নেত্রকোণায় কৃষক আব্দুর রফিক ওরফে রহিত (২৮) হত্যা মামলায় আট আসামিকে যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একই এই মামলায় দুটি ধারায় প্রত্যেককে ২৫ হাজার করে টাকা জরিমানা, অনাদায়ে আরও এক মাসের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়।
রোববার (১৭ নভেম্বর) বিচারক মো. হাফিজুর রহমানের আদালত এ রায় দেন। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবুল হাশেম রায়ের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
নেত্রকোণা আসামির পক্ষের কৌঁসুলি হিসেবে ছিলেন জাহিদুল হাসান সৈকত। দণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন— ইসমাইল, কাজল মিয়া, মজিবর রহমান, আশ্রব আলী, ছামেদুল, শাহজাহান, নজরুল, নূরুল আমিন।
মামলার বিবরণীতে জানা যায়, পশ্চিম নন্দেরছটি গ্রামের আব্দুল মোতালেবের ছেলে মো. আব্দুর রফিক (২৮) ওরফে রোহিত আনুমানিক ১১ বছর যাবৎ স্থানীয় কাকড়াকান্দা বিল এলাকায় তার শ্বশুরবাড়ি-সংলগ্ন আলাদা বসতবাড়ি নির্মাণ করে বসবাস করে আসছিলেন।
২০১২ সালের ২৪ জানুয়ারি (মঙ্গলবার) রাত সাড়ে ৭টার দিকে আব্দুর রফিক বোরো ক্ষেতে পানি সেচ দেওয়ার উদ্দেশে বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। কিন্তু সারা রাত সে বাড়ি না ফেরায় পরদিন সকালে তার স্ত্রী মঞ্জুরা খাতুনসহ আশপাশের লোকজন খোঁজাখুঁজি শুরু করেন।
একপর্যায়ে ২৫ জানুয়ারি বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে স্থানীয় চিনাকুড়ি বিলের রাস্তার উত্তর পাশে বড় ধানখেতে পাটের বস্তা ভরা অবস্থায় এবং খেতের কাঁদার নিচে চাপা দেওয়া অবস্থায় রফিকের মরদেহ পাওয়া যায়। সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি দূর্গাপুর থানাকে অবহিত করলে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে মরদেহ উদ্ধার করে।
মামলার বিবরণী থেকে আরও জানা যায়, স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) নির্বাচনে মেম্বার পদপ্রার্থী হাবিবুর রহমানের পক্ষে কাজ করেছিলেন নিহত রফিক। আর আসামিরা বিরোধী পক্ষ তুতা মেম্বারের পক্ষে নির্বাচনী কাজ করেন। উক্ত নির্বাচনে মো. হাবিবুর রহমান নির্বাচিত হন এবং তুতা মেম্বার পরাজিত হন।
এই বিষয় নিয়ে আসামিরা রফিকের ওপর ক্ষিপ্ত ছিলেন এবং তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন। ঘটনার দিন বিকেলে রফিকের সঙ্গে আসামিদের তর্ক হয়। ওইদিন রাতেই রফিককে হত্যা করে মরদেহ গুম করে রাখা হয় বলে মামলায় উল্লেখ করা হয়েছে।
রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলি আবুল হাশেম বলেন, “জেলা ও দায়রা জজ নেত্রকোণার দূর্গাপুরে কৃষক হত্যা মামলায় ইসমাইলসহ আটজনকে কারাদণ্ড দিয়েছেন। এই মামলাটি অত্যন্ত চাঞ্চল্যকর মামলা। মামলায় মোট ১১ জন সাক্ষী হন। রাষ্ট্রপক্ষে মামলা প্রমাণিত হওয়ায় জেলা ও দায়রা জজ আসামিদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন।”
আবুল হাশেম আরও বলেন, “এটা ছিল একটি নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এ সমস্ত হত্যাকাণ্ডে মোকদ্দমায় সাজা হওয়ার কারণে সমাজে এর প্রবণতা কমবে। আর যেন এমন হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে, এই প্রত্যাশাই করি।”