বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) পাঁচ সমন্বয়ক ও সহসমন্বয়ক পদত্যাগ করেছেন। শুক্রবার (১৬ আগস্ট) বিকেলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তারা পদত্যাগের ঘোষণা দেন।
পদত্যাগকারীরা হলেন সমন্বয়ক সুমাইয়া শিকদার, সহসমন্বয়ক ধ্রুব বড়ুয়া, ঈশা দে, আল মাসনুন ও সাইদুজ্জামান রেদোয়ান।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে আল মাসনুন বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে একটি সফল গণ-অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দিয়েছে। জনমানুষকে একটি বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখিয়েছে। কিন্তু এই সফলতা স্বৈরাচার পতনের মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলেও, এখন নানা ধরনের সমন্বয়হীনতা দৃশ্যমান হয়েছে।”
তিনি বলেন, “সাধারণ শিক্ষার্থীদের কাছে সমন্বয়করা জবাবদিহি করছে না এবং নানা ধরনের সাফাই দিচ্ছেন, যেগুলো অনেকাংশেই একপাক্ষিক। প্রথম থেকেই যেসব সমন্বয়হীনতা ও অপরাজনীতির আভাস পেয়েছি, আমরা সেগুলোর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।”
পদত্যাগকারী এই সমন্বয়ক বলেন, “ভিসি, প্রক্টর ও প্রভোস্টদের পদত্যাগের যৌক্তিকতা ও অযৌক্তিকতা বিষয়ে নানা ধরনের বিতর্ক উঠে আসছিল। আমরাও তাদের পদত্যাগ চেয়েছিলাম, কিন্তু সেটা ধাপে ধাপে। ক্যাম্পাসে শিক্ষার্থীদের আগমন, তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ ও সব লেজুড়ভিত্তিক ও দখলদারি দলীয় রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ব্যবস্থা করেই যেন ভিসি পদত্যাগ করেন। কিন্তু কোনো মতামতকে যাচাই-বাছাই না করেই সমন্বয়করা ক্যাম্পাসের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে ফেলে। শিক্ষার্থীদের মতামত নিয়ে সমালোচনার সঠিক কোনো প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হয়নি সমন্বয়ক কমিটিতেও।”
তিনি বলেন, “আন্দোলন চলাকালে চবির সমন্বয়ক সংখ্যা ছিল ২২ জন। কিন্তু পরে আগস্ট মাসের ৫ তারিখ চবি সমন্বয়ক সদস্য সংখ্যা হয় ৩০ জন। ৫ তারিখে নতুন যে কয়জন কমিটিতে যুক্ত হয়েছে তাদের বিষয় নিয়েও মূল সমন্বয়করা কোনো সিদ্ধান্তে আসতে পারেনি। এমন ঘটনা, জবাবহীনতা ও ট্যাগা-ট্যাগির ফ্যাসিস্ট বয়ান আমাদের মনে স্বাভাবিক প্রশ্নের জন্ম দেয়। আমরা মনে করি, সমন্বয়করা আমাদের সঙ্গে সৎ নন। ক্যাম্পাস সংস্কারের কাজে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিতে তারা তৎপর নন, প্রভোস্টদের পদত্যাগ না করিয়ে হলে শিক্ষার্থীদের ওঠানোর বিষয়ে আরও ভালো সিদ্ধান্ত তারা নিতে পারতেন।”
‘আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীদের উদ্বেগকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করি ও সাধারণ শিক্ষার্থীদের মতামতকে সম্মান জানাই। তাই আমরা সবাই মিলে নিজ নিজ সমন্বয়ক পদ থেকে পদত্যাগের ঘোষণা করছি। আগামীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে যেসব কর্মসূচি পালন হবে তার সঙ্গে আমাদের কোনও যোগাযোগ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে আমরা সবসময় ছিলাম এবং আগামীতেও থাকবো।’
এ প্রসঙ্গে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন চট্টগ্রামে দায়িত্ব পালনকারী কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক রাসেল আহমেদ বাংলা ট্রিবিউনকে দেওয়া লিখিত বক্তব্যে বলেন, ‘আমাদের সমন্বয়কদের পক্ষ থেকে আজকে যারা পদত্যাগ করছে তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্তকে আমরা সম্মান জানাই। তারা দীর্ঘদিন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থেকে দেশের ছাত্র জনতার অধিকার আদায়ের আন্দোলনে অবদান রাখছে। তাদের এই অবদান শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি। তারা যেহেতু স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেছেন, সেহেতু আজকে থেকে তাদের সঙ্গে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কোনও সম্পর্ক থাকবে না।’
তিনি বলেন, “বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন বরাবরের মতো সাধারণ ছাত্র জনতার অধিকার আদায়ের লক্ষ্যে কাজ করে যাবে। অনেক স্বার্থান্বেষী মহল আমাদের অর্জনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করছে এবং নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে চাচ্ছে। যেটা কখনও সফল হতে দেওয়া হবে না। একটা পক্ষ নিজেদের স্বার্থ হাসিল করতে ব্যর্থ হয়ে প্রেস ব্রিফিং করে আমাদেরকে প্রশ্নবিদ্ধ করছেন। তাদের উদ্দেশ্য বলতে চাই, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানার ব্যবহার করে কোনো দলে এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না।”