ইতালি যাওয়ার আশায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে এক বছর তিন মাস ধরে নিখোঁজ রয়েছেন ১৩ বাংলাদেশি যুবক।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার (১৮ জুলাই) নেত্রকোনা মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করা হলে বিষয়টি জানাজানি হয়।
নিখোঁজ প্রত্যেকের বাড়ি নেত্রকোনার কলমাকান্দা উপজেলায়। তারা হলেন কলমাকান্দা উপজেলার ফকির-চান্দুয়াইল গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে মো. আলমগীর, হাসিম মিয়ার ছেলে সালমান মিয়া, মিরাজ আলীর ছেলে আবুল কাশেম, আব্দুল জলিলের ছেলে শাহীন মিয়া, আওয়াল মিয়ার ছেলে কালাম মিয়া, আব্দুর রশিদের ছেলে রাকিব মিয়া, আবু তাহেরের ছেলে নজরুল ইসলাম, মহর আলীর ছেলে মাসুম মিয়া, খলিল মিয়ার ছেলে আলমগীর হোসেন, আব্দুল খালেকের ছেলে সোহাগ মিয়া, আব্দুল হামিদের ছেলে ফিরুজ মিয়া, কাছম আলীর ছেলে সেলিম মিয়া এবং আশ্রব আলীর ছেলে মান্নান মিয়া।
নিখোঁজদের পরিবার সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ মার্চ দালালের মাধ্যমে সাড়ে সাত লাখ করে টাকা দিয়ে লিবিয়া যান তারা। শুরুতে কয়েক দিন তাদের সঙ্গে পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ থাকলেও গত বছরের ২১ এপ্রিল থেকে আর হদিস মিলছে না।
তারা আরও জানান, লিবিয়ায় পৌঁছানোর পরপরই ভালো বেতনের প্রলোভন দেখিয়ে ইতালি পাঠানোর কথা বলে অভিভাবকদের কাছ থেকে দ্বিতীয়বার টাকা আদায় করেন দালালরা। টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের মারধর করে সেই ভিডিও পরিবারের কাছে পাঠানো হয়। সেই সঙ্গে বিক্রি করে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়। পরে গত বছরের ২১ এপ্রিল থেকে তাদের আর হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। ওই যুবকেরা এখন জীবিত না কি মৃত, সেই খবরও জানেন না পরিবারের সদস্যরা।
এ ঘটনায় নিখোঁজ যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে নেত্রকোনা মানব পাচার ট্রাইব্যুনালে ১৮ জুলাই একটি মামলা করা হয়। এতে লিবিয়াপ্রবাসী আদম ব্যবসায়ী ইব্রাহিম হোসেন (৫০), স্থানীয় দালাল মো. জামাল মিয়াসহ (৩৫) ১০ জনকে আসামি করা হয়।
নিখোঁজ মো. আলমগীরের মা রহিমা, সালমান মিয়ার বাবা হাসিম মিয়াসহ কয়েকজন বলেন, “এলাকার পাঁচকাটা গ্রামের আদম ব্যবসায়ী লিবিয়াপ্রবাসী ইব্রাহিম হোসেন ও স্থানীয় বাজারের ব্যবসায়ী জামাল মিয়ার মাধ্যমে লিবিয়া যান ওই ১৩ যুবক। এ জন্য জনপ্রতি ৭ লাখ ৩৫ হাজার করে টাকা দালালের হাতে তুলে দেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে আবারও ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা করে নেওয়া হয়। টাকা না দেওয়ায় দু-তিনজনের হাত-পা বেঁধে মারধরের ভিডিও পাঠানো হয় স্বজনদের কাছে। এরপর গত বছরের ২১ এপ্রিল থেকে তাঁদের আর কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা আমাদের সন্তানদের ফিরে পেতে চাই। সেই সঙ্গে দালালদের বিচার চাই।”
এ বিষয়ে জানতে আদম ব্যবসায়ী ও লিবিয়াপ্রবাসী ইব্রাহিম হোসেনের মোবাইল ঢোনে একাধিকবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। তবে তার বাড়ি উপজেলার পাঁচকাটা গ্রামে গেলে স্বজনেরা জানান, ইব্রাহিম দীর্ঘদিন পরিবারের কারও সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন না।
মামলার আইনজীবী মোহাম্মাদ ওয়াদুদ মিয়া বলেন, মঙ্গলবার আদালতে মামলা করা হয়েছে। মামলাটি আদালত আমলে নিয়েছেন। বৃহস্পতিবার (২০ জুলাই) মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব কাকে দেওয়া হবে, তা জানানোর কথা ছিল। কিন্তু সেদিন আদালত তা জানাননি। রোববার (২৩ জুলাই) এ বিষয়ে আদালত নির্দেশনা দিতে পারেন।
কলমাকান্দা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম বলেন, “ঘটনাটি শুনেছি। তবে এ বিষয়ে থানায় কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”