• ঢাকা
  • সোমবার, ২৫ নভেম্বর, ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

২৪ বছর পর জানলেন তিনি শিক্ষক নন


সংবাদ প্রকাশ প্রতিবেদক
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ৩০, ২০২৪, ১২:১৮ পিএম
২৪ বছর পর জানলেন তিনি শিক্ষক নন

দীর্ঘ ২৪ বছর চাকরি করার পর রীনা বেগম জানতে পারলেন তিনি জানতে পারলেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক নন। ২০০০ সালের রংপুরের পীরগাছার নটাবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞানের শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে স্কুলটির প্রধান শিক্ষকের বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি জানতে পারেন তিনি নাকি ওই স্কুলের শিক্ষকই নন। এ ঘটনায় মানসিকভাবে ভেঙে পড়েছেন ওই শিক্ষক। তার বেতনভাতা করে দেওয়ার নামে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির তার কাছে হতে এক লাখ টাকা নিয়েছিলেন বলে দাবি করেন তিনি।

রোববার (২৯ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবিরের দুর্নীতি- অনিয়মের বিরুদ্ধে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব অভিযোগ করেন তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে প্রধান শিক্ষকের অপসারণ ও শাস্তির দাবি জানিয়ে প্রথমে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মশিয়ার রহমান।

পরে ভূক্তভোগী রীনা বেগমসহ সহকারী শিক্ষক মাহবুবুর রহমান, আনারুল হক মন্ডল, শিক্ষার্থী মাহি আক্তার, সাথি আক্তার, এনামুল ইসলাম, সাবেক নৈশ্য প্রহরী নুরুল ইসলাম বক্তব্যের মাধ্যমে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকের অনিয়ম-দুর্নীতির কথা তুলে ধরেন।

এ সময় প্রায় দেড় শতাধিক শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও স্থানীয় ব্যক্তিবর্গ উপস্থিত ছিলেন।

সংবাদ সম্মেলন বক্তরা বলেন, প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বিদ্যালয়টিতে যোগদানের পর থেকে নানা অনিয়ম করে আসছেন। তিনি নিজের আত্মীয়স্বজনদের ম্যানেজিং কমিটির সদস্য ও স্কুলের বিভিন্ন পদে নিয়োগ দিয়ে পারিবারিক স্কুলে পরিণত করেছেন। তিনি স্কুলের অন্য শিক্ষকদের ভয়ভীতি দেখান এবং নানা অজুহাতে তাদের কাছে টাকা নেন। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের কম্পিউটার ক্রয়ের নামে টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ, ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা আত্মসাৎ, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিভাবককে হুমকি, একজন ছাত্রীর সঙ্গে অশালীন আচরণ করার অভিযোগ করা হয়। গত ৬ মাস ধরে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে আসছেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসী।

অজ্ঞাত কারণে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।

শিক্ষক মাহবুবুর রহমান বলেন, “প্রধান শিক্ষক আমাদের ভয়ভীতি দেখান এবং বলেন, ‘আমি প্রধান শিক্ষক হয়েছি কি এমনি, মানুষ কেটে জোড়া দিতে পারি’! তিনি বিদ্যালয় ফান্ডের ৫ লাখ টাকা তুলে আত্মসাত করেছেন।”

শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, “ননএমপিও ৪ শিক্ষকের জন্য ব্যাংকে রাখা টাকা তিনি তুলে আত্মসাত করেছেন। আমাদের তিন মাসের বেতন দিয়ে ২৭ মাসের স্বাক্ষর নিয়েছেন। পরে দেখি টাকা নাই।

কৃষি শিক্ষক সুব্রত রায় জানান, “তিনি শারীরিকভাবে অসুস্থ্ থাকার কারণে প্রধান শিক্ষকের কাছে দুই মাসের ছুটি নিয়ে ভারতে গেলেও তার বিপরীতে অতিরিক্ত শিক্ষক দিতে হয়েছে। এজন্য প্রধান শিক্ষককে মোটা অংকের টাকা দিতে হয়েছে। এ ছাড়াও উচ্চ মাধ্যমিকের এমপিও না হলেও অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগ দিয়ে তিনি মোটা অংকের টাকা হানিয়ে নেন।”

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষক জাহাঙ্গীর কবির বলেন, “আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে। একটি প্রভাবশালী পক্ষ ইন্ধন দিয়ে শিক্ষক ও ছাত্রদের দিয়ে এসব করাচ্ছে। সব অভিযোগ মিথ্যা। আমাকে কারণ দর্শনো নোর্টিশ দেয়া হয়েছে। আমি এসবের জবাব দেব।”

জানতে চাইলে বর্তমান পরিচালনা কমিটির সভাপতি ও পীরগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমুল হক সুমন বলেন, সন্তোষজনক জবাব পাওয়া না গেলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

Link copied!