টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্বপারের গোল চত্বরে সড়ক দুর্ঘটনায় দুই শিশু ও এক নারীসহ ছয়জন নিহত হয়েছে। এ ঘটনায় অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চালিয়েছে বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সদস্যরা।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) বেলা সাড়ে ১২টার দিকে একতা পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ও একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংর্ঘষে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহতরা হলেন মাইক্রোবাসের চালক কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার কুটুম্বপুর গ্রামের মৃত ফজলুল হকের ছেলে দুলাল হোসেন (৫২), পাবনার বিএডিসির যুগ্ম পরিচালক (সার) জহিরুল ইসলাম (৫০), বগুড়া সদরের জলসিড়ি গ্রামের হেলাল উদ্দিনের ছেলে রিফাত (৩৫), নাটোর সদরের বড়াই গ্রামের আব্বাস আলীর ছেলে তামিম (৭), রুবি বেগম (৬৫)। একজনের পরিচয় জানা যায়নি।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষ, ফায়ার সার্ভিস ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার দিকে ছেড়ে আসা একতা পরিবহনের যাত্রীবাহী একটি বাস ঢাকা-টাঙ্গাইল-বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের বঙ্গবন্ধু সেতুর পূর্বপাড়ের গোল চত্বর এলাকায় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সড়কের লেন পরিবর্তন করে বিপরীত লেনে এসে পড়ে । এ সময় ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা উত্তরবঙ্গগামী একটি মাইক্রেবাসের উপরে উঠে যায় বাসটি। এতে ঘটনাস্থলেই তিন জন এবং হাসপাতালে নেওয়ার পথে আরও তিনজন মারা যান। নিহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা কর্তৃপক্ষের।
মাইক্রোবাসে থাকা চালক, একজন পুরুষ ও একজন নারী যাত্রী ঘটনাস্থলেই মারা যান। আর বাস যাত্রীদের মধ্যে দুই শিশু ও একজন পুরুষ যাত্রী হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান।
বঙ্গবন্ধু সেতু কর্তৃপক্ষের সহকারী সিকিউরিটি অ্যান্ড সেফটি ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম বলেন, “আমরা সংবাদ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাস্থলে চলে আসি। এসে দেখি মাইক্রো গাড়ি ও বাসের যাত্রীরা চিৎকার করছে। আমাদের বিবিএর রেসকিউ টিম এসে উদ্ধার কাজ শুরু করে। এখানে যারা আহত ছিলেন আমাদের ও ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে করে তাদের সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে পাঠিয়ে দেই। এছাড়া যারা ঘটনাস্থলে নিহত হয় তাদের মরদেহ থানায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা আতাউর রহমান বলেন, চাপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকার উদ্যেশে ছেড়ে আসা একটি বাসের সঙ্গে একটি মাইক্রোবাসের মুখোমুখি সংঘর্ষে তিনজন ঘটনাস্থলে মারা যান। এছাড়া আমাদের গাড়ি দিয়ে টাঙ্গাইল নেওয়ার পথে দুইজন মারা যায় এবং হাসপাতালে নেওয়ার পর আরও একজন মারা যায়। এ ঘটনায় প্রায় ২৫ জন আহত হয়েছে।
ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপার সরকার মোহাম্মদ কায়সার বলেন, যে দুর্ঘটনাটি ঘটেছে তার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা ধারণা করছি ঢাকা মুখি একতা পরিবহনের যে বাসটি বাম লেন দিয়ে যাচ্ছিল এটি কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি বা ব্রেকফেল করে লেন পরিবর্তন হয়ে উত্তরবঙ্গমুখি লেনে প্রবেশ করে। কিন্তু উত্তরবঙ্গমুখি লেনে যে মাইক্রোবাসটি যাচ্ছিল তখন ওই বাসের সঙ্গে মুখোমুখি সংর্ঘষ হয়ে এ দুর্ঘটনাটি ঘটে। এতে ছয়জনের মৃত্যু হয়। যে সকল পরিবারের সদস্যরা এখানে নিহত বা আহত হয়েছেন তাদের পরিবারের সদস্যরা থানায় আসলে আমারা আইনগত সহায়তা প্রদান করব। নিহতদের মরদেহ পুলিশের তত্বাবধায়নে রয়েছে। ময়না তদন্ত শেষে পরিচয় নিশ্চিত হবার পর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক আতাউল গনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বলেন, ঘটনাটি খুবই মর্মান্তিক। দুর্ঘটনাটি কেন ঘটলো তার জন্য অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের নেতৃত্বে জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, বিআরটিএ’র সমন্বয়ে তদন্ত কমিটি গঠণ করা হবে। দুর্ঘটনায় যারা মারা গেছেন তাদের পরিবারকে মরদেহ দাফনের জন্য ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হবে। এছাড়া আহতদের চিকিৎসা সরকারী হাসপাতালে দেয়া হচ্ছে। আহতদের চিকিৎসার জন্য যদি অতিরিক্ত ওষুধের প্রয়োজন হলে তা জেলা প্রশাসন বহন করবে।