• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর স্ট্যাটাস, ‘পরকীয়ার মজা এইবার বুঝলা’


ঝালকাঠি প্রতিনিধি
প্রকাশিত: মে ১৫, ২০২৩, ০৬:৪৫ পিএম
স্ত্রীকে হত্যার পর স্বামীর স্ট্যাটাস, ‘পরকীয়ার মজা এইবার বুঝলা’

পরকীয়ার জেরে স্ত্রীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার পর ফেসবুকে একাধিক স্ট্যাটাস দিয়ে থানায় আত্মসমর্পণ করেছেন আলী ইমাম খান অনু (৩০) নামের এক যুবক।  

সোমবার (১৫ মে) সকাল ১০টার দিকে ঝালকাঠি শহরতলীতে প্রস্তাবিত ইকোপার্কে এ হত্যার ঘটনা ঘটে।

অনু শহরের ইছানীল (৭ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকার দিদার হোসেন খানের ছেলে এবং জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি।

নিহত সায়মা পারভিন (২০) সদর উপজেলার নৈকাঠি এলাকার শাহাদাত তালুকদারের মেয়ে।

অনুর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়,  সাড়ে ৪ বছর প্রেমের সম্পর্কের পর ২০২১ সালে পোনাবালিয়া ইউনিয়ন কাজীর মাধ্যমে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন তারা। বিয়ের ৩ মাস পর থেকে স্ত্রী সায়মা পরকীয়ায় জড়িয়ে পড়েন। এ বিষয়ে অনু একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও সায়মা না শোনার কারণে ইকোপার্কে সায়মাকে ডেকে নেন। ঘটনাস্থলে অনু সকাল সাড়ে ৯টায় এবং সায়মা সকাল পৌনে ১০টায় উপস্থিত হন। এরপর তাদের মধ্যে কথা কাটাকাটি শুরু হয়। একপর্যায়ে সায়মাকে সংশোধন করতে না পেরে বুকে ও পেটে ছুরি দিয়ে আঘাত করেন অনু। এতে ঘটনাস্থলেই মারা যান সায়মা।

অনু বলেন, “যদি তাকে সংশোধন করতে পারতাম তাহলে আর হত্যা করতাম না। এরপরে পুলিশ পাঠানোর জন্য একাধিক জনকে ফোন দিয়ে ঘটনাস্থলে অপেক্ষা করলেও পুলিশ আসতে দেরি করায় ফেসবুকে হত্যার দায় স্বীকার করে কয়েকটি স্ট্যাটাস দেই। পরে নিজেই থানায় গিয়ে আত্মসমর্পণ করি।”

হত্যাকাণ্ডের আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ফেসবুকে আবেগাপ্লুত একটি স্ট্যাটাস দিয়ে হত্যার পরে তা আবার সম্পাদন করেন অনু।

যা হুবহু তুলে ধরা হলো- 
সুদীর্ঘ সাড়ে চার বছরের ভালোবাসা ছিল আমাদের.....
আলহামদুলিল্লাহ মুসলিম শরীয়াহ অনুযায়ী আমরা দুজন বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলাম, ভেবেছিলাম সারাজীবন হয়তো একসঙ্গে থাকবো........কিন্তু বড়ই আফসোস ও পরিতাপের বিষয় হলো আমাদের সম্পর্কের মাঝে তৃতীয় ব্যক্তির আবির্ভাব হয়। অতঃপর আমার বউ ধীরে ধীরে আমার সঙ্গে দূরত্ব বজায় রেখে আমাকে কেমন জানি এড়িয়ে যেতে থাকে। একদম হুট করেই কোনো প্রকার কোনো অপরাধ ছাড়াই আমাকে ছেড়ে চলে যায়....

আমার বউটা তার মামাতো ভাইয়ের সঙ্গে সারারাত চ্যাটিং করতো তার নাম Asif Iqbal সে আমার বউয়ের সঙ্গে যত প্রকার Sexual আলাপ আলোচনা বলেন সব কিছু সবার অগোচরে চালিয়ে গেছে......

বাংলায় একটা প্রবাদ আছে জানেন তো?
চোরের দশদিন আর গেরস্তের একদিন!
আমাদের বেলায়ও ঠিক ঘটেছে তাই আমার বউ আমার চোখ ফাঁকি দিতে পারেনি.....

সন্দেহের বশবর্তী হয়ে হঠাৎ ১৩/০৫/২০২৩ তারিখে সন্ধ্যার অনেক পরে বাসায় আসতে দেখি। সামনে দাঁড়িয়ে তার পথ আটকিয়ে তার হাত থেকে ফোন নিয়ে যাই, তারপর সে আমাকে চোরের মতো বার বার অনেক কছম করে অনেক অনুনয় বিনয় করে আমার কাছে ফোন ফেরত চায়, আর বলে যে সে নাকি মেসেজ ডিলেট করবে না! ব্যাপারটা আমি মোটেও বিশ্বাস করলাম না তাকে বাসায় যেতে বলে আমিও বাসায় চলে এলাম বিশ্বাস করেন ভাইয়েরা আমার, সারারাত একফোঁটাও ঘুমাতে পারিনি আমার বউয়ের পরকীয়া প্রেমিকের অশালীন মেসেজ দেখে আর বউয়ের সুড়সুড়ি জাগানিয়া রিপ্লাই দেখে....
আমার বউ সব সময় আমার সামনে হুজুর সেজে থাকতো এমন আচরণ করতো মনে হয় যেন সে ভাজা মাছটাও উল্টে খেতে পারে না... কিন্তু আজ হঠাৎই আবিষ্কার করলাম আমার বউয়ের আসল ফুটফুটে চরিত্র....

আমি তাকে জিজ্ঞাসা করেছি তুমি তোমার বুকে ওড়না ছাড়া তোমার মামাতো ভাইকে ছবি দিয়েছ কেন?

জবাবে সে বলে, খোদার কছম আমি এমনিই দিয়েছি! তারপর আমি যখন তাদের ফ্রিলি কথাবার্তা বলার টপিক সম্পর্কে একটার পর প্রশ্ন করতে থাকি তখন সে তার কোনো উত্তর দিতে পারে না, বলে আমার সঙ্গে নাকি তার সম্পর্ক অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে! এরপর হঠাৎ করেই দেখি সে তার আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে ফেলেছে! তারপর আমিও আবার রিকভারি দিয়ে আইডিতে ঢুকি ততক্ষণে সে অনেক ছেলেদের সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ অনেক চ্যাটিং ডিলেট করে ফেলেছে আমি যেন তার কিছুই না দেখতে পারি সেজন্য। কিন্তু সে অন্য সবার মেসেজ ডিলেট করতে গিয়ে সে তার নতুন প্রাণ ভ্রমরার মেসেজ ডিলেট করতে পারেনি তার আগেই আমি আইডি রিকভারি করতে সক্ষম হয়েছি এবং স্ক্রিনশট রাখতে সক্ষম হয়েছি।

কিছুক্ষণ পর সে তার মায়ের নাম্বার থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে বলে নারী নির্যাতন আইনে আইসিটি আইনে সে নাকি আমার জীবন ধ্বংস করে দিবে.... আ আ আ ওমা একি বলে চুতমারানি?   এতো দেখছি নির্ঘাত চোরের মায়ের বড় গলা!

তারপর অনেক ভেবেচিন্তে আমিও সিদ্ধান্ত নিলাম বিশ্বাসঘাতক বেঈমানের এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকার কোনো অধিকার নেই এজন্য নিজের হাতে বউটাকে পরম করুণাময়ের কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দিলাম....
পরপারে ভালো থেকো বউ পরকীয়ার মজা এইবার অন্তত বুঝলা......"

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাসির উদ্দিন জানান, মরদেহটি উদ্ধার করে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করা হয়েছে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের প্রক্রিয়া চলছে।

Link copied!