• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

লিবিয়ায় জিম্মি সাতক্ষীরার ১০ যুবক, কারাগারে ২০


সাতক্ষীরা প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৩, ২০২৩, ০৮:৩৭ পিএম
লিবিয়ায় জিম্মি সাতক্ষীরার ১০ যুবক, কারাগারে ২০

ইতালি যাওয়ার আশায় দালালের মাধ্যমে লিবিয়া গিয়ে মানব পাচারচক্রের হাতে জিম্মি হয়েছেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ১০ যুবক। মোবাইলে পরিবারের সদস্যদের কাছে কল করে মুক্তিপন চাওয়া হচ্ছে। টাকা দিতে দেরি হলে আটক যুবকদের মারধর করে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে হত্যার হুমকি দিয়ে পাঠানো হচ্ছে ভিডিও বার্তা।  

এছাড়া একই চক্রের কবলে পড়ে ইতালি যাওয়ার পথে নৌদুর্ঘটনার কারণে মাল্টা সাগর থেকে পুনরায় লিবিয়া ফিরে আসা ২০ যুবককে আটক করেছে স্থানীয় পুলিশ। লিবিয় তীরবর্তী এলাকায় নেমে পালিয়ে থাকা শাহাজান হোসেন, সালামিন গাজী ও শেখ আসমতসহ ২০ জনকে আটক করে পুলিশ।

এছাড়া জিম্মি যুবকরা হলেন শ্যামনগর উপজেলার কৈখালী গ্রামের দেলোয়ার কয়াল, মামুন কয়াল, তারানীপুরের আবু রায়হান, বংশীপুরের মিলন, কৈখালীর আনারুল মিস্ত্রি, রহিম সরদার, মিঠু কয়াল, পুর্ব কৈখালীর জামির আলী জাম, আব্দুল কাদের ও রাসেল হোসেন।

ভুক্তোভোগী পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, শ্যামনগর উপজেলার শ্রীফলকাঠি গ্রামের হারুন অর রশিদ, তার ভগ্নিপতি মনিরুল ইসলাম এবং ধুমঘাট গ্রামের সেকেন্দার ও তাদের পরিচিত মুরাদ হোসেন মিলে সংঘবদ্ধ এ মানব পাচারচক্র গড়ে তুলেছে। স্থানীয়ভাবে সেকেন্দারসহ কয়েকজনকে দিয়ে হারুন ঢাকা এবং মনিরুল ও মুরাদ লিবিয়ায় অবস্থান করে সিন্ডিকেট পরিচালনা করছে।

শুরুতে ৮ থেকে ১০ লাখ টাকায় সাগর পথে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুবকদের তারা লিবিয়া নিয়ে যান। পরে ভালো নৌযানে তুলে দেওয়াসহ বিভিন্ন অজুহাতে আরও দুই থেকে তিন লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়। একই সঙ্গে অনেককে তারা লিবিয় সন্ত্রাসীদের কাছে বিক্রি করে দেয়।

ভুক্তোভোগী পরিবারগুলোর অভিযোগ, নির্বিঘ্নে ইতালি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে হারুন ও সেকেন্দার তাদের কাছ থেকে ৮ থেকে ১০ লাখ পর্যন্ত টাকা নিয়ে যায়। ছেলেকে লিবিয়া নিয়ে গেলেও দীর্ঘ সাত মাসেও তাদের ইতালি পৌঁছে দিতে পারেনি। বরং নানা বিপদ ও সমস্যার কথা বলে কয়েকধাপে আরও দেড় থেকে দুই লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।  

সালামিন হোসেনের বাবা আবু জাফর জানান, জমি বন্ধকের তিন লাখসহ কয়েকজনের কাছ থেকে চড়া সুদে পাঁচ লাখ টাকা নিয়ে মোট ৮ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। অথচ ইতালি ঢুকতে পারা তো দুরের কথা তার ছেলে গত এক মাসেরও বেশি সময় ধরে লিবিয়ায় কারাগারে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

অপর কারাবন্দী শাহাজানের বাবা নূর আমিন জানান, জমি বিক্রি করে হারুনের কথায় পড়ে ছেলেকে ইতালি পাঠানোর চেষ্টা করেছিলেন। কারাবন্দী হওয়ার পর থেকে তাকে ছাড়ানোর অজুহাতে হারুনের লোকজন বারবার লাখ টাকা দাবি করছে। কয়েকদিন ধরে ফোনও রিসিভ করছে না।

জিম্মি যুবকদের পরিবারের পক্ষ থেকে অভিযোগ করা হচ্ছে মানব পাচারকারী চক্রের প্রধান হারুন ও তার ভগ্নিপতি মনিরুল লিবিয়ায় মামুন, দেলোয়ার, আবু রায়হান, মিলন, আনারুল, আব্দুর রহিম, মিঠু, ও জামির আলী জামুকে আটকে রেখেছে। তিন দফায় সাড়ে ১৩ লাখ টাকা পর্যন্ত দেওয়ার পরও আরও টাকা দাবি করে তাদের নির্যাতন করা হচ্ছে।

মামুন কয়ালের বাবা জাহার আলী কয়াল জানান, প্রায় এক মাস আগে আরও ৯ যুবকের সঙ্গে তার ছেলে পরিবারের কাছে একটি ভিডিও বার্তা পাঠায়। সামনে দাড়িয়ে ধারণকৃত সেই ভিডিওতে বাড়ি থেকে ‘টাকা পাঠাও, টাকা পাঠাও’- এমন আকুতি মিনতি করতে দেখা যায় মামুনসহ অন্যদের।

জাহার আলী আরও জানান, ওই ভিডিও এলাকায় প্রচার হলে পাচারচক্রের সদস্যরা বেকায়দায় পড়ে জিম্মি যুবকদের দিয়ে নুতন একটি ভিডিও তৈরি করে পরিবারের কাছে পাঠায়। সেখানে চোখে-মুখে আতঙ্ক নিয়ে মামুনসহ অন্যদের বলতে দেখা যায় ‘সাংবাদিক ভাইয়েরা কোনো নিউজ করবেন না, আমরা ভালো আছি’। তবে মামুন ও তার এক সঙ্গীর মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে গত সোমবার নতুন করে পাঠানো ভিডিওতে আবারও মামুনসহ অন্যদের টাকা চাইতে দেখা যায়।

জিম্মি রাসেলের বাবা আব্দুর রশিদ জানান, জিম্মি হওয়া যুবকদের মুক্ত করার কথা বলে গত বুধবার প্রত্যেকের পরিবারের নিকট থেকে হারুন ও তার লোকজন মাথাপিছু এক লাখ করে টাকা আদায় করেছে। হারুনের বোন ও তার ভগ্নিপতি মনিরুলের ভাই সেকেন্দারের বিকাশে এসব টাকা নিচ্ছে।

এসব বিষয়ে প্রধান অভিযুক্ত হারুন অর রশিদ জানান, কয়েকজনকে গত মাসে নৌকায় তুলে দিলেও মাল্টা সাগর উত্তাল থাকায় তারা ফিরে আসে। যাদের মধ্যে কারাগারে থাকা তিনজনসহ ১৭ জনকে মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

হারুনের লোকজন কাউকে জিম্মি করেনি দাবি করে বলেন, তার ভগ্নিপতি মনিরুলের আস্তানা থেকে পালিয়ে যাওয়া কয়েকজন লিবিয় সন্ত্রাসীদের হাতে আটক হয়েছে। সেই সন্ত্রাসীরা এখন মুক্তিপন চাইছে। সেখান থেকে তাদের মুক্ত করার চেষ্টা চলছে।

শ্যামনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবুল কালাম আজাদ জানান, বিষয়টি নিয়ে ভুক্তোভোগীদের কেউ থানায় অভিযোগ করেনি।

Link copied!