পটুয়াখালীর মির্জাগঞ্জে মুঘল আমলের এক অন্যতম নিদর্শন মিঞা বাড়ি শাহী জামে মসজিদ। ৩০০ বছরের পুরোনো এই মসজিদটির অবস্থান উপজেলার রানীপুর গ্রামে। কালের বিবর্তনে এলাকায় এটি ‘মিঞা বাড়ির মসজিদ’ নামে পরিচিতি লাভ করেছে। তবে সঠিক তদারকি, সংস্কার ও যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হারিয়ে যেতে বসেছে এর সৌন্দর্য। অযত্নে অবহেলায় ঝোপঝাড়ের মধ্যে পড়ে আছে মুঘল আমলের মুসলিম ঐতিহ্যের প্রাচীন ও অন্যতম নিদর্শন এ শাহী মসজিদটি।
এলাকার প্রবীণ বাসিন্দাদের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, এই মিয়া বাড়ি ছিল মুঘল আমলের শিবন খার জমিদারির একাংশ। রানীপুর মিয়াবাড়ির জমিদার ছিলেন আরমান আলী শাহী। তিনি মসজিদটি নির্মাণ করেন এবং তার নাম অনুসারে এই মজিদের নাম রাখেন শাহী জামে মসজিদ। কিন্তু বর্তমানে জমিদার আরমান আলীর বংশধরদের নানাবিধ সমস্যার কারণে সঠিকভাবে রক্ষণাবেক্ষণ না হওয়ায় মসজিদটি এখন সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, এক গম্বুজ বিশিষ্ট মিঞা বাড়ির মসজিদটি চুনসুরকি দিয়ে নির্মিত। মসজিদটির মূল ভবন চারপাশে ২০০ বর্গফুট বিশিষ্ট। উচ্চতা প্রায় ৫০ ফুট। চার কোনায় ৪টি মিনার, মাঝে ৮টি ছোট মিনার ও মাঝখানে বড় একটি মিনার রয়েছে। মসজিদের সামনের দিকে ও উত্তর পাশে একটি করে দরজা রয়েছে। একতলা মসজিদটি নিখুঁত কারুকার্য বেষ্টিত। মসজিদের ভেতরে ৩০ থেকে ৪০ জন মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। মসজিদের ভেতরের ও বাইরের পলেস্তারা খসে পড়ে চুনসুরকি বেরিয়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে দেয়ালে শেওলা জমে বিবর্ণ হয়ে গেছে মসজিদের সৌন্দর্য। মসজিদের বাইরের দিকে রয়েছে বিভিন্ন কারুকার্যখচিত (সাদা রংয়ের ফুল আঁকা) মুসলিম স্থাপত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন। মসজিদের পূর্বপাশে প্রায় এক একর জায়গাজুড়ে একটি ঘাট বাঁধানো বড় দিঘি রয়েছে। মুসল্লিরা এখানে অজু ও গোসল করেন।
স্থানীয় বাসিন্দা ও মসজিদে নিয়মিত নামাজ আদায়কারী মুসল্লি মো. হাবিবুর রহমান জানান, মসজিদটি দ্রুত সংস্কার করলে আরও দৃষ্টিনন্দন ও আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে। একযুগ আগে একবার সংস্কার করা হয়েছিলো। এর পাশেই রয়েছে দুইটি পুরানো বাড়ির ধ্বংসাবশেষ। পুরাতন এ বাড়ি দুইটি জঙ্গলে ঢাকা পড়েছে। এখানে আসার রাস্তাটাও ভালো না। তাই দর্শনার্থীরাও আসতে পারেন না।”
মসজিদের ইমাম মাওলানা ইউসুফ বলেন, ঐতিহ্যের সাক্ষী হিসেবে টিকে থাকা মসজিদটিতে এখন শুধুই অযত্ন আর অবহেলার ছাপ। মসজিদের দেয়ালের কিছু কিছু অংশের পলেস্তারা ধসে পড়ছে। শুক্রবার জুম্মা এবং পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় হয়। দেশের নানা প্রান্ত থেকে অনেকেই এই মসজিদটি দেখতে আসেন। মসজিদের পুরোনো নকশা অক্ষুণ্ণ রেখে সংস্কার প্রয়োজন।”
মির্জাগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, “পুরোনো যেকোনো কিছু আমাদের কাছে ঐতিহ্য বহন করে। প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসেবে আমাদের কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। খোঁজ-খবর নিয়ে মসজিদটি সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হবে।”