সংবিধান অনুযায়ী সির্বাচন হবে। কোন সংবিধান? যে সংবিধান তোমাদেরকে ক্ষমতায় রাখার জন্য বারবার কাটাছেড়া করেছ, সেই সংবিধান? তিনটা অনুচ্ছেদ রেখেছ, যার অধীনে একটা কথাও বলা যাবে না। সেই সংবিধান চলতে পারে না।”
“এত পেটাই, এত মামলা দেই, তারপরও বিএনপি উঠে আসে কোত্থেকে? বিএনপি মাটি ফেটে বেরিয়ে আসে। এটাই বিএনপি। এ জন্য ভয় পেয়েছে। ১০ তারিখেও ভয় পেয়েছে। আমরা বলেছি, পার্টি অফিসের সামনে সমাবেশটা করতে চাই। ওদের ঘুম নাই। ঘুম হারাম হয়ে গেছে। নিজের ওপর আস্থা নেই বলে ভয় পান। এই গেল, এই গেল ভাবতে থাকে। বিএনপি এলো, বিএনপি এলো ভাবতে থাকে।”
বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি, নির্বাচনকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার, জ্বালানি তেল, চাল-ডালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, পুলিশ ও সন্ত্রাসীদের গুলিতে দলীয় নেতাকর্মী হত্যা, হামলা এবং মিথ্যা মামলার প্রতিবাদে রাজশাহীতে এই বিভাগীয় গণসমাবেশ আয়োজন করে বিএনপি।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “ইসলামী ব্যাংক থেকে ৯টা গায়েবি কোম্পানিকে টাকা দিয়ে ব্যাংক খালি করে দেওয়া হয়েছে। সরকার পরিকল্পিতভাবে অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দিচ্ছে। আমাদের রাজনৈতিক কাঠামোকে ধ্বংস করে দিয়েছে। এই আওয়ামী লীগ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে ১৭৩ দিন হরতাল করেছে। ওই সময় গানপাউডার দিয়ে একটা বাসেই ১১ জনকে হত্যা করেছিল। এই তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পাঁটটা নির্বাচন হয়ে গেল। এরা ক্ষমতায় আসার পরে কী করল? ওই ব্যবস্থা পাল্টে দিল। কেন, তারা কিছুদিন পরে বুঝতে পারল জনগণ তাদের পছন্দ করছে না। তাই সেটা পাল্টে দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন ব্যবস্থা করেছে।”
রাজশাহী মহানগরীর ঐতিহাসিক মাদ্রাসা ময়দানে শনিবার বিএনপির বিভাগীয় রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম বলেন, “দেশের মানুষ মুক্তি চায়। তাদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে। এই সরকার পরিকল্পিতভাবে দেশের অথনীতিকে ধ্বংস করেছে। রাজনীতি কাঠামোকে হত্যা করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে এই সরকার আন্দোলন করেছে। কিন্তু তারা ক্ষমতায় এসে সেই পদ্ধতি বন্ধ করেছে। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া দেশে কোনো নির্বাচন হবে না।”
রাজশাহীর গণসমাবেশের উপস্থিত নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্য করে মির্জা ফকরুল বলেন, “গত তিন দিন ধরে পদ্মার ঠান্ডা বাতাস গায়ে হু হু করে লেগেছে। তারপরও আপনারা এখান থেকে এক বিন্দুও সরেননি। খেয়ে না খেয়ে। কিসের ভালোবাসায়, কিসের তাগিদে আপনারা তিন ধরে এখানে কাটালেন? একটি মাত্র কারণ, আপনারা মুক্তি চান। ভয়াবহ দানবের হাত থেকে আপনারা মুক্তি চান।”
বিএনপি মহাসচিব বলেন, “এত বাধার পরও কাউকে আটকে রাখতে পারেনি। জনগণের স্রোত দাবিয়ে রাখা যায়নি। এটা স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র ফিরে পাওয়ারের অধিকারের টান। সেই অধিকার আওয়ামী লীগ ধ্বংস করে দিয়েছে।”
এ সময় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, “আওয়ামী লীগ সরকার ভোট চোর সরকার, যাদের লজ্জা সরম নাই। আমাদের দরকার এমন একটি সরকার যার লজ্জা সরম থাকবে। হালাল উপার্জনকারী বাংলাদেশের কেউ ভালো নেই, সাধারণ মানুষ এখন পরিবর্তন চাই।”
রাজশাহী মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এরশাদ আলী ঈশার সভাপতিত্বে ও জেলা বিএনপি সদস্য সচিব বিশ্বনাথ সরকারের সঞ্চালনায় এসময় বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনু, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান তালুকদার, ক্যাপ্টেন শাজাহান মিয়া, রাজশাহী মহানগর বিএনপি সদস্য সচিব মামুনুর রশীদ, বেগম সেলিমা রহমান প্রমুখ।