গতবারের তুলনায় এবার ক্ষেতে ফলন ভালো হয়েছে। আশা ছিল ভালো দামে বিক্রি করে গতবারের ক্ষতিটা পুষিয়ে নেওয়া যাবে। তবে এবার আশানুরূপ বিক্রি হচ্ছে না। দামও বলছেন না পাইকাররা। এতে মাথা ভার হয়ে আছে টাঙ্গাইলের কৃষকদের। কীভাবে এনজিও ও গ্রাম্য মহাজনদের কাছ থেকে নেওয়া ঋণ পরিশোধ করবেন। তাই কপালে পড়েছে চিন্তার ভাঁজ।
জানা গেছে, এ বছর জেলায় সবজির আবাদ হয়েছে ১ হাজার ৬৫০ হেক্টর জমিতে। সবচেয়ে বেশি সবজির চাষ হয়েছে সাগরদীঘি ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নে। মাটি ও আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় ফলন হয়েছে বেশ। তবে এই ভালো ফলই এখন কৃষকদের চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, সাগরদীঘি ও লক্ষ্মীন্দর ইউনিয়নে ১ হাজারেরও বেশি মানুষ কৃষি কাজে জড়িত। তাদের মধ্যে অধিকাংশ কৃষকের নিজস্ব জমি নেই। লিজ নিয়ে অন্যের জমিতে চাষাবাদ করেন। তবে এবার ফলন ভালো হলেও বিক্রি হচ্ছে না। লাভ তো দূরে থাক সবজি চাষে খরচের অর্ধেক টাকাও এবার উঠছে না তাদের।
কৃষক নাসির উদ্দিন সিকদার বলেন, “একজন শ্রমিক সারা দিন কাজ করে ক্ষেত থেকে সর্বোচ্চ দুই মণ সবজি তুলতে পারেন। মজুরি হিসেবে দিতে হয় চারশ টাকা। আর দুই মণ সিম বা বেগুন বাজারে ভ্যানে করে নিয়ে বিক্রি করে কৃষক পান তিনশ টাকা। তাহলে এই টাকা দিয়ে কী হয়। শ্রমিকের মজুরিই তো ওঠে না।”
মনতলা গ্রামের কৃষক হেলাল উদ্দিন বলেন, “জমি লিজ নিয়ে সাড়ে তিন বিঘা জমিতে সিমের আবাদ করেছিলাম। খরচ সাত লাখ টাকা। বিক্রি হয়েছে মাত্র ৬০ হাজার টাকা। কিছু টাকা নিজের ছিল আর বাকি টাকা এনজিও এবং মানুষের থেকে সুদে ঋণ করে আনা। কৃষি অফিস থেকে সবজি চাষে উৎসাহ দিলেও আর কোনো খোঁজ নেয় না। বর্তমান অন্যের কাছ থেকে ঋণ করে এনজিওর কিস্তি চালাতে হচ্ছে।”
একই গ্রামের কৃষক ফয়েজ উদ্দিন বলেন, “আমি ২৭ বিঘা জমিতে সিম এবং সাড়ে ৮ বিঘায় বেগুন আবাদ করেছি। জমি লিজের টাকা এবং চাষের খরচ যোগাতে ব্যাংক ঋণ, মাসিক চড়া সুদে মানুষের থেকে টাকা এনেছি। চার লাখ টাকা বাকি রয়েছে সার ও কীটনাশকের দোকানে। তবে দোকানদারের চাপে সুদে টাকা এনে দুই লাখ শোধ করেছি। এখন ভাগ্যে কী আছে, আর কীভাবে কী করব আল্লাহই জানে।”
কৃষক আনিছ মিয়া বলেন, “শত শত মণ সীম ক্ষেতে নষ্ট হচ্ছে। যেখানে ৩ লাখ টাকার মতো সীম বিক্রি করার কথা সেখানে বিক্রি করি মাত্র পাঁচ হাজার টাকা। এটাকে ক্ষতি বলে না, এটাকে বলে ধ্বংস।”
সাগরদীঘি বাজারের সার ও কীটনাশকের ডিলার আজহারুল ইসলাম জানান, ১৫০ জন সবজি চাষির কাছে সার ও কীটনাশক বাকিতে বিক্রি করেছি। টাকার পরিমাণ ছিল ২৮ লাখ। কিছু টাকা পেলেও এখনো বাকি অনেক। কেউ টাকা দিতে স্বীকার হয় না। কৃষকের হাতে টাকা নাই।”
এসব বিষয়ে উপজলা কৃষি কর্মকর্তা দিলশাদ জাহান বলেন, “গত বছরের চেয়ে এবার সবজির দাম তুলনামূলকভাবে একটু কম। সব সবজি চাষিরা এবার ক্ষতিগ্রস্ত। উৎপাদনের দায়িত্ব আমাদের, পলিসি ম্যানেজমেট তো আমাদের না।”
কৃষকদের অভিযোগ কৃষি প্রণোদনা থেকে শুরু করে কোনো প্রকার সাহায্য সহযোগিতা তারা পান না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, “কৃষকের ধরণ দেখতে হবে। ইতোপূর্বে প্রণোদনা পেয়েছে কিনা তা দেখতে হবে। আর ঘুরেফিরে কাউকে না কাউকে প্রণোদনা দেওয়া হয়। তবে এটা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তারা ভালো বলতে পারবেন।”