কবি, প্রাবন্ধিক ও রাজনৈতিক ভাষ্যকার ফরহাদ মজহার বলেন, “ছাত্র-জনতার গণ-অভুত্থ্যানে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে বিদ্যমান আইনে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই। তাই পুরোনো সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন করে সংবিধান প্রণয়ন করতে হবে।”
শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিকেলে নারায়ণগঞ্জ নগরের ডিআইটি বাণিজ্যিক এলাকায় আলী আহাম্মদ চুনকা নগর পাঠাগার ও মিলনায়তনের এক্সপেরিমেন্টাল হলে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের পথ’ শীর্ষক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
পাঠ-চিন্তার আয়োজনে আলোচনায় স্বাগত বক্তব্য দেন হাসান জাফরুল বিপুল।
রাকিবুল রাকিবের সঞ্চালনায় সূচনা বক্তব্য দেন সারোয়ার তুষার। আলোচনা শেষে প্রশ্ন–উত্তর পর্বের সঞ্চালনা করেন আফসার বিপুল।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি, নারায়ণগঞ্জ নাগরিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক জাহিদুল হক, পরিবেশবাদী সংগঠক ও কবি আরিফ বুলবুল, সংগঠক ও চিত্রনির্মাতা মো. রোমেল, নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক শাহীন মাহমুদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক-সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।
ফরহাদ মজহার বলেন, “ফ্যাসিবাদ, ফ্যাসিবাদী শক্তি, ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রব্যবস্থার বিরুদ্ধে এবারের ছাত্র-জনতার গণ–অভু্যত্থান হয়েছে। যারা পুরোনো ব্যবস্থা টিকিয়ে রাখতে চায়, তারা কিন্তু খুব ভালো সুযোগ নিয়ে নিয়েছে। তারা কী করল, পুরোনো ব্যবস্থার অধীনে এই যাদেরকে আমরা উপদেষ্টা বলছি। তারা শপথ নিলেন পুরোনো ব্যবস্থার প্রেসিডেন্টের কাছে। তারাা শপথ নিয়ে বললেন আমরা এই সংবিধান রক্ষা করব। আমরা কি এই সংবিধান রক্ষা করব। তারা ফ্যাসিবাদ–ব্যবস্থা রক্ষা করবেন বলে শপথ নিয়েছেন। এখন তাঁদেরকে সরানো যাবে না। হয়তো এখানে ষড়যন্ত্র থাকতে পারে।”
বিদ্যমান আইনের মধ্যে এই সরকারকে বৈধতা দেওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “এই সরকার কীভাবে নিজেদের বৈধ প্রমাণ করবেন, আমি জানি না। তারা যতটুকু করবেন, জোর করে করবেন, যতটুকু তাদের হাতে ক্ষমতা আছে, ততটুকু তাঁরা করবেন। কিন্তু লিগ্যালি ওইটা কখনো বৈধ হবে না।”
তিনি বলেন, “আমাদের যে নতুন রাষ্ট্র গঠন করার আকাঙ্ক্ষা এই যে গণ–অভুত্থ্যানের মধ্য দিয়ে ঘটেছে, এটার ধারেকাছে আমরা যেতে পারিনি।”
গণ-অভুত্থ্যান হলে আপনি কেন গণ-আদেশে চলতে পারেন না প্রশ্ন তোলেন তিনি।
শেখ মুজিবকে হত্যার পরে ইনডেমনিটি আইন করা হলেও সেটি বাতিল করা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “ওই সময় সংবিধান ফেলে দিয়ে নতুন সংবিধান প্রণয়ন করা হলে এটা করা সম্ভব হতো না।”
তিনি বলেন, “পুরোনো সংবিধান রেখে দেওয়া হলে আজকে থেকে ২০ বছর পরও যদি আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসে, তাহলে গণ-অভুত্থ্যানের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের সবার বিচার হবে।”
শেখ হাসিনা চট করে ঢুকে পড়ার মুঠোফোন ফাঁস হওয়ার সারা দেশে মাজারে হামলা শুরু হয়ে গেছে উল্লেখ করে ফরহাদ মজহার বলেন, “মাজার, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী ও পাহাড়িদের আমাদের রক্ষা করতে হবে। তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”
নির্বাচনের সঙ্গে গণতন্ত্রের কোনো সম্পর্ক নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমাদের সব রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে কথা বলে, আলোচনা করে এই সংকট কাটিয়ে উঠতে হবে।”
সিগারেটের নিকোটিনের ক্ষতির চেয়ে গাঁজা খাওয়ায় ক্ষতি কম উল্লেখ করে তিনি বলেন, “মাজারে গাঁজা ও গানবাজনা বন্ধ করতে হলে, আগে বড় হোটেলগুলোতে মদ, বিয়ার খাওয়া ও গানবাজনা বন্ধ করতে হবে।”
সূচনা বক্তব্যে সারোয়ার তুষার বলেন, “ছাত্র-জনতার গণ-অভুত্থ্যান আন্দোলন নস্যাৎ করতে দেশি-বিদেশি চক্রান্ত চলছে। তাই আমাদের রাজনৈতিক দলসহ সবাইকে জাতীয় সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে।”