চুয়াডাঙ্গায় তীব্র তাপদাহে দুই দিনে তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি আছে অনেকেই।
রোববার (২১ এপ্রিল) দুপুরে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় নির্মাণশ্রমিক সিদ্দীক আলীর। দামুড়হুদা উপজেলার পুরাতন বাস্তপুর গ্রামের সিদ্দীক আলী (৪৫) দুই দিন ধরে চুয়াডাঙ্গা শহরে রড মিস্ত্রীর কাজ করছিলেন। শুক্রবার (১৯ এপ্রিল) তিনি তীব্র গরমে ডায়রিয়া আক্রান্ত হয়ে প্রচণ্ড অসুস্থ হয়ে পড়েন। এরপর শনিবার রাতে তাকে চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে রোববার দুপুর ১টার দিকে তার মৃত্যু হয়।
সিদ্দীক আলীর ভাই সিরাজ মাস্টার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে শনিবার (২০ এপ্রিল) ৪২ দশমিক ৩ ডিগ্রি তাপদাহের দিন চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলা হিটস্ট্রোকে এক যুবক ও এক নারীর মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার বিকেল ৩টার দিকে তীব্র তাপমাত্রায় হিটস্ট্রোকে দামুড়জুদা উপজেলা সদরে মর্জিনা খাতুন (৬০) নামে এক নারী মারা যান।
নিহত মর্জিনা খাতুন উপজেলা সদরের ইউনিয়ন পরিষদ পাড়ার আজম উদ্দীনের স্ত্রী।
নিহত মর্জিনা খাতুনের ছেলে কামরুল ইসলাম কামু বলেন, “বেলা ৩টার দিকে অতিরিক্ত তাপে আমার মা (মর্জিনা খাতুন) হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়েন। এসময় আমরা তাকে দামুড়হুদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়ার জন্য অটোভ্যানে উঠানোর সঙ্গে সঙ্গে মা মারা যান।”
এর আগে শনিবার সকাল ৭টার দিকে মাঠে কৃষিকাজ করতে গিয়ে প্রচণ্ড গরমে স্ট্রোক করেন সীমান্তবর্তী ঠাকুরপুর গ্রামের জাকির হোসেন (৩৬)। এরপর হাসপাতালে নেওয়ার পথে সকাল ৮টার দিকে তিনি মারা যান।
গত কয়েকদিন ধরে চুয়াডাঙ্গার ওপর দিয়ে বয়ে যাচ্ছে মাঝারি থেকে তীব্র ও অতি তীব্র তাপদাহ। এই তাপদাহে জেলায় হিট এলাট জারি করে মাইকিং করা হচ্ছে এক সপ্তাহ থেকে।
চুয়াডাঙ্গা প্রথম শ্রেণির আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ইনচার্জ জামিনুর রহমান জানান, রোববার এ জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৪২ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত এক সপ্তাহ ধরে জেলায় দেশের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা বিরাজ করছে। হিট অ্যালার্ট জারি আছে। এর মধ্যে তাপমাত্রার পারদ সর্বোচ্চ ৪২ দশমিক ৩ উঠে গেছে। এপ্রিল মাসজুড়েই এ অবস্থা থাকবে। তাপমাত্রা আরও বাড়তে পারে।
চুয়াডাঙ্গা সিভিল সার্জন ডা. সাজ্জাৎ হাসান মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “আজ পর্যন্ত এ জেলায় হিটস্ট্রোক ও ডায়রিয়ায় তিনজনের মৃত্যু হয়েছে। এই মুহূর্তে সবাইকে স্বাস্থ্য বিভাগের দেওয়া বার্তাগুলো মেনে চলার আহ্বান করছি।”
চুয়াডাঙ্গা জেলা প্রশাসক ড. কিসিঞ্জার চাকমা বলেন, “রোববার দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার একটি মিটিং করেছি। সবাইকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। যেহেতু হিটস্ট্রোক হচ্ছে, সেহেতু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। সেইসঙ্গে সবার যে অবলম্বন, বিশেষ করে কৃষি, গবাদি পশু-পাখির প্রতি যত্নশীল হতে হবে।”
কিসিঞ্জার চাকমা আরও বলেন, “আবহাওয়ার অধিদপ্তর থেকে যে তথ্য ও নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, সে অনুযায়ী মাইকিং করা হচ্ছে।”