ফরিদপুর- ৩ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী এ কে আজাদ বলেছেন, আগামী ৭ জানুয়ারি হবে ফরিদপুরের মুক্তির দিন। ফরিদপুরের বিজয়ের দিন। এই দিন জনগণ ব্যালটের মাধ্যমে সকল অনিয়ম-অত্যাচারের জবাব দিয়ে দিবে। জনগণ রুখে দাঁড়ালে কোনো সন্ত্রাসীই টিকতে পারবে না। চাঁদাবাজ, দখলবাজদের সময় ফুরিয়ে এসেছে। এই শহরে সন্ত্রাসীরা আর বেশি দিন টিকতে পারবে না।
বৃহস্পতিবার (৪ জানুয়ারি) সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ মাঠে এক নির্বাচনী জনসভায় তিনি এসব কথা বলেন।
এ কে আজাদ বলেন, আমি কখনো এতবড় জনসভায় বক্তব্য দেইনি। এত মানুষ আমি কখনো দেখিনি। মানুষ মাঠে জায়গা না পেয়ে রাস্তার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়েছে। মাঠে যত মানুষ আছে, আশপাশের রাস্তার এর চেয়ে বেশি মানুষ আছে। আমি নির্বাচনে দাঁড়াতে চাইনি, একজন নেতা আমাকে বললো আপনি না দাঁড়ালে আমি আত্মহত্যা করব। এই যে আমার হাতে বিষ। এবার আপনি আপনার সিদ্ধান্ত জানান। মানুষ কত অত্যাচারিত হলে এমন কথা বলে। কত জুলুমের শিকার হলে এমন আচরণ করে? আসলে একজন জনৈক ব্যক্তিকে মানুষ বিতাড়িত করতে চান। আজকে হামিম গ্রুপের ছেলেমেয়েরা ঢাকা ছেড়ে ফরিদপুর চলে এসেছে। ভালবাসা না থাকলে এমন হয় না।
তিনি বলেন, ফরিদপুর একটি শিল্পনগরী হবে। আমি ভোলা থেকে গ্যাস এনে ফরিদপুরের শিল্প কাজে ব্যবহার করব।
এসময় তিনি ফরিদপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও সিটি কর্পোরেশন করার প্রতিশ্রুতি দেন। ফরিদপুরে একটি মেডিকেল কলেজ ও ফরিদপুরের স্বাস্থ্যসেবা একেবারে নাজুক অবস্থার পরিবর্তন করার আশ্বাস দেন।
তিনি আরও বলেন, “আমার পোষ্টার দিনে টাঙালে রাতের আধারে তা উথাও হয়ে যায়। আমার ভাই শামীমের লোকজন আমাকে মোটেই সহ্য করতে পারে না। তারা আমার পোষ্টারের সঙ্গেও শত্রুতা করে। আমার লোক বাসা থেকে বের হয় ভালো পা নিয়ে কিন্তু ফেরার সময় ভাঙা পা নিয়ে বাসায় যেতে হয়। একটি কথা বলতে চাই। আমার ভাইয়ের পাশে অনেক সন্ত্রাসী আছে। আমার ভাই খুনি সম্রাটকে ইউনিয়ন সভাপতি করেছে। তিনি অনেক চতুর লোক। কারণ আমার লোকের ওপর হামলা করার আগে তিনি একজন লোককে আগেই হাসপাতালে ভর্তি করে রাখে। পরে আমার লোকজনকে মেরে আমাদের নামেই আবার মামলা দেয়। আমি যেখানেই যাই জনগণ আমাকে একটাই প্রশ্ন করে, আপনি কি ফরিদপুর থেকে সন্ত্রাস নির্মূল করতে পারবেন? আমি বলেছি আপনারা পাশে থাকলে সব করতে পারব।”
তিনি বলেন, “আমার পোষ্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়। ভোট চাইতে গেলে জনগণ আমাকে বলে, আপনার কোন পোষ্টার লাগবে না, আপনার পোষ্টার আমাদের বুকে। ঈগল জনগণের বুকের সঙ্গে লেগে আছে। আমার প্রথম চাওয়া হবে চাঁদাবাজী ও সন্ত্রাসমুক্ত ফরিদপুর গড়া। তারা চাঁদাবাজির লিমিট ছাড়িয়ে গেছে। শরীয়ত উল্যাহ বাজার থেকে দোকানপ্রতি ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হয়। দোকানদাররা অঝোরে কাঁদে। তবুও তাদের নিস্তার মেলে না।”
আওয়ামী লীগের সঙ্গে নিজের কর্মকাণ্ডের স্মৃতিচারণা করে একে আজাদ বলেন, ২০০৪ সালে যখন গ্রেনেড হামলা হয়। তখন আমি পার্টি অফিসে অ্যাম্বুলেন্স পাঠাই। হাসপাতালে প্রধানমন্ত্রীকে তাকে দেখতে যাই। গ্রেনেড হামলায় আহতের চিকিৎসার ব্যবস্থা করি। শিকদার মেডিকেল ও ঢাকা মেডিকেলে আমি সবাইকে চিকিৎসা সহায়তা করি। ২০০৭ যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার আসে তখন আমার নেত্রীকে গ্রেপ্তার করা হয়। তখন আমার বিরুদ্ধে হুলিয়া জারি করা হয়। আমাকে আর্মি থেকে প্রস্তাব দেওয়া হয় আমি যেন আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে মামলা করি। সাভার সেনানিবাস থেকে মামলার ড্রাফট করে আমার কাছে পাঠানো হয় যেন আমি সই করি। কিন্তু আমি রাজি হইনি। তখন আমার ভাই, আমার স্ত্রী ও আমার নামে ১৬টি মামলা দেওয়া হয়।”
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য বিপুল কুমার ঘোষের সভাপতিত্বে জনসভায় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ফারুক হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শওকত আলী জাহিদ, শহর আওয়ামী লীগের আহবায়ক মনিরুল হাসান মিঠু, যুগ্ম আহবায়ক মনিরুজ্জামান মনির, অ্যাডভোকেট বদিউজ্জামান বাবুল, জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য শাহ আলম মুকুল, খলিফা কামাল উদ্দিন,সাদিকুজ্জামান মিলন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শহিদুল ইসলাম নিরু, জেলা মহিলা লীগের সাধারণ সম্পাদক নুসরাত রসুল তানিয়া প্রমুখ।