• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর, ২০২৪, ২৯ কার্তিক ১৪৩১,

ডোবায় পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশ যে কারণে পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন আলিফজান, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ


সিলেট প্রতিনিধি
প্রকাশিত: নভেম্বর ১১, ২০২৪, ১২:৩১ পিএম
ডোবায় পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশ যে কারণে পুকুরে ফেলতে চেয়েছিলেন আলিফজান, চাঞ্চল্যকর তথ্য দিল পুলিশ
মুনতাহা

ঠোঁটে লাল লিপস্টিকের মিষ্টি হাসির মুখটি এখন কেবলই ছবি। ছোট্ট মুনতাহার মৃত্যু নাড়া দিয়েছে দেশবাসীকে। সিলেটের কানাইঘাট থেকে নিখোঁজ হওয়া শিশু মুনতাহা আক্তারের (৫) লাশ উদ্ধারের পর চাঞ্চল্যকর তথ্য দিয়েছে পুলিশ। পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেন, শিশুটির লাশ মূলত ডোবায় কাদার মধ্যে পুঁতে রাখা ছিল। সন্দেহভাজন এক তরুণী আটক হওয়ার পর তার মা ঘটনাকে অন্য রূপ দিতে লাশ ডোবা থেকে তুলে রোববার (১০ নভেম্বর) ভোরে শিশুটির বাড়ির পাশে একটি পুকুরে ফেলে আসতে যান। পথে স্থানীয় লোকজনের হাতে আটক হন ওই নারী।

আটক হওয়া ওই নারীর নাম আলিফজান (৫৫)। তিনি কানাইঘাট সদর উপজেলার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের বাসিন্দা। আর শিশু মুনতাহা একই গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে। শিশুটি ৩ নভেম্বর নিখোঁজ হয়। রোববার ভোর চারটার দিকে তার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, লাশ উদ্ধারের সময় শিশু মুনতাহার শরীরে কাদা লেগে ছিল। গলায় রশিজাতীয় কিছু প্যাঁচানো ছিল। এতে সন্দেহ করা হচ্ছে, গলায় রশিজাতীয় কিছু দিয়ে পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাকে হত্যা করা হয়েছে।

স্থানীয় লোকজন ও পুলিশের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ৩ নভেম্বর বিকেল থেকে নিখোঁজ ছিল মুনতাহা। বিভিন্নভাবে খোঁজ করেও পাওয়া যাচ্ছিল না তাকে। সর্বশেষ শিশুটিকে উদ্ধারের জন্য পুরস্কারও ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে পুলিশ শনিবার রাতে প্রতিবেশী শামীমা বেগম ওরফে মর্জিনা (২৫) নামের এক তরুণীকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মুনতাহাকে প্রাইভেটও পড়াতেন শামীমা। শামীমের বাড়িতে তার মা আলিফজান ও বৃদ্ধ নানি থাকেন।

সিলেটের সহকারী পুলিশ সুপার (কানাইঘাট সার্কেল) অলক কান্তি শর্মা বলেন, মুনতাহা নিখোঁজের ঘটনায় শনিবার রাতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য প্রতিবেশী শামীমাকে থানায় নিয়ে যায় পুলিশ। মেয়েকে আটকের পর শামীমার মা মনে করেছিলেন, পুলিশ সবকিছু জেনে গেছে। এ জন্য রাতেই ডোবায় পুঁতে রাখা মুনতাহার লাশ তুলে পুকুরে ফেলার চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু প্রতিবেশীরা বিষয়টি বুঝতে পেরে পুকুরে লাশ ফেলে দেওয়ার আগেই তাকে আটক করে। এ সময় শিশুটিকে নিজের কোল থেকে মাটিতে ফেলে দিয়েছিলেন আলিফজান। পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ও আলিফজানকে আটক করে।

আটক তিন জন

পুলিশ কর্মকর্তা অলক কান্তি শর্মা বলেন, এ ঘটনায় আটক আলিফজান ও শামীমাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে তারা বলেছেন, মুনতাহার বাবার সঙ্গে তাদের বিরোধ আছে। তবে কী নিয়ে বিরোধ, তা জানা যায়নি। নিহত শিশু মুনতাহার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

৩ নভেম্বর সকালে বাবার সঙ্গে স্থানীয় একটি ওয়াজ মাহফিল থেকে বাড়ি ফিরে প্রতিবেশী শিশুদের সঙ্গে খেলা করতে গিয়েছিল মুনতাহা। কিন্তু বিকেল হলেও বাড়ি না ফেরায় খোঁজ নিতে গিয়ে মুনতাহার আর সন্ধান পাওয়া যায়নি। শিশুটি নিখোঁজের পর থেকে পরিবার দাবি করে আসছিল, পরিকল্পিতভাবে মুনতাহাকে অপহরণ করা হয়েছে। নিখোঁজের ঘটনায় কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরিও (জিডি) করেছিল তারা। শিশুটিকে খুঁজে পেতে পুরস্কারও ঘোষণা করেছিল পরিবার। তবে সবকিছুর শেষে রোববার ভোরে শিশুটির লাশ পাওয়া গেল।

এ ঘটনায় তিনজনকে আটক করেছে পুলিশ। তারা হলেন মুনতাহার গৃহশিক্ষক শামীমা বেগম ওরফে মর্জিনা, মর্জিনার মা আলিফজান এবং মর্জিনার নানি।

Link copied!