পাবর্ত্য জেলা খাগড়াছড়ির দীঘিনালায় বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) রাতে পাহাড়ি ও বাঙালির সংঘর্ষ ও গোলাগুলির ঘটনা ঘটেছে। একইসঙ্গে জেলা সদরে রাতভর ঘটেছে গোলাগুলির ঘটনা। এতে সদরসহ পুরো জেলায় ছড়িয়ে পড়ে আতঙ্ক।
গোলাগুলি ও সংঘর্ষের ঘটনায় ৩ জন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- জুনান চাকমা (২০), ধনঞ্জয় চাকমা (৫০) ও রুবেল চাকমা (৩০)। ধনঞ্জয় চাকমা দীঘিনালায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সংঘর্ষে মারা যান। অপর দুজনকে আহত অবস্থায় রাতে খাগড়াছড়ি সদর থেকে হাসপাতালে আনা হয়। পরে মৃত্যু হয়। আহতদের মধ্যে রয়েছে সোহেল চাকমা, মানব ত্রিপুরা, বিজয় চাকমা ও নলেজ চাকমা।
খাগড়াছড়ি সদর হাসপাতালের আরএমও রিপল বাপ্পি চাকমা জানান, রাতে আহত অবস্থায় হাসপাতালে ১৬ জনকে আনা হয়। এর মধ্যে তিনজন মারা যান। বর্তমানে আরও ৯ জন চিকিৎসাধীন। রাতেই চারজনকে উন্নত চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে একজন বাঙালি।
রাঙামাটিতে ১৪৪ ধারা
খাগড়াছড়ির সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনার উত্তাপ ছড়িয়ে পড়েছে পাশের পার্বত্য জেলা শহর রাঙামাটিতে। শুক্রবার (২০ সেপ্টেম্বর) সকালে শহরের জিমনেসিয়াম চত্বর থেকে কয়েক হাজার পাহাড়ি মিছিল বের করে। মিছিলটি শহরের বনরূপায় গেলে পাহাড়ি ও বাঙালির মধ্যে ব্যাপক সংঘর্ষ হয়। এতে একজনের মৃত্যু হয়।
স্থানীয়রা জানায়, সংঘর্ষের সময় কয়েকটি ধর্মীয় স্থাপনায় হামলা চালানো হয়। একই সঙ্গে রাস্তায় চলাচলকারী প্রচুর যানবাহন ভাঙচুর করা হয়। পাহাড়িদের প্রতিরোধ করতে লাঠিসোঠা নিয়ে মাঠে নামে বাঙালিরাও।
পাল্টা হামলায় ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় কাঠালতলীতে অবস্থিত মৈত্রী বিহার। আগুনে পুড়িয়ে দেয়া হয় বনরূপায় পাহাড়িদের মালিকানাধিন সাজান দুটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। রাঙামাটি সদর জেনারেল হাসপাতালে দায়িত্বরত চিকিৎসক ডা. সাদিয়া আক্তার জানান, এখন পর্যন্ত অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছে। এছাড়া একজন মারা গেছেন। তবে তার পরিচয় এখনো জানা যাযনি।
পরে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ১৪৪ ধারা জারি করে জেলা প্রশাসন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে মাঠে নেমেছে পুলিশ, বিজিবি ও সেনা সদস্যরা। জেলা প্রশাসক মো. মোশারফ হোসেন খান জানান, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পৌর এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর) খাগড়াছড়ির নিউজিল্যান্ড এলাকায় চুরির অভিযোগে মামুন নামে এক যুবককে পিটিয়ে হত্যার অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল বের করে দীঘিনালা ডিগ্রি কলেজের শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ মিছিলটি লারমা স্কয়ারের দিকে যাওয়ার সময় পাহাড়িরা বাধা দিলে সংঘর্ষের সূত্রপাত হয়।
পরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে লারমা স্কয়ারে দোকানপাট ও বসত বাড়িতে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে পুড়ে যায় অন্তত ৫০/৬০টি দোকান। নিহত হয় তিনজন। দীঘিনালার সেই সংঘাতের জের ধরে রাঙামাটিতে শুক্রবার সকাল থেকে শুরু হয় উত্তেজনা। এক পর্যায়ে পাহাড়ি ও বাঙালি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা ভাঙচুর হয়। এতে রণক্ষেত্র পরিণত হয় রাঙামাটি জেলা শহর।