তালপাতার পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর কারিগররা। শীতের শেষে দেশব্যাপী গরমের তীব্রতা বাড়তে শুরু করেছে। আর এই গরমে একটু স্বস্তি পেতে মানুষের কাছে তালপাতার পাখার বেশ কদর রয়েছে। তাই পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার ভালাইন গ্রামের দুই শতাধিক নারী-পুরুষ।
জানা যায়, জেলা সদর থেকে প্রায় ৩২ কিলোমিটার পশ্চিম উত্তরগ্রাম ইউনিয়নের ভালাইন গ্রামে প্রায় ৭০টি পরিবারের বাস। তারা বংশানুক্রমে ৩৫ বছর ধরে পাখা তৈরির কাজ করছেন। স্থানীয়দের কাছে গ্রামটি ‘পাখা গ্রাম’ নামে পরিচিত।
পাখা তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গ্রীষ্মকালে এ অঞ্চলে প্রচণ্ড ভ্যাপসা গরম পড়ে। এ সময় তালপাতা দিয়ে তৈরি হাতপাখার চাহিদা বেড়ে যায়। এছাড়া প্রতি বছর এই অঞ্চল থেকে ঢাকাসহ সারা দেশে কয়েক লাখ পাখা সরবরাহ করা হয়।
কারিগররা জানান, পাখা তৈরির উপকরণ তালপাতা সংগ্রহ ও বিক্রির কাজ মূলত পুরুষরাই করে থাকেন। তালপাতা রোদে শুকিয়ে পানিতে ভেজানোর পর পরিষ্কার করে পাখা তৈরি করা হয়। এরপর রং মিশ্রিত বাঁশের কাঠি, সুঁই-সুতা দিয়ে পাখা বাঁধার কাজ করেন গৃহবধূরা। অনেক নারী গৃহস্থলি কাজের পাশাপাশি পাখা তৈরি করে সংসারের অভাব ঘুচিয়েছেন। তবে পাখা তৈরিতে যে পরিশ্রম ও খরচ হয়, সে তুলনায় দাম পান না বলে দাবি তাদের।
ভালাইন গ্রামের সুফিয়া বেগম বলেন, “পুরুষরা শুধু তালপাতা নিয়ে এসে শুকানোর পর পরিষ্কার করে দেয়। এরপর সাংসারিক কাজের পাশাপাশি গৃহবধূরা পাখাকে সুঁই-সুতা দিয়ে সেলাই ও সৌন্দর্য বর্ধণের কাজ করেন। একজন নারী প্রতিদিন ১০০ থেকে ১২০টা পাখা তৈরি করতে পারেন।
৩২ বছর ধরে নওগাঁর বিভিন্ন হাটে ঘুরে ঘুরে পাখা বিক্রি করেন আব্দুর করিম। সংবাদ প্রকাশকে তিনি জানান, এটি তার পৈত্রিক ব্যবসা। প্রতিটি তালপাতার দাম পড়ে পাঁচ টাকা, বাঁশের কাঠি ও সুতা খরচ হয় দেড় টাকা। প্রতিটি পাখা তৈরিতে খরচ হয় সাড়ে ছয় টাকা। প্রতি পিস পাখা ১২ থেকে ১৩ টাকা দরে পাইকারি বিক্রি করা হয়। ব্যবসায়ীরা ৩০ থেকে ৩২ টাকা করে প্রতিটি পাখা বিক্রি করেন।
কবিজান নামের এক কারিগর বলেন, গ্রামের দুই শতাধিক মানুষ পাখা তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করেন। বিভিন্ন এনজিও ও দাদন চক্রের কাছ থেকে উচ্চ সুদে ঋণ নিয়ে তাদের পাখা তৈরি করতে হয়। তাদের সুদ দিতেই লাভের একটি অংশ চলে যায়। সরকার যদি স্বল্প সুদে ঋণের ব্যবস্থা করে দিত, তাহলে কিছুটা লাভ হতো।