টাঙ্গাইলে যৌথ বাহিনীর অভিযানে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য জোয়াহেরুল ইসলাম জোয়াহেরের বাড়ি দখলমুক্ত করা হয়েছে।
শনিবার (৮ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টায় শহরের ছোট কালিবাড়ী এলাকার বাসা থেকে মানসিক ভারসাম্যহীনদের বের করে সন্তোষ বড়ইতলা এলাকায় পূর্বের বাসায় নিয়ে যাওয়া হয়। রাত সাড়ে ৯টা থেকে সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরিফের নেতৃত্বে সেনাবাহিনী ও পুলিশ যৌথভাবে এ অভিযান পরিচালনা করে।
এর আগে শনিবার সকালে ছাত্র প্রতিনিধি ও সমন্বয়ক মারইয়াম মুকাদ্দাস মিস্টি জোয়াহেরুল ইসলামের বাসার তালা ভেঙে ১৭ জন পাগল নিয়ে ভবনে প্রবেশ করেন। এতে জেলাজুড়ে ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনার সৃষ্টি হয়। এতে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন।
স্থানীয়রা জানায়, এভাবে একজনের বাড়ি দখল করা কোনো কাম্য নয়। আমরা বিষয়টি পুলিশকে অবগত করি। একই সঙ্গে এ ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি করছি। স্থানীয়দের অভিযোগ, সকাল থেকেই এসব পাগলকে খাবার দেওয়া হয়নি। তারা সারাদিন না খেয়েই দিন যাপন করেছেন।
জোয়াহেরুল ইসলামের স্ত্রী রওশন আরা খান বলেন, “আমাদের কাছে প্রথমে মিস্টি নামের এক মেয়ে ১০ কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিল। সেই টাকা না দেওয়ায় তারা বাড়ি জবরদখল করেছে। আমি এ ঘটনায় থানায় মামলা করব।”
রওশন আরা খান বলেন, “বাড়িটি আমার নামে, আমার স্বামীর নামে নয়। আমি এ ঘটনায় সঠিক বিচার দাবি করছি।”
জোয়াহেরুল ইসলামের মেয়ে জাকিয়া ইসলামও দাবি করেছেন, তাদের কাছে ১০ কোটি টাকা চাঁদা চেয়েছিল।
সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রুহুল আমিন শরিফ বলেন, “১৭ জন মানসিক ভারসাম্যহীনকে উদ্ধার করা হয়েছে। সমাজসেবাসহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে তাদের পুনর্বাসন করা হবে।”
ছাত্র সমন্বয়ক মিষ্টি জানান, ফেসবুকে পূর্ব ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল। আওয়ামী লীগের সব নেতাদের বাড়িতে পাগলদের জন্য ‘আশ্রম’ গড়ে তোলা হবে। তারই অংশ হিসেবে শনিবার সকালে তালা ভেঙে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের ছয়তলা ভবনে প্রবেশ করা হয়েছে। ওই বাসায় আল মুকাদ্দাস ফাউন্ডেশনের ১৭ পাগল রাখা হয়েছে। এটাকে জবরদখল বলা যাবে না, কারণ কোনো ব্যক্তিবিশেষের ব্যবহারের জন্য ভবনটি নেওয়া হয়নি। সমাজের অবহেলিত পাগলদের জন্য আশ্রম করা হচ্ছে। এতে অন্য সমন্বয়করা তাকে সমর্থন দিয়েছেন বলে জানান তিনি।
মিষ্টি বলেন, “জোয়াহেরুল ইসলামের পক্ষ থেকে একজন লোক এসে জানান, বাসা না ভেঙে সেখানে যেন আশ্রম করা হয়। তার প্রস্তাব অনুযায়ী পাগলদের আশ্রমই তৈরি করা হয়েছে।”
তবে এ কথা কে বলেছেন, তার নাম-পরিচয় বলতে পারেননি সমন্বয়ক মিষ্টি।
মিষ্টি বলেন, “চাঁদা চাওয়ার অভিযোগ সঠিক নয়, আমি চাঁদা চাইনি।”
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের টাঙ্গাইল জেলা শাখার আহ্বায়ক আল আমিন জানান, মারইয়াম মুকাদ্দাস মিষ্টি নামের একজন নারী ছাত্র প্রতিনিধি তথা সমন্বয়ক পরিচয়ে আওয়ামী লীগ নেতার বাসায় পাগলের আশ্রম করেছেন বলে তিনি শুনেছেন। তারা এটাকে কোনোভাবেই সমর্থন করেন না। কেউ এরকম কাজ করলে অবশ্যই তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।”
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল সদর থানার ওসি তানবীর আহম্মেদ জানান, যেহেতু ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী শিক্ষার্থীরা নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করে ফেলেছেন সেখানে ছাত্র প্রতিনিধি বা সমন্বয়ক বলতে আর কিছু থাকে বলে তার মনে হয় না।
এর আগে ৬ ফেব্রুয়ারি বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা সাবেক এমপি ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জোয়াহেরুল ইসলামের বাসায় ঢুকে লুটপাট ও ভাঙচুর চালায়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে জোয়াহেরুল ইসলাম আত্মগোপনে রয়েছেন। এর আগেও মিষ্টির নেতৃত্বে জেলা আওয়ামী লীগ কার্যালয়, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফজলুর রহমান খান ফারুক, সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক মেয়র জামিলুর রহমান মিরনের বাসা ভাঙচুর করা হয়।