মাদারীপুরের কালকিনিতে মামলা না তোলার জেরে বাদী মরিয়ম বেগম (৪৫) এক বাদীকে হুমকি ও মারধরের অভিযোগ পাওয়া গেছে জামাই এবং তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রচর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় মরিয়ম বেগমকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (২ মে) দুপুরে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
জানা গেছে, মারধর ও হুমকির ঘটনায় মামলা করতে সাহস পাচ্ছে না ওই অসহায় পরিবার। এদিকে মারধরের পরে বাদীর পরিবারের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
ভুক্তভোগী জানান, ২০১০ সালে পারিবারিকভাবে মরিয়ম বেগমের মেয়ে তামান্না আক্তারের সঙ্গে একই উপজেলার সাহেবরামপুর ইউনিয়নের ক্ষুদ্রচর গ্রামের মজিবর হাওলাদারের ছেলে রফিক হাওলাদারের সঙ্গে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে তারা ঢাকায় বসবাস করে আসছিলেন। তাদের সংসারে লাবিবা নামের ১০ বছর বয়সী একটি মেয়ে রয়েছে। বিয়ের পর থেকে রফিক ও তার বাবা-মা তামান্নাকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করত। নির্যাতন সহ্য করতে না পেরে তামান্না তার বাবা-মাকে জানালে তারা কয়েক ধাপে প্রায় ১০ লাখ টাকা যৌতুক দেন। পুনরায় রফিক তার স্ত্রী তামান্নার বাবার বাড়ি থেকে টাকা আনার জন্য নির্যাতন শুরু করে। তামান্না এতে অস্বীকৃতি জানালে তাকে মারধর করে বাবার বাড়ি পাঠিয়ে দেন।
এরপর একদিন সন্ধ্যায় রফিক তার বাবা, মা ও বোনকে নিয়ে তামান্নার বাবার বাড়িতে যান। এ সময় রফিক তার বাবা-মা ও বোনকে নিয়ে তামান্নার সঙ্গে আলাদাভাবে কথা বলতে একটি রুমে ডেকে নেন। কথাবার্তায় এক পর্যায়ে তারা রুমের মধ্যে তামান্নাকে বেধম মারধর করেন। এ সময় তামান্নার চিৎকার শুনে বাড়ির ও আশপাশের লোকজন চলে আসলে রফিক তার বাব-মা ও বোনকে নিয়ে পালিয়ে যান। এ ঘটনায় তামান্নার মা মরিয়ম বেগম বাদী হয়ে ঢাকার আদালতে মামলা করেন।
এবার ঈদ উপলক্ষে মরিয়ম ও নাতনি লাবিবা তার বাবা রফিকের বাড়িতে দেখা করতে যান। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে তার বিরুদ্ধে করা মামলা তুলে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন ধরনের হুমকি দেন রফিক ও তার পরিবার। এ সময় তামান্নার মা মরিয়ম বেগমকে মারধর করেন তারা।
মরিয়ম বেগম বলেন, “আমার নাতি লাবিবার বয়স ১০ বছর। বর্তমানে সে চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে। রফিক আমার মেয়েকে যৌতুকের জন্য অনেকবার নির্যাতন করেছে। আমরা অনেকবার তাদের মীমাংসার জন্য ডেকেছি, তারা রাজি হয়নি। অবশেষে আমি মামলা করেছি। মামলা করার পর জানতে পারি রফিক আমার মেয়েকে বিয়ে করার আগে একটি বিয়ে করেছিল। তামান্নার বিয়ের সময় তারা বিষয়টি গোপন করেছিল। রফিক আমার মেয়ের জীবন তো নষ্ট করেছেই, এখন আমি আমার নাতির ন্যায্য অধিকার চাই। তারা আমার নাতনির কোনো প্রকার খোঁজখবর রাখে না। লাবিবাকে তার বাবার বাড়ি দেখাতে এসে জানতে পারি রফিক আরও একটি বিয়ে করেছে। তৃতীয় স্ত্রী নিয়ে রফিক বাড়িতে সংসার করছে। আমি লাবিবাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে যাওয়া মাত্রই রফিক আমার ওপর ক্ষিপ্ত হয়। এ সময় ‘লাবিবা তার বাবার বাড়ি এলে সমস্যা কোথায়’ এই কথা বলা মাত্র রফিক বলে আগে মামলা উঠান পরে বাড়ি আসবেন। আমি তখন লাবিবার একটা ব্যবস্থা করলে মামলা তুলে নেব জানালে রফিকের মা হেনা বেগম ও তার চাচাতো ভাইয়ের স্ত্রী হ্যাপী আমার চুলের মুঠি ধরে মাটিতে ফেলে দেয়। পরে রফিক ও তার বাবা আমাকে মারধর করে। পরে রফিকের ভাই কামাল আমাদের উদ্ধার করে বাড়ি থেকে বের করে দেন।”
অভিযুক্ত রফিক বলেন, “আমরা শুধু তাকে মামলা উঠানোর জন্য বলেছি। আমার মা ও ভাবি তাকে বুঝিয়েছেন।”
এ ব্যাপারে সাহেবরামপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহবুবর রহমান মুরাদ বলেন, “রফিকের একাধিক বিয়ের কথা শুনেছিলাম। ওর এক শ্বাশুরি তার নাতি নিয়ে আমার কাছে অনেকবার মীমাংসার জন্য এসেছিলেন। কয়েকবার তারিখ দেওয়ার পরও রফিক ও তার পরিবারের সদস্যরা সালিসে আসেনি।”
কালকিনি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শামিম হোসেন বলেন, এ ঘটনায় এখানো কেউ কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।