উপকূলীয় জেলা বরগুনা বেতাগী উপজেলার গাবতলী এলাকার আব্দুল হক (৫০)। খুব কম বয়সে হাতে তুলে নিয়েছিলেন বাঁশের বাঁশি। সেই বাঁশির সুর আবদুল হককে দিয়েছে অনেক কিছু। তার বাঁশির সুরের প্রেমেই একদিন আবদুল হকের সঙ্গী হয়েছিলেন তার স্ত্রী কোহিনুর বেগম।
জানা যায়, বরগুনা ও আশপাশের জেলাগুলোতে বিভিন্ন বাজার, রাস্তাঘাটে বাঁশি বাজিয়ে ও বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করেন আব্দুল হক। সংসারজীবনে এক ছেলে ও এক মেয়ের বাবা তিনি। ছেলে-মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন। এখন স্ত্রী কহিনুর বেগমকে নিয়েই সংসার চলে।
স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তার শ্রোতা। শ্রোতাদের মাঝে সুর শোনাতে বিভিন্ন স্থানে ছুটে যান তিনি। বিনিময়ে শিক্ষার্থীরা খুশি করেন তাকে। এতে যা পান তা দিয়েই চলে তার সংসার। এ ছাড়া ৫০-১০০ টাকা এবং ৫০০ টাকা দামের বাঁশিও বিক্রি করেন আব্দুল হক। তিনি নিজেও বাঁশি বানান, আবার কিছু সংগ্রহ করেন রাজধানীর চকবাজার আর কুমিল্লা থেকে।
সম্প্রতি বরগুনা সদর উপজেলার গৌরীচন্না বাজারে বংশীবাদক আব্দুল হকের সঙ্গে কথা হয় সংবাদ প্রকাশের। আব্দুল হক বলেন, “প্রায় ৩০ বছর আগের কথা। তখন ঢাকায় থাকতাম। একটি প্রতিষ্ঠানে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি করতাম। তবে বাড়ির টান, সংসার, জন্মভিটের মায়া আমাকে ঢাকায় থাকতে দেয়নি। একসময় ফিরে গেলাম গ্রামে। সেখানে বংশীবাদক হিসেবে কেটে যায় ১০ বছরেরও বেশি সময়। কিন্তু ক্রমেই গ্রামে আয় কমতে থাকে। ফলে চার-পাঁচ বছর আগে আবারও ঢাকায় ফিরে আসতে হলো।
বংশীবাদক আব্দুল হক বলেন, “আমি ঢাকায় চাকরি করতাম। ছুটির দিনে একটি পার্কে বসে বাঁশি বাজাচ্ছিলাম। তখন অনেকেই হাতে থাকা বাঁশিটা কিনতে চাইলেন। এরপর চকবাজার থেকে কিছু বাঁশি কিনলাম। তারপর গামছা বিছিয়ে সেই পার্কে বাঁশি বিক্রি শুরু করলাম। দেখলাম ভালো লাভও হয়। মাসিক আয়ের হিসাবে যা চাকরির থেকেও বেশি। এরপর চাকরি ছেড়ে এই মেঠো পথে আসলাম।”
কীভাবে বাঁশি বাজানো শিখলেন জানতে চাইলে বংশীবাদক বলেন, “আমার যখন ১৫ বছর বয়স, তখন স্থানীয় তালতলী বাজারে সেকেন্দার নামের এক ব্যক্তি রাস্তায় বাঁশি বাজাতেন। সেই সেকেন্দার যখন বাঁশি বাজাতেন তখন তার পেছন-পেছন আমি ঘুরতাম। একসময় তাকে আমার ওস্তাদ মানলাম। একদিন সেকেন্দার আমাকে একটি বাঁশি দিয়ে বলেছিলেন, তুমিও বাঁশি বাজাও। একসময় বাজাতে বাজাতে তুমিও পারবে। সেই থেকেই বাঁশিকে আপন করে নেওয়া।”
বাঁশির সুর সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে চান আব্দুল হক। তিনি জানান, শত অপ্রাপ্তি-অভাবের মধ্যেও আব্দুল হকের হাসি ও কান্নার সাক্ষী এই বাঁশি। বাঁশির সুর মানুষের মন জয় করতে পারে। বাঁশির সুর এখন বিলুপ্তির পথে। যুবসমাজের মাঝে বাঁশির সুর ছড়িয়ে দিতে পারলে সমাজ থেকে অনেক অপকর্ম দূর হবে।