• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
ক্ষতি ৫৮৬ কোটি টাকা

২ সড়ক প্রকল্পের বিলাসিতায় ডুবল কক্সবাজার


কক্সবাজার প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৪, ২০২৪, ১০:০০ পিএম
২ সড়ক প্রকল্পের বিলাসিতায় ডুবল কক্সবাজার
টানা বৃষ্টিতে রাস্তা তলিয়ে গেছে। ছবি : সংগৃহীত

পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত ও পর্যটন শহর কক্সবাজার ডুবেছে ৫৮৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নেওয়া দুই সড়ক প্রকল্পের কারণে। বিশেষ করে পর্যটন জোন হিসেবে পরিচিত কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকার ভয়াবহ জলাবদ্ধতায় বিস্মিত সবাই। দুই দিনের টানা অতি ভারী বর্ষণের কারণে হওয়া জলাবদ্ধতার যে চিত্র শহরবাসী দেখেছেন, তা গত ৫০ বছরে কেউ দেখেননি।

সূত্রমতে, গেল তিন মাসে চার চারবার ভয়াবহ জলাবদ্ধতার কবলে পড়ল পর্যটন শহর কক্সবাজার। নজিরবিহীন এই জলাবদ্ধতার পেছনের কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা চিহ্নিত করেছেন দুটি সড়ক নির্মাণ প্রকল্পকে। যে প্রকল্প গ্রহণের ফলে শহরের পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ভেঙে পড়ে। পানি বের হতে না পারায় জমে উঠে সয়লাব হয়ে যায় গোটা এলাকা।  

এ ব্যাপারে কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্টহাউস মালিক সমিতির সভাপতি আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “ভারী বর্ষণ হলেই হোটেল-মোটেল জোনে ভয়ঙ্কর জলাবদ্ধতা দেখা দিচ্ছে। এজন্য দায়ী মূলত চারলেনের সড়ক নির্মাণ। সড়কটি নির্মাণের সময় এটিকে আগের চেয়ে অস্বাভাবিক উঁচু করা হয়েছে এবং নালার অংশ ছোট করে ফেলা হয়েছে।”

দুই সড়ক। ছবি : সংগৃহীত

আবুল কাশেম সিকদার বলেন, “নালার ওপর স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে দেওয়ায় সড়কের পানি নালা দিয়ে বের হতে পারছে না। এছাড়া পাহাড় কাটার ফলে মাটি নেমে এসে নালা ভরাট হয়ে গেছে। যা পরিষ্কার করার সুযোগ রাখা হয়নি। ফলে বৃষ্টির পানি দ্রুত সাগর বা নদীতে নামতে না পারায় সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।”

জলাবদ্ধতার জন্য একই কারণ ব্যাখ্যা করে কক্সবাজার চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি আবু মোর্শেদ চৌধুরী খোকা বলেন, “সড়ক নির্মাণই জলাবদ্ধতার প্রধান কারণ। অপরিকল্পিতভাবে সড়কগুলো অস্বাভাবিক উঁচু করা এবং স্ল্যাব দিয়ে ঢেকে ফেলার ফলে পানির নিষ্কাশন ব্যবস্থা নষ্ট হয়ে গেছে।”

প্রাপ্ত তথ্যমতে, শহরের লাবণীর মোড় থেকে কলাতলী-লিংক রোড পর্যন্ত চার লেনের সড়কটি নির্মাণ করেছে কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগ। ২০১৯ সালে শুরু হওয়া এ সড়কটি উদ্বোধন হয় ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর। আট কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়ক প্রকল্পের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। 
কক্সবাজার সড়ক ও জনপদ বিভাগের তথ্যমতে, মাঝখানে ১০ ফুট ডিভাইডার, দুপাশে ছয় ফুট করে ড্রেনসহ সড়কটি প্রশস্ত হয়েছে মোট ৭১ ফুট। খবর টিবিসির।

অন্যদিকে, কক্সবাজার শহরের প্রধান সড়কের সংস্কার প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। ২৯৮ কোটি টাকার এ প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১৯ সালের জুলাই মাসে এবং উদ্বোধন হয় ২০২২ সালের ডিসেম্বরে।

মোটেল লাবণী মার্কেটের ব্যবসায়ী সিফাত জানান, গত তিন মাসে চারবার তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। সড়কের নালা বন্ধ থাকায় পানি নিষ্কাশনের কোনো উপায় নেই।

সর্বশেষ শুক্রবারের (১৩ সেপ্টেম্বর) ভারী বৃষ্টিতে ডুবে যায় কলাতলীর হোটেল-মোটেল এলাকার সকল সড়ক, সৈকত সংলগ্ন এলাকা এবং মার্কেট এলাকা। একই সঙ্গে কক্সবাজার শহরের পাঁচ কিলোমিটার প্রধান সড়কও পানিতে তলিয়ে যায়। সড়কের বাজারঘাটা, বড়বাজার, এন্ডারসন সড়ক, টেকপাড়া, বার্মিজ মার্কেট এবং বৌদ্ধমন্দির সড়কসহ বিভিন্ন স্থানের দোকানপাট, অফিস এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে বৃষ্টির পানি জমে যায়। ফলে হাজারো ঘরবাড়ি পানিতে তলিয়ে গেছে।

কক্সবাজার বাঁচাও আন্দোলনের সভাপতি ও জ্যেষ্ঠ আইনজীবী আয়াছুর রহমান বলেন, “লাবণীর মোড় থেকে কলাতলী হয়ে লিংক রোডের মতো শহরের প্রধান সড়কও একই ধরনের জলাবদ্ধতার শিকার। প্রধান সড়কটি সংস্কারে তিন বছরের বেশি সময় লেগেছে। সড়কটি আগের অবস্থার চেয়ে প্রায় তিন ফুট উঁচু করা হয়েছে, ফলে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও মার্কেটগুলো নিচু হয়ে পড়েছে। নালাগুলো ময়লায় ভরে যাওয়ায় পানি নিষ্কাশনের সুযোগ নেই, যার কারণে পুরো শহরজুড়ে জলাবদ্ধতা দেখা দিয়েছে।”

কক্সবাজার আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, শুক্রবার থেকে শনিবার পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ২১০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগে বৃহস্পতিবার থেকে শুক্রবারের মধ্যে ৫০১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়, যা কক্সবাজারের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। তার আগে ২০১৫ সালের আগস্ট মাসে ৪৩৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছিল।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!