• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫, ২৭ মাঘ ১৪৩০, ১২ শা'বান ১৪৪৬

৩ ঘণ্টা অচল ট্রেন, পাবনাবাসীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ যাত্রী-স্টাফরা


আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, পাবনা
প্রকাশিত: ফেব্রুয়ারি ১০, ২০২৫, ০২:৫৭ পিএম
৩ ঘণ্টা অচল ট্রেন, পাবনাবাসীর আতিথেয়তায় মুগ্ধ যাত্রী-স্টাফরা

চলন্ত ট্রেন আকষ্মিকভাবে বিকল ইঞ্জিন। আশেপাশে স্টেশন নেই। বিকল্প আরেকটি ইঞ্জিন এসে ট্রেন সচল করতে প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা সময় লাগবে। এত দীর্ঘ সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে ক্ষুধার যন্ত্রণায় অস্থির যাত্রী ও ট্রেনের স্টাফরা। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধরা পড়েছেন মহাবিপাকে। তাদের এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে আসেন এলাকাবাসী। যার ঘরে যা রান্না করা খাবার ছিল তাই দিয়ে সবার ক্ষুধা নিবারণ করেন।

এমনই এক অবিস্মরণীয় মানবিক ঘটনার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পাবনার সাঁথিয়া উপজেলার তাঁতীবন্ধ এলাকার মানুষ। রোববার (৯ ফেব্রুয়ারি) বেলা ১১টার দিকে এ দৃশ্যের অবতারণা হয়।

পাকশী পশ্চিমাঞ্চল বিভাগীয় রেলওয়ের টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু জানান, পাবনার বেড়া উপজেলার ঢালারচর থেকে রাজশাহী হয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ রুটে চলাচল করে ঢালারচর এক্সপ্রেস। রোববার সকাল ৭টার দিকে ট্রেনটি ঢালারচর থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করে। পথিমধ্যে সকাল ৮টা ৫ মিনিটে সাঁথিয়ার রাজাপুর স্টেশন পার হওয়ার পরে হঠাৎ ট্রেনের ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। পরে ঈশ্বরদী থেকে বিকল্প ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছে পুনরায় ট্রেনটি চালু করতে বেলা ১১টা ৪০ মিনিট বেজে যায়।

মাঝখানে সকাল ৮টা থেকে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত এই সাড়ে তিন ঘন্টা সময় ট্রেনে বসে থাকতে গিয়ে অস্থির হয়ে ওঠেন যাত্রীরা। আশপাশে স্টেশন বা দোকানপাট কিছু ছিল না। ট্রেনের স্টাফসহ অনেক যাত্রী ক্ষুধায় তৃষ্ণায় অতিষ্ট হয়ে পড়েন। বিশেষ করে শিশু ও বৃদ্ধদের নিয়ে বেশি বিপাকে পড়েন স্বজনরা।

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু বলেন, ট্রেনের যাত্রী আর স্টাফদের এমন করুণ অবস্থা দেখে এগিয়ে আসেন রেললাইন থেকে কিছু দূরে বসবাসকারী মানুষগুলো। বিনা স্বার্থে যার যা সামর্থ্য ছিল, যার ঘরে যা রান্না করা খাবার ছিল, তাই দিয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।

বাড়ি থেকে গৃহবধূরা খাবার নিয়ে ট্রেনের কাছে পৌঁছান। কারও হাতে ছিল ভাত-ডাল, কারও হাতে খিচুরি, কারও হাতে রুটি-সবজি, আবার কারও হাতে পানি। এর মাঝেই কেউবা তখন আবার কিছু রান্না করে নিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব। বৃদ্ধ ও শিশুদের প্রতি তাদের নজর ছিল বেশি। তাদের খাবার পানিতে শান্তি পায় সবাই।

টিটিই আব্দুল আলিম মিঠু তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, “তাদের এমন মানবিক দৃষ্টান্ত আমি কোথাও দেখিনি। ওইসব মানুষগুলোর পরিবার দেখে মনে হয়েছে দিন এনে দিন খাওয়ার মতো। অথচ কীভাবে তারা মানুষের কষ্টে পাশে দাঁড়াল। পাবনার মানুষ যে কতটা আত্মিক আর অতিথি পরায়ন তা আবারও প্রমাণ হলো।”

তাঁতীবন্দ গ্রামের বাসিন্দা আবেদ আলী বলেন, “আমি যখন দেখলাম স্টেশনের বাইরে হঠাৎ ট্রেনটা অনেক সময় দাঁড়িয়ে আছে। কাছে গিয়ে দেখি অনেকে পানির জন্য, কেউবা খাবারের কষ্ট পাচ্ছে। আশপাশে কোনো দোকানপাট ছিল না। তখন আশপাশের সবাইকে সাধ্যমতো খাবার পানি নিয়ে আসতে বলি। এভাবেই সব হয়েছে।”

হালিমা খাতুন নামের এক গৃহবধূ বলেন, “মানুষের কষ্ট দেখে কী ভাল লাগে কন তো। যেহেনে টেরেন থামিছিল সেহান থেকে কিছুদূর আমার বাড়ি। মেলাক্ষণ টেরেন দাঁড়ায় ছিল। মেলা মানুষ। আগায় যায়ে দেহি কেউ পানি খুঁজতিছে, কেউ কিছু খাওয়ার তা খুঁজতিছে। তহন বাড়িত যায়া পানি আর ভাত-ডাইল ছিল, সেগুলাই লিয়ে দিছি। আমার নিজেরও ভাল লাগিছে।”

মানিক হোসেন নামের এক ট্রেন যাত্রী বলেন, “চিকিৎসার জন্য রাজশাহী যাচ্ছিলাম ওই ট্রেনে। হঠাৎ ইঞ্জিন খারাপ হওয়ায় ট্রেন বন্ধ হয়ে যায়। একদিকে সকালে বের হয়েছি ট্রেন ধরতে। তারপর বেলা গড়াতে গড়াতে প্রচণ্ড ক্ষুধা আর তৃষ্ণায় অস্থির লাগা শুরু করে। কিন্তু রেললাইনের আশপাশের মানুষগুলো যেভাবে সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা সত্যি অভূতপূর্ব।”

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!