মহাষষ্ঠীর মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা। এবারে পূজাকে আনন্দঘন ও পূর্ণতা দিতে নানা আয়োজন করছেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। পাঁচ দিনের এই উৎসবে হিন্দুদের নানা উপকরণে পূজিত হন দেবী দুর্গা। তবে এ বছর পূজার সামগ্রীর দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন ভক্তরা।
শুক্রবার (২০ অক্টোবর) সকালে কুড়িগ্রামের পুরাতন জিয়া বাজার ও নতুন শহরের পৌর বাজারে গিয়ে দেখা যায়, প্রতি জোড়া নারকেল ২২০ থেকে ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। অথচ মাসখানেক আগে প্রতি জোড়া নারকেল ১৯০ থেকে ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ ছাড়া ৯০ টাকা দরের গুড় কেজি প্রতি ১৪০ টাকা, ৮০ টাকার খই ১২০ টাকা, ৫০ টাকার চিড়া ৬০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে চিনি ও মুড়ির দাম স্বাভাবিক রয়েছে।
অন্যদিকে পদ্মফুল প্রতি পিস ১৫-২০ টাকা করে রাখা হচ্ছে। এতে পূজার জন্য ১০৮টি পদ্মফুলের এক সেট ২ হাজার টাকারও বেশি দাম পড়ছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, জোগান কম ও চাহিদা বেশি থাকায় একটু বেশি দাম নেওয়া হচ্ছে।
বাড়তি দামের কারণে বিভিন্ন মণ্ডপ ও মন্দিরের পূজারিরা চাহিদার তুলনায় সীমিত পরিমাণে প্রয়োজনীয় উপকরণ কিনছেন।
পুরাতন থানা পাড়ার ত্রিনয়নী সর্বজনীন পূজামণ্ডপের সহসভাপতি শ্রী দুর্জয় দে সরকার বলেন, “পূজার মুড়কি বানাতে খই ও গুড় প্রয়োজন। যেখানে ৩-৪ কেজি নিতাম, দাম বাড়ার কারণে আজ ১ কেজি করে গুড় ও খই কিনেছি। নারুর জন্য ৩ জোড়ার পরিবর্তে ১ জোড়া নারকেল নিলাম।”
শহরের কালীবাড়ির নববাজার সর্বজনীন পূজামণ্ডপের কোষাধ্যক্ষ শ্রী জয়ন্ত আগরওয়াল বলেন, “পূজার মঙ্গলঘট ও নারু তৈরির জন্য আমাদের ২৫ জোড়া নারকেল প্রয়োজন। এটা আমাদের কিনতেই হবে। এ জন্য জোড়া প্রতি ২০ টাকা করে বাড়তি দামে আমাকে কিনতে হলো।”
মোল্লাপাড়ার সেবক সংঘ পূজা কমিটির সদস্য শ্রী সঞ্জয় সরকার বলেন, “রোববার আমাদের অষ্টমী পূজা। সেদিন ১০৮টি পদ্মফুল প্রয়োজন। গত বছর ৮৫০ টাকায় এক সেট পদ্মফুল কিনেছিলাম। এ বছর ২১০০ টাকা দিয়ে কিনতে হচ্ছে।”
কুড়িগ্রাম পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি শ্রী রবি বোস বলেন, “ঈদ বলেন আর পূজা বলেন দেশে যখনই বড় ধরনের কোনো উৎসব আসে, তখন বাজারের ব্যবসায়ীরা একধরনের সিন্ডিকেট করে জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয়। আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতাদের সেটি বাধ্য হয়েই বাড়তি দামে কিনতে হচ্ছে।”
পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানান, গাছমালিকদের কাছ থেকে বেশি দামে কিনতে হয়। সেটি খুচরা বাজারে হাত ঘুরে বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে।
কুড়িগ্রাম জিয়া বাজারের ফল ব্যবসায়ী নন্দন সাহা বলেন, “আমরা পাইকারদের কাছ থেকে ১৯০-২০০ টাকা দরে নারকেল কিনেছি। সেই তুলনায় কিছুটা বেশি দামে আমাদের বিক্রি না করলে পুরো লোকসান হবে।”
আরেক ব্যবসায়ী মো. আসুদ্দিন বলেন, “পূজা হতো আশ্বিন মাসে। এবার কার্তিক মাসে পূজা হচ্ছে। কুড়িগ্রামের যেখানে পদ্ম চাষ হতো সেসব জায়গায় পদ্ম ফুলের সিজন শেষ হয়ে গেছে। কয়েক জায়গায় পদ্ম ফুল থাকার কারণে এই বাড়তি দাম। সংকট না থাকলে কম দামে বিক্রি করতে পারতাম।”
কুড়িগ্রাম জেলায় এবার ৫৪০টি মণ্ডপে অনুষ্ঠিত হচ্ছে শারদীয় দুর্গোৎসব। যা গত বছরের চেয়ে ২৭টি বেশি। ৫৪০টি মণ্ডপের মধ্যে কুড়িগ্রাম সদরে ৭৫টি, উলিপুরে ১১৫টি, চিলমারীতে ৩৫টি, রৌমারীতে ৫টি, রাজিবপুরে ১টি, নাগেশ্বরীতে ৯৫টি, ভূরুঙ্গামারীতে ১৯টি, ফুলবাড়িতে ৭০টি এবং রাজারহাটে ১২৫টি ।