ফিলিপাইনের কালো রঙের আখ চাষে আগ্রহ বাড়ছে শেরপুরের কৃষকদের। আখচাষিরা বলছেন, প্রতিটি কালো আখ থেকে অন্তত তিন লিটার রস পাওয়া যায়। এছাড়া ঔষধি গুণসম্পন্ন এই আখ স্বল্প খরচেই চাষ করা যায়। অন্যদিকে জেলা কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, ব্ল্যাক সুগার জাতের এই আখ এখনো গবেষণা পর্যায়ে রয়েছে। পরে ভ্যারাইটি যাচাই-বাছাই শেষে তা বাণিজ্যিকভাবে কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, জেলার শ্রীবর্দী উপজেলার ভায়াডাঙ্গা গ্রামের একটি বেসরকারি কলেজের শিক্ষক আব্দুর রহিম তার নিজের ৫০ শতাংশ জমিতে ১২ হাজার ফিলিপাইনের কালো জাতের আখের চারা রোপণ করেন। এ ছাড়া সদর উপজেলার চরমোচারিয়া ইউনিয়নের কেন্দুয়ারচর গ্রামের দুই বন্ধু প্রকৌশলী আব্দুল মান্নান ও সোহেল আহমেদ যৌথভাবে স্থানীয় ‘তালুকদার অ্যাগ্রো’ ফার্মের ভেতর ৩০ শতাংশ জমিতে সাড়ে ৪ হাজার পিস আখের চারা লাগান। আরও অনেকেই দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কালো জাতের আখের চারা সংগ্রহ করে ক্ষুদ্র পরিসরে বপন করেছেন। বাজারে দেশীয় যে আখ পাওয়া যায়, সেগুলো সাধারণত ১০ ফুট বা তার একটু বেশি হয়ে থাকে। কিন্তু ফিলিপাইন জাতের আখের উচ্চতা ১৫-২০ ফুট পর্যন্ত হয়।
এ আখের নানা গুণের পাশাপাশি চাষেও রয়েছে ভিন্নতা ও অধিক লাভের সুযোগ। প্রতিটি চারার গোড়া থেকে ১০-১০০টি পর্যন্ত নতুন চারা গজায়। সার-পানি খুব বেশি প্রয়োজন হয় না। ফলে স্বল্প খরচেই এ আখ চাষ করা যায়। একবার রোপণ করলে পরবর্তী তিন বছর আর চারা রোপণের প্রয়োজন পড়ে না। কেটে ফেলা আখের গোড়া থেকেই নতুন করে আখের চারা গজিয়ে ওঠে এবং তা থেকে পরবর্তী বছর আবারও ফলন পাওয়া যায়।
শ্রীবর্দীর আখচাষি নয়ন মিয়া জানান, রাজশাহী থেকে তিনি ফিলিপাইনের আখের চারা সংগ্রহ করেন। এরপর ক্ষেতের পরিপক্ব আখ থেকে চারা উৎপাদন শুরু করেন। এ আখে পোকামাকড় বা রোগ বালাই নাই বললেই চলে। শুধু সামান্য কিছু সার এবং শুষ্ক মৌসুমে কিছু সেচের প্রয়োজন হয়। আগাছা পরিষ্কার ও চাষ পদ্ধতির নিয়মনীতি মানলে এ আখ পরিপক্ব হতে ৮-১০ মাস সময় লাগে এবং এর উচ্চতাও অনেক বেশি হয়।
আরেক চাষি নজরুল ইসলাম জানান, বাজারে এ আখের ব্যাপক চারার চাহিদা রয়েছে। ইতোমধ্যে তিনি পাঁচ হাজার চারা বিক্রি করে লাখ টাকা আয় করেছেন। এ ছাড়া প্রতিটি পূর্ণাঙ্গ আখ ১০০ টাকা করে ২০ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন। অনলাইনে রোকেয়া-নবাব অ্যাগ্রো ফার্ম নামে একটি পেজ খুলে দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে চারার অর্ডার নিচ্ছেন। বর্তমানে ২৫ হাজার চারার অর্ডার রয়েছে।
তালুকদার অ্যাগ্রোর পরিচালক সোহেল আহমেদ বলেন, “আমরা দিনাজপুর থেকে চারা সংগ্রহ করে পরীক্ষামূলক চাষ করে বেশ সফল হয়েছি। দামও ভালো পেয়েছি। ফিলিপাইনের কালো আখের রস বেশ সুস্বাদু। তাই আগামীতে আরও বেশি জমিতে আবাদ করার চিন্তা করছি।”
পুষ্টিবিদ রেহেনা সুলতানা বলেন, আখের রসে রয়েছে অনেক ঔষধি গুণ। মুখে ব্রন ওঠা, বলি রেখা দূর করে আখের রস।
এ সম্পর্কে জেলা কৃষি বিভাগের উপপরিচালক ড. সুকল্প দাস বলেন, ফিলিপাইনের ব্ল্যাক সুগার জাতের আখ গবেষণা পর্যায় থাকলেও এর ফলনে কৃষকরা বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এটি ২০১৮ সাল থেকে নটিফাইট ক্রপ হিসেবে গবেষণা চলছে। দেশের বিভিন্ন জেলায় এর স্বল্প পরিসরে চাষাবাদও শুরু হয়েছে।
ড. সুকল্প দাস আরও বলেন, এর গবেষণা ডাটা হাতে আসলে এবং ভ্যারাইটি যাচাই-বাছাই শেষে বাণিজ্যিকভাবে যখন কৃষকদের মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া হবে, তখন কৃষকরা অধিক লাভের এ আখ চাষে আরও বেশি আগ্রহী হয়ে উঠবেন এবং লাভবান হবেন।