ফরিদপুরে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গণশুনানিতে জেলার সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বিরুদ্ধে হয়রানি, দুর্নীতি, অনিয়ম, ঘুষ নেওয়াসহ নানা অভিযোগ করেছেন সেবাগ্রহীতারা।
বুধবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত ফরিদপুর শহরের কবি জসীমউদ্দীন হলে আয়োজিত গণশুনানিতে জেলার ২৫ প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ১৪৫টি অভিযোগ পড়েছে।
এ সময় অভিযোগগুলোর মধ্যে শুনানি হয়েছে ৭৬টির। এর মধ্যে কয়েকটি অভিযোগ অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাকি অভিযোগগুলোর তাৎক্ষণিক সমাধান করা হয়। অভিযোগগুলো প্রাথমিক যাচাই-বাছাই শেষে দুর্নীতি দমন কমিশনে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
যেসব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো হলো ফরিদপুর ভূমি কার্যালয়, মৎস্য বিভাগ, বিআরটিএ, পাসপোর্ট অফিস, শিক্ষা অফিস, সমাজসেবা অফিস, সাব-রেজিস্ট্রার অফিস, রাজেন্দ্র কলেজসহ ২৫টি প্রতিষ্ঠান। তবে সবচেয়ে বেশি অভিযোগ ওঠে ফরিদপুর ভূমি কার্যালয়ের বিরুদ্ধে।
গণশুনানিতে ফরিদপুর সদর ভূমি কার্যালয় নিয়ে অভিযোগ করেন স্থানীয় বাসিন্দা আশরাফ মৃধা, রাকিব হোসেন ও চামেলী বেগম। তাদের অভিযোগ ওই ভূমি কার্যালয়ে ভূমির নামজারি করতে হলে ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা দাবি করা হয়। টাকা না দিলে কর্মকর্তারা নানাভাবে হয়রানি করেন। যারা চাহিদামতো টাকা দেন তাদের নামজারি সময়মতো হয়ে যায়। আর যারা টাকা দেন না, তাদের হয়রানির শিকার হতে হয়।
গণশুনানিতে দুদকের সচিব মাহবুব হোসেন বলেন, “দুর্নীতি করে কেউ পার পাবে না। আমাদের সংবিধানেরও মেসেজটা এমন যে রাষ্ট্র এমন অবস্থার সৃষ্টি করবে, যেখানে অনুপার্জিত অর্থ কেউ যেন ভোগ করতে না পারে। সে লক্ষ্যেই দুদক সব কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। গণশুনানিতে সেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলো অনুসন্ধান করে দেখা হবে। গুরুতর অভিযাগগুলো আমলে নিয়ে দুদকের আইন ও নিয়মানুযায়ী পর্যবেক্ষণ ও অনুসন্ধান করা হবে এবং কমিশনের সিদ্ধান্তক্রমে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
ফরিদপুর জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার বলেন, “গণশুনানিতে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের কাছে অভিযোগের বিষয়ে জবাব চাওয়া হয়েছে। সেখানে অভিযোগের বিষয়ে সমাধান ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।”
জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদারের সভাপতিত্বে গণশুনানিতে উপস্থিত ছিলেন দুদকের মহাপরিচালক (প্রতিরোধ) মো. আক্তার হোসেন, ঢাকা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ মোরশেদ আলম, ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মো. শাহজাহান, জেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি প্রফেসর মো. শাহজাহান মিয়া, দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় ফরিদপুরের উপপরিচালক রেজাউল করিম, সব সরকারি দপ্তরের প্রধান, সাংবাদিক, জনপ্রতিনিধিসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ।