• ঢাকা
  • রবিবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৪, ২৪ ভাদ্র ১৪৩১, ৩ রবিউল আউয়াল ১৪৪৫
ভয়াল ২১ আগস্ট

‘শরীরে হাত দিয়ে দেখি তাজা রক্ত ঝরছে’


চাঁদপুর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২০, ২০২১, ১০:০৪ পিএম
‘শরীরে হাত দিয়ে দেখি তাজা রক্ত ঝরছে’

চাঁদপুরের কচুয়া উপজেলার কৃষ্ণ পাটিকরের শরীরে বিদ্ধ হওয়ার স্প্লিন্টারের যন্ত্রণা আর দাগ আজও মুছেনি।

২০০৪ সালের ২১ আগস্টে গ্রেনেড হামলায় আহত হন কচুয়া পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পাটিকর বাড়ির বাসিন্দা কৃষ্ণ পাটিকর। তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সমাবেশের ডাক দিয়ে ছিলেন। সেই ডাকে সাড়া দিয়ে সেইদিন কচুয়া থেকে কৃষ্ণ পাটিকর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আহসান হাবীব প্রাঞ্জলসহ কয়েকজন ওই সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে যোগ দিয়ে গ্রেনেড হামলায় গুরুতর আহত হন কৃষ্ণ পাটিকর। শরীরের কয়েকটি জায়গায় বিদ্ধ হয় স্প্লিন্টার। গত ১৭ বছরে স্প্লিন্টারের দাগ ও যন্ত্রণা কোনোটাই মুছেনি বলে জানান কৃষ্ণ পাটিকর।

প্রতি বছর ২১ আগস্ট আসলেই মনে পড়ে তার ওই দিনের সেই নৃশংসতার ভয়াবহ দৃশ্য।

কৃষ্ণ বলেন, “সমাবেশে ট্রাকের ওপর নির্মিত অস্থায়ী মঞ্চের খুব কাছেই ছিলাম আমরা। আমাদের নেতা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে মঞ্চে উঠিয়ে দিয়ে কাছ থেকে সরে আসি। এর ফাঁকে প্রাঞ্জল বলে ‘আমি একটু পানি খেয়ে আসি’ তারপর আর তাকে খুঁজে পাইনি। নেত্রীর বক্তব্য শুরু হওয়ার পর মনোযোগ সহকারে শুনছিলাম। বক্তব্যের শেষ পর্যায়ে হঠাৎ বিকট শব্দ শুনলাম। শব্দের সঙ্গে সঙ্গে দেখলাম আমাদের নেতা-কর্মীরা মাটিতে পড়ে আছে। আমি মনে করলাম, তারা ভয়ে মাটিতে শুয়ে পড়ছে। কিছুক্ষণ পর দেখি আমার শরীরে উষ্ণ উষ্ণ গরম লাগছে। শরীরে হাত দিয়ে দেখি তাজা রক্ত ঝড়ছে। জীবন বাঁচানোর তাগিদে তখন আমিও সবার মত ছুটাছুটি করা শুরু করলাম। আমার নেতা ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে দেখি তিনি ঘুরপাক খাচ্ছেন। মনে হয়েছে, তিনি সেখান থেকে বেরিয়ে আসার পথ খুঁজছেন। তখনও আমার শরীর থেকে অঝোরে রক্ত ঝড়ছে। নিজের চিন্তা না করে তাকে বাঁচানোর জন্য উন্মুখ হয়ে উঠি। মুহূর্তেমধ্যে দেখলাম পাশ দিয়ে একটি ভ্যান গাড়ি যাচ্ছে। গাড়িটি থামিয়ে আমার নেতাকে বাঁচাও বলে নেতাকে ভ্যান গাড়িতে উঠিয়ে পান্থপথের দিকে পাঠিয়ে দেই।”

প্রত্যেক্ষদর্শী কৃষ্ণ আরও বলেন, “আহত অবস্থায় আমি কাতরাতে কাতরাতে সামনে এগিয়ে দেখি নেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িটি পীর ইয়ামিনি মাকের্টের কাছাকাছি। নেত্রী গাড়িতে উঠার সঙ্গে সঙ্গে অপরদিক থেকে কে বা কারা নেত্রীর গাড়ি লক্ষ্য করে গুলি করছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ তাকে বেষ্টুনী দিয়ে সেখান থেকে নিয়ে যায়। নিজের জীবন বাঁচাতে ঘটনাস্থলে আমার পার্শ্ববর্তী গ্রামের মক্কা ট্র্যার্ভেলসের মালিক জামালের স্মরণাপন্ন হই। ট্র্যার্ভেলসের দরজার সামনে পৌছে আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।”

স্প্লিন্টারের দাগ ও যন্ত্রণা কোনোটাই মুছেনি উল্লেখ করে কৃষ্ণ আরও বলেন, “জ্ঞান ফিরে দেখি জামালের পার্টনার আমার রক্তাক্ত কাপড় পরিবর্তন করে দিচ্ছে। তারা আমাকে মনোয়ারা হসপিটালে নিয়ে যায়। ওইখানে গিয়ে দেখি প্রাঞ্জল ওই হসপিটালে। প্রাঞ্জল আমাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলেন। ওই সময় হাসপাতালে অনেক রোগী। করো হাত নেই, কারো পা নেই। পরে প্রাঞ্জল ডাক্তারদের ডেকে এনে আমার পায়ের এবং কোমর থেকে স্প্লিন্টার বের করে। যদিও সেই সময়ে আমি সাময়িকভাবে সুস্থ হই, কিন্তু বিগত ১৭ বছর ধরে এ যন্ত্রণা সঙ্গে নিয়ে অভাব অনটনের মধ্য দিয়ে জীবন কাটছে আমার। শরীরে বিদ্ধ হওয়া সেই স্প্লিন্টারের দাগ আজও মুছে যায়নি।”

২১ আগস্টের পর এক এক করে কৃষ্ণা পাটিকরের জীবন থেকে ১৭ বছর কেটে গেছে। কর্ম করতে না পেরে বর্তমানে কৃষ্ণা স্ত্রী, সন্তানদের নিয়ে খুবই মানবেতর জীবন যাপন করছেন। 

Link copied!