মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে মাছ ধরতে গিয়ে জেলের পায়ুপথ দিয়ে ঢুকে যাওয়া কুঁচিয়াটি পেটের ভেতরে বেঁচে ছিল প্রায় ৩৬ ঘণ্টা। এরপর অস্ত্রোপচার করে এটি বের করা হয়। কিছুক্ষণ দেরি হলে রোগী সংকটাপন্ন অবস্থায় চলে যেতে পারতেন। পেটের ভেতরে কোনোভাবে অক্সিজেন পাওয়ায় এটি জীবিত ছিল।
বুধবার (২৭ মার্চ) সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজের সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক কাজী জানে আলম আলাপ গণমাধ্যমকে এ তথ্য জানিয়েছেন।
এর আগে রোববার (২৪ মার্চ) রাতে অধ্যাপক কাজী জানে আলমের নেতৃত্বে সম্রা মুন্ডা (৫৫) নামের এক জেলের পেট থেকে অস্ত্রোপচার করে জীবন্ত কুঁচিয়া বের করা হয়। সম্রা মুন্ডা মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার রহিমপুর ইউনিয়নের মিরতিঙ্গা চা–বাগানের বাসিন্দা।
শনিবার (২৩ মার্চ) সকাল সাতটার দিকে ছোট ছেলে তপন মুণ্ডাকে সঙ্গে নিয়ে মৌলভীবাজারের হাইল হাওরে কুঁচিয়া ধরতে গিয়েছিলেন তিনি। সকাল থেকে বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত প্রায় আড়াই কেজি কুঁচিয়া ধরেন সম্রা। শেষ দিকে একটি গর্তে আরও দুটি কুঁচিয়া পান।
থলেতে ভরার জন্য দুই হাতে দুটি কুঁচিয়া ধরেন সম্রা মুণ্ডা। কিন্তু থলেতে ভরার আগে কাদামাটিতে পা পিছলে তিনি পড়ে যান। একপর্যায়ে হাত থেকে কুঁচিয়া দুটি ছুটে যায়। এর মধ্যে একটি তার পরনের প্যান্টের মধ্যে ঢুকে পড়ে। একপর্যায়ে পায়ুপথ দিয়ে কিছু একটা ঢুকে পড়ার অনুভূতি পান তিনি। তখন বিষয়টি তেমন গুরুত্ব দেননি সম্রা মুণ্ডা।
পরদিন সকালে পেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হলে ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মৌলভীবাজার সদর হাসপাতালে যান। সেখান থেকে তাকে সিলেটের ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।
সহযোগী অধ্যাপক কাজী জানে আলম বলেন, “অস্ত্রোপচারের আগে নিশ্চিত হতে শুধু রোগীর পেটের এক্স-রেটি তাদের হাতে ছিল। জরুরি হওয়ায় বেশি কিছু পরীক্ষা করা যায়নি। অনেক সময় কোনো কোনো রোগীর অবস্থা এত সংকটাপন্ন থাকে যে পরীক্ষা ছাড়াই অস্ত্রোপচার করতে হয়। সম্রা মুন্ডার অস্ত্রোপচার এত জরুরি ছিল, সিটি স্ক্যান করার সময়ও পাওয়া যায়নি। কিছুক্ষণ দেরি করলে সেপ্টিসেমিয়া (রক্তে জীবাণুর সংক্রমণ) হয়ে যেত। সরাসরি অস্ত্রোপচারই ভালো সিদ্ধান্ত ছিল।”
পেটের ভেতরে মাছজাতীয় কুঁচিয়ার বেঁচে থাকা নিয়ে এই চিকিৎসক বলেন, বৃহদন্ত্রের একটি অংশ ‘সিগময়েড কোলন’-এর প্রায় তিন থেকে চার সেন্টিমিটার ছিদ্র করে পেটের ‘পেরিটোনিয়াল ক্যাভিটির’ মধ্যে ঢুকে পড়েছিল কুঁচিয়াটি। সেখানে কিছুটা অক্সিজেন পাওয়ায় এটি বেঁচে ছিল।
চিকিৎসব আরও বলেন, এমন ঘটনা মাঝেমধ্যে পাওয়া যায়। তবে জীবন্ত পাওয়া এবারই প্রথম। রোগীর পেটের বাঁ পাশ দিয়ে মল বের হওয়ার রাস্তা বের করতে হয়েছে। দেড় মাস পর সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে আরেকটি অস্ত্রোপচার করা হবে। রোগীকে আরও ১০ দিন হাসপাতালে রেখে সেলাই শুকিয়ে যাওয়ার পর ছাড়পত্র দেওয়া হবে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের সার্জারি বিভাগে আগে মানুষের পায়ুপথ দিয়ে ঢোকা জোঁক, পানির গ্লাস, বোতল, খেলনা, ‘সিগময়েড কোলন’ ছিদ্র করে পেটে ঢুকে পড়া কৃমি অপসারণের অস্ত্রোপচার করা হয়েছে। তবে এই প্রথম জীবন্ত কোনো মাছ মানুষের পেট থেকে বের করা হয়েছে।