• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৯ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

চট্টগ্রামে চলছে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট, যাত্রীদের ভোগান্তি


চট্টগ্রাম প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ২৮, ২০২৪, ০৩:৩১ পিএম
চট্টগ্রামে চলছে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট, যাত্রীদের ভোগান্তি

চট্টগ্রামে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় গাড়ি ভাঙচুরের প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট চলছে। এতে  রাস্তায় বাসসহ বিভিন্ন গণপরিবহনের সংখ্যা স্বাভাবিকের চেয়ে কম। এ ছাড়া তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপ-জেলাগামী রুটেও বাস চলাচল বন্ধ আছে।

রোববার (২৮ এপ্রিল) ভোর ৬টা থেকে বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের ডাকা এই ধর্মঘট শুরু হয়।

এই পরিস্থিতিতে দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। মোড়ে মোড়ে বিভিন্ন গন্তব্যমুখী মানুষের ভিড় লক্ষ করা গেছে। সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা। অনেকেই ট্রাকে চড়ে গন্তব্য যাচ্ছেন।

তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নগরে গণপরিবহনের সংখ্যা বেড়েছে। কিন্তু সকাল ১১টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম থেকে তিন পার্বত্য জেলা, কক্সবাজার ও উপজেলাগামী কোনো বাস ছেড়ে যায়নি।

এদিকে ধর্মঘটের সমর্থনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় শ্রমিকরা পিকেটিং করছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

রাঙ্গুনিয়াগামী যাত্রী দিবাকর দাশ বলেন, “চুয়েটের সঙ্গে বাস মালিক-শ্রমিকদের সমস্যা। চুয়েটের শিক্ষার্থীদের অবরোধে ৪ দিন গাড়ি চলেনি। এখন আবার শ্রমিকেরা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে। মোটকথা সবকিছুতে ভুক্তভোগী আমরা।”

বাহাদুর শাহ নামে এক কলেজ শিক্ষার্থী বলেন, “গণপরিবহন সংকটের কারণে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।”

এর আগে, শনিবার দুপুরে চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা মালিক সমিতি কার্যালয়ে গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের জরুরি সভায় এ কর্মসূচি ঘোষণা করেন সংগঠনের আহ্বায়ক মঞ্জুরুল আলম চৌধুরী। এ সময় গণপরিবহন মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের নেতারা উপস্থিত ছিলেন। তবে এই ধর্মঘট প্রত্যাখ্যান করেছেন মালিক-শ্রমিকদের একাংশ। 

বৃহত্তর চট্টগ্রাম গণপরিবহন মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের সদস্য সচিব মোহাম্মদ মুছা বলেন, “সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, রোববার ভোর ৬টা থেকে মঙ্গলবার ভোর ৬টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা ও মহানগর, কক্সবাজার এবং তিন পার্বত্য জেলায় বাস, মিনিবাস, হিউম্যান হলার, অটোরিকশা ও অটো-টেম্পু চলাচল বন্ধ থাকবে। দূরপাল্লার কোনো বাস এসব জেলা ও মহানগর থেকে ছাড়বে না এবং ঢুকতেও পারবে না। মালিক-শ্রমিকদের স্বতঃস্ফূর্তভাবে ধর্মঘট সফল করার আহ্বান জানানো হয়েছে।”

তিনি বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে চাঁদাবাজির অভিযোগ তুলে ওয়েবিল চেকার-লাইনম্যানসহ পরিবহন শ্রমিকদের র‌্যাবের গণগ্রেপ্তারের প্রতিবাদে পূর্বাঞ্চলীয় সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে ২৪ ঘণ্টার ধর্মঘট আহ্বান করা হয়েছিল। এর মধ্যে চুয়েটের পরিস্থিতি নিয়ে শনিবার দুপুরে ঐক্য পরিষদ জরুরি সভায় বসে। সভা থেকে চার দফা দাবিতে ৪৮ ঘণ্টা পরিবহন ধর্মঘট পালনের সিদ্ধান্ত হয়।

এসব দাবির মধ্যে আছে, চুয়েটে দুই শিক্ষার্থী নিহতের জেরে ৪-৫টি গাড়ি ভাঙচুর ও তিনটি বাস পুড়িয়ে দেওয়ার ঘটনায় মামলা গ্রহণ, ক্ষতিপূরণ দেওয়া, ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার এবং চুয়েটের তিন শিক্ষার্থীকে বহনকারী মোটরসাইকেলটি নিবন্ধিত ছিল কি না, চালকের ড্রাইভিং লাইসেন্স ছিল কি না, তিনজন একইসঙ্গে মোটরসাইকেলে ওঠার ক্ষেত্রে বিদ্যমান আইনের লঙ্ঘন হয়েছে কি না ও তারা মাদকাসক্ত ছিল কি না, এসব বিষয় তদন্তে কমিটি গঠন।

এদিকে পরিবহন মালিক সমিতির সদস্যদের সঙ্গে জেলা প্রশাসক ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সভা অনুষ্ঠিত হবে। রোববার (২৮ এপ্রিল) দুপুর আড়াইটার দিকে এই সভা হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে ২২ এপ্রিল কাপ্তাই-চট্টগ্রাম সড়কে দুর্ঘটনায় চুয়েটের ২ শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়। এতে আহত হন আরও এক শিক্ষার্থী। এ ঘটনার প্রতিবাদে টানা চারদিন সড়ক অবরোধ করে চুয়েট শিক্ষার্থীরা। এতে ৩টি বাস পুড়িয়ে দেয় শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডেকেছে পরিবহন শ্রমিকেরা।

এদিকে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে আগামী ১১মে পর্যন্ত চুয়েট বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। শুক্রবার (২৬ এপ্রিল) বিকেলে চুয়েট সিন্ডিকেটের জরুরি সভায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। তবে শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এই সময়ে একাডেমিক কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও শিক্ষার্থীরা হলে অবস্থান করতে পারবেন।

Link copied!