ফরিদপুরের ভাঙ্গা ও নগরকান্দার শত শত গ্রাহকের কয়েক কোটি টাকা নিয়ে পালানোর অভিযোগ মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক ঝাটুকদিয়া শাখার ম্যানেজার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে।
শনিবার (২৭ জানুয়ারি) সকাল ১০টার দিকে নগরকান্দা উপজেলার ঝাটুরদিয়া বাজার মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক শাখায় ভুক্তভোগী গ্রাহকরা বিক্ষোভ করেন। এ ঘটনায় ভাঙ্গা ও নগরকান্দায় কয়েকজন গ্রাহক মালিগ্রাম মিডল্যান্ড শাখায় অভিযোগ করেছেন।
অভিযুক্তরা হলেন ব্যাংকের ম্যানেজার অলোক মন্ডল, ফিল্ড অফিসার জাহাঙ্গীর শেখ ও ক্যাশিয়ার মিঠুন মাতুব্বর।
সরেজমিনে দেখা যায়, মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক ঝাটুকদিয়া শাখার সামনে মিডল্যান্ড মালিগ্রাম কর্তৃপক্ষ সাইনবোর্ড লাগিয়ে লেনদেন বন্ধ ঘোষণা করেছেন। এরপর বেশ কিছু গ্রাহক ব্যাংকের সামনে এসে বিক্ষোভ করেন।
গ্রাহকদের অভিযোগ, গত ২৬ ডিসেম্বর ব্যাংকে তালা লাগানো দেখতে পান তারা। পরে একজন গ্রাহক ম্যানেজারকে ফোন করলে এক সপ্তাহ পরে ব্যাংক খোলা হবে বলে জানান। এক সপ্তাহ গ্রাহকরা জানতে পারেন মিডল্যান্ড ব্যাংকের ঝাটুরদিয়া শাখার ম্যানেজার অলোক মন্ডল ও তার সহযোগীরা পালিয়েছেন। বিষয়টি জানাজানি হলে স্থানীয় সব গ্রাহকরা ব্যাংকের সামনে জড়ো হন। এ ঘটনায় ৮/১০ জন গ্রাহক মালিগ্রাম মিডল্যান্ড শাখায় ও নগরকান্দা থানায় অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী গ্রাহক দশ খারদিয়া গ্রামের সিরাজুল ইসলাম বলেন, “আমি মিডল্যান্ড ব্যাংকে ১২ লাখ টাকা জমা রেখেছি। এখন শুনতে পাই ব্যাংকের লোকজন টাকা মাইরা পালাইয়া গেছে। আমরা সবাই গ্রাহক মিলে ফরিদপুর কোর্টে মামলা করব। সরকারের কাছে গ্রাহকদের দাবি আমাদের টাকা যেন ফেরত পাই, তার ব্যবস্থা যেন করে দেন।”
গ্রাহক আলেয়া বেগমের স্বামী আজিজুল হক বলেন, “আমার স্ত্রীর মিডল্যান্ড ব্যাংকে ২ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জমা রেখেছে। এখন ব্যাংকের সব লোকজন পলাতক। তাদের মোবাইল ফোন বন্ধ। টাকা খোয়া গেলে আমরা পথে বসে যাব।”
ভাঙ্গা উপজেলার চান্দা গ্রামের সুশীল গয়লা বলেন, “আমি তিন বছর জন্য ৪৫ লাখ টাকা এফডিআর করে রেখেছি। ব্যাংকের ম্যানেজার আমার আত্মীয় একই গ্রামের বাড়ি। তাছাড়া ব্যাংকে টাকা রাখব ভয় কিসের। এখন জানতে পারছি অলোক মন্ডল ব্যাংকের সব টাকা আত্মসাত করে পরিবার নিয়ে ভারতে চলে গেছে। আমি এখন পাগল হয়ে গেছি।”
ভাঙ্গা উপজেলার ঝাটুকদা গ্রামের মনিরা বেগম বলেন, “আমার দশ বছরের কষ্টের ১ লাখ ২০ হাজার টাকা জমা রেখেছিলাম। এখন শুনি ব্যাংকের লোকজন টাকা মাইরা পালাইয়া গেছে। আমি পথের ফকির হয়ে গেছি।”
এ বিষয়ে ভাঙ্গা উপজেলার মালিগ্রাম মিডল্যান্ড ব্যাংক শাখার ম্যানেজার মো. আসিফ ইকবাল বলেন, “বেশ কয়েকজন গ্রাহক আমার কাছে এসেছিলেন। তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত শুনেছি, তাদের কাগজপত্র দেখেছি। তাদের অ্যাকাউন্টে কোন টাকা পয়সা জমা নেই। বিষয়টি নিয়ে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তবে তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।”
নগরকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আমিনুর রহমান বলেন, “মিডল্যান্ড এজেন্ট ব্যাংক ঝাটুকদিয়া শাখার গ্রাহকের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনার সংবাদ পেয়েছি। এ ঘটনায় ২/৩ জন ভুক্তভোগীর একটি অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”