পাবনার ঈশ্বরদী ও আটঘরিয়ার বিভিন্ন বাজারে ভিন্ন ভিন্ন দামে বিক্রি হচ্ছে বেগুন। রমজানের শুরুতে যে বেগুন ৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে, সেই বেগুনের দাম প্রকার ও মানভেদে ৫ টাকা থেকে শুরু করে ৩০ টাকা। তবে বেগুনের এমন নিম্নমুখী দামে ক্রেতারা খুশি হলেও মুখ কালো করেছেন বিক্রেতারা।
বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত বছর জেলার কৃষকরা বেগুন চাষ করে ভালো দাম পেয়েছেন। তাই এবছর জেলা অধিকাংশ কৃষক বেগুনের চাষ করেছেন। রোজার প্রথম দিকে বাজারে বেগুনের দাম বেড়ে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়। ওই সময় কৃষকরা ভালো লাভের আশায় ক্ষেত থেকে বেগুন তুলে বাজারে নিয়ে আসেন। এতে বাজারে চাহিদার তুলনায় জোগান বেড়ে যায় এবং জেলার বাইরের কোনো পাইকারও ছিলেন ন। তখন কৃষকরা বাধ্য হয়ে প্রকার, আকার ও মানভেদে বেগুন ৫ টাকা থেকে ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি শুরু করেন।
শনিবার (১৬ মার্চ) সকালে পাবনার আটঘরিয়া উপজেলার পারখিদিরপুর বাজারে খুচরা পর্যায়ে বেগুন বিক্রি হয়েছে ১৫ টাকা কেজি দরে। পাশেই ঈশ্বরদী উপজেলার দাশুড়িয়া ও মুলাডুলি মোকামে বেগুন পাইকারি বিক্রি হয়েছে ৪ থেকে ৫ টাকা কেজিতে। এখানকার বেগুন কিনে ব্যবসায়ীরা স্থানীয় বাজারে আকার ও মানভেদে ১০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত কেজি দরে বিক্রি করছেন।
এদিকে রমজান মাসে ইফতারের জন্য অতি প্রয়োজনীয় এই সবজির দাম কমে যাওয়ায় খুশি ক্রেতারা। টেবুনিয়া হাটে সবজি কিনতে আসা আসলাম হোসেন, জুয়েল আহমেদ, মিরাজ হোসেনসহ একাধিক ক্রেতা বলেন, “একটু একটু আনন্দ লাগছে এই ভেবে যে, অন্তত একটা জিনিসের দাম কমেছে। রমজানের আগের দিন যে দোকান থেকে ৬০ টাকা কেজি বেগুন কিনেছি। সেই দোকান থেকে আজ বেগুন কিনছি ২০ টাকা কেজি করে। গেল কয়েকদিনের ব্যবধানে ৪০ টাকাই নেই। এভাবে যদি সব পণ্যের দাম কমতো তাহলে আমাদের মতো নিম্নমধ্যবিত্তরা একটু স্বস্তি পেতাম।”
দাশুড়িয়ার বেগুনচাষি আব্দুল খালেক বলেন, “বেগুনের আমদানী বেড়ে যাওয়ায় হঠাৎ দাম পড়ে গেছে। এ পর্যন্ত যা বেগুন তুলেছি বা বিক্রি করেছি, ক্ষতি হয়নি। তবে এভাবে দাম পড়ে থাকলে লাভের মুখ চোখে পড়বে না।”
খিদিরপুরের বেগুনচাষি মিনাজ আলী বলেন, “সবজি চাষের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, এমন দাম কখনো সাম্প্রতিক বছরে পড়েনি। নিজেই অবাক হয়েছি। দাম কী এতোটাই পড়তে পারে। এভাবে দাম পড়লে বেগুন আবাদের টাকা তোলা রিস্ক হয়ে যাবে।”
পাবনা সদরের মাহমুদপুর গ্রামের বেগুনচাষি সোলেমান মিয়া বলেন, “বেগুনের দাম মোটামুটি ভালোই পাচ্ছিলাম। কয়েকদিনের মধ্যে বাজার এলোমেলো হয়ে গেছে। ঈশ্বরদীর বাজার খারাপ। যার প্রভাব পড়েছে আমাদের এখানেও। আগের মতো দাম নেই।”
পাবনা শহরের কাঁচামাল ব্যবসায়ী নান্নু বলেন, “সবজির দাম ওঠানামা করবেই। পাবনার উৎপাদিত সবজির বেশির ভাগই বাইরের জেলাগুলোতে চলে যায়। যখন বাজারে সবজির আমদানী বেড়ে যায় আর বাইরের পাইকার না আসে তখনই স্থানীয় বাজারে দাম পড়ে যায়। আবার বাইরের পাইকার এলে বাজারের সবজির দাম চড়া হয়ে যায়। প্রতিদিন তো বাজার এক থাকে না।”