ঢাকার কেরানীগঞ্জে রূপালী ব্যাংকের জিঞ্জিরা শাখায় ডাকাতদলের হাতে জিম্মি ব্যাংক কর্মকর্তাদের উদ্ধার করা হয়েছে। এসময় ৩ ডাকাত অগ্নেয়াস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করে।
বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ঘটনাস্থলে উপস্থিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর এক কর্মকর্তা এ তথ্য জানান।
এর আগে দুপুর দুইটার দিকে ব্যাংকটিতে ডাকাতদের হানা দেওয়ার খবর পেয়ে দ্রুত ব্যাংকটি বাইরে থেকে ঘিরে ফেলে র্যাব, পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা।
কয়েক ঘণ্টা ধরে ডাকাতদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। পরে জিম্মিদের উদ্ধারে পদক্ষেপ শুরু করে যৌথবাহিনী। বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিনটি গাড়িতে করে ব্যাংকটি থেকে জিম্মি ও ডাকাতদের নিয়ে বের হতে দেখা যায়। ব্যাংকের শাখাটিতে গ্রাহক ও গ্রাহকসহ ১০-১২ জন জিম্মি ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়।
স্থানীয় ও প্রত্যক্ষদর্শীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ডাকাত দলের সদস্যরা চিরকুটের মাধ্যমে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের কাছে নিজেদের মোবাইল নম্বর দিয়েছিলেন। সেই নম্বরের মাধ্যমে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে যৌথবাহিনী।
যৌথবাহিনীর পক্ষ থেকে ডাকাত দলের সদস্যদের সঙ্গে আলোচনা করে তাদের আত্মসমর্পণে রাজি করানো হয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্যরা জানালা দিয়ে অস্ত্র সমর্পণ করে। একটি বন্দুক জানালা দিয়ে ফেলা হয়। বাকি অস্ত্র ব্যাগে ভরে বাইরে ফেলে দেয় ডাকাত দলের সদস্যরা।
পরে একে একে তারা ব্যাংকের বাইরে বেরিয়ে আসে। তখন আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তিন ডাকাত সদস্যকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায়। ডাকাতদের কাছ থেকে ৩টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করে যৌথবাহিনী।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ডাকাতির সময় ব্যাংকের ভল্ট ডাকাতরা ভাঙতে পারেনি। তাছাড়া জিম্মিরা সবাই অক্ষত রয়েছেন।
এর আগে দুপুর ২টার দিকে ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের চুনকুটিয়া এলাকার রূপালী ব্যাংকের জিনজিরা শাখায় সংঘবদ্ধ ডাকাতরা হানা দেয়। ব্যাংকের কর্মকর্তাদের জিম্মি করে ফেলে।
খবর পেয়ে সেনাবাহিনী, পুলিশ, র্যাবসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা ব্যাংকটির আশপাশের এলাকা ঘিরে রাখে। ব্যাংকের ভেতরে জিম্মি অবস্থায় ছিলেন শাখার ব্যবস্থাপক শেখর মণ্ডলসহ আট কর্মকর্তা–কর্মচারী।
বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম তথ্য নিশ্চিত করেন, ব্যাংকের ভেতরে দুই থেকে তিনজন ডাকাত অবস্থান করছেন। এমন উত্তেজনাকর পরিস্থিতিতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা কেটে যায়।
স্থানীয়রা জানান, ব্যাংকে ডাকাত দলের হানা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর উৎসুক জনতা সেখানে ভিড় করেন। নিরাপত্তার স্বার্থে ব্যাংক–সংলগ্ন মূল সড়কের উভয় পাশের যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া ডাকাত দলকে আত্মসমর্পণ করার জন্য পাশের মসজিদের মাইক থেকে ঘোষণা দেওয়া হয়। তবে ডাকাত দলের পক্ষ থেকে আত্মসমর্পণ ও তাদের কোনো দাবি দাওয়ার বিষয়ে বার্তা পাওয়া যাচ্ছিল না। এ সময় এলাকাবাসী ব্যাংকটির চারপাশ ঘেরাও করে প্রবেশের প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দেন।
এসময় ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার আহম্মদ মুঈদ, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ রাজস্ব সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) রইছ আল রেজওয়ানসহ র্যাব ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
সাড়ে তিন ঘণ্টার উত্তেজনাকর পরিস্থিতির অবসান হলে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে ব্যাংকটি থেকে জিম্মি ও ডাকাতদের নিয়ে বের হতে দেখা গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের। এসময় ডাকাতদলের তিনজন আত্মসমর্পণ করে। তাদের আটক করে একটি সাদা মাইক্রোবাসে করে ব্যাংক থেকে নিয়ে যাওয়া হয়।
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা জানিয়েছেন, ডাকাতির সময় ব্যাংকের ভল্ট ডাকাতরা ভাঙতে পারেনি। তাছাড়া জিম্মিরা সবাই অক্ষত রয়েছেন।