• ঢাকা
  • শনিবার, ২৩ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের দাবি

হিজাব নয়, স্কুল ড্রেস না পরার কারণে শাস্তি


নওগাঁ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: এপ্রিল ৮, ২০২২, ১০:২৫ পিএম
হিজাব নয়, স্কুল ড্রেস না পরার কারণে শাস্তি

হিজাব নয়, বরং স্কুল ইউনিফর্ম না পরার কারণে শিক্ষিকা আমোদিনী পাল তার স্কুলের শিক্ষার্থীদের শাসন করেছিলেন বলে শিকার করেছে ভুক্তভোগী ছাত্রছাত্রীরা। নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলার দাউল বারবাকপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বলে, “ঘটনার দিন আমরা স্কুলে ড্রেস পরে যাইনি, তাই ম্যাডাম আমাদের মেরেছিল। হিজাব পরার কারণে কাউকে মার দেয়া হয়নি।”

ঘটনার সত্যতা জানতে শুক্রবার (৮ এপ্রিল) সংবাদ প্রকাশের প্রতিবেদক বিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষার্থী ও শিক্ষককে প্রশ্ন করে এমন তথ্য পায়।

ছাত্রছাত্রীদের প্রশ্নের পর অভিযুক্ত সহকারী প্রধান শিক্ষক আমোদিনী পালকে প্রশ্ন করেন প্রতিবেদক। সেদিন ঠিক কী ঘটেছিল, এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমার সঙ্গে ছিলেন সহকারী শিক্ষক বদিউল আলম। বদিউল স্যার আমাকে বলেন, দেখেন আপা আমি শিক্ষর্থীদের ড্রেস পরে আসতে বলি, কিন্তু তারা আসে না। আপনে একটু মেয়েদের ড্রেসের বিষয়টি দেখেন, আমি ছেলেদের দেখছি।”

ওই শিক্ষিকা আরও বলেন, “আমি মেয়েদের নামমাত্র শাসন করেছি, বদিউল স্যার ছেলেদের শাসন করেছেন।”

ঘটনাটি ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের অপপ্রচার’ ও ‘ষড়যন্ত্রমূলক ও উদ্দেশ্যমূলক’ উল্লেখ করে আমোদিনী পাল বলেন, “এখানে বদিউল স্যারের কথা আসেনি, প্রচার হচ্ছে আমার কথা। এটি একটি পরিকল্পিত ঘটনা। এখানে হিজাবের কোনো কথা আসেনি।”

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীরা যা বললো

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী আল মোক্তাদির নামে এক ছাত্র বলে, “জাতীয় সংগীতের সময় স্কুলের ড্রেস না পরা কিছু ছেলেমেয়ে ছিল, তাদের মেরেছিল। বদিউল স্যার আগে ছেলেদের মারে।” সে আরো বলে, “এক সপ্তাহ আগে বদিউল স্যার সবাইকে স্কুল ড্রেস পরে আসতে বলেন। মেয়েদেরকেও তাই বলা হয়। তবে কিছু ছেলেমেয়ে স্কুল ড্রেস পরে আসেনি বলে শাসন করছে। সারিবদ্ধ করে দাঁড় করিয়ে তাদের মেরেছে।”

ওই শিক্ষার্থীর ভাষ্য, “বদিউল স্যার ছাত্রদের মারছে, তারপর ম্যাডাম (আমোদিনি পাল) মেয়েদের মারছে। তবে জোরে মারে নাই, একটু মারছে। হালকা, খালি শাসন করার জন্য আর কি। এখানে হিজাব পরা না-পরার কোনো বিষয় নেই। এখানে আমোদিনী ম্যাডামকে চক্রান্ত করে জড়ানো হচ্ছে।”

ভুক্তভোগী একাধিক ছাত্রী জানায়, ওই দিন স্কুল ইউনিফর্ম ঠিকমতো পরে না আসায় আমোদিনী পাল ও বদিউল আলম তাদের অনেকে শাসন করেন। কিছু মারধরও করেন। তবে হিজাব নিয়ে কোনো ঘটনা ঘটেনি।

ঘটনার আড়ালে ভিন্ন তথ্য দিলেন ওই স্কুলের আরেক শিক্ষক

পুরো ঘটনার ভিন্ন একটি তথ্য দেন একই স্কুলের সহকারী শিক্ষক শাহাদাত হোসেন রতন। তিনি বলেন, “হিজাব নিয়ে ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। এটি পরিপূর্ণ একটি রাজনীতি। আগামী মাসের (মে) ১০ তারিখে স্কুলের প্রধান শিক্ষক ধরণীকান্ত বর্মণের চাকরির মেয়াদ শেষ হবে। তারই পক্ষের তিন-চার জন শিক্ষক এই রাজনীতি করছেন।”

এই সহকারী শিক্ষকের ভাষ্য, “পদাধিকার বলে প্রধান শিক্ষকের পদটি পাওয়ার যোগ্য হলেন আমোদিনী পাল ম্যাডাম। তবে প্রধান শিক্ষকের পদটি নিতে চান ওই স্কুলের রবিউল ইসলাম। এমনকি আইন ভেঙে নিজের ছোট ভাইকে স্কুলের সদস্য করা হয়েছে। তাছাড়া, আমোদিনী ম্যাডাম প্রধান শিক্ষক হলে, ধরণীকান্ত বর্মণকে বিগত দিনের সকল হিসাব-নিকাশ দিতে হবে। সেখানে অনেক দুর্নীতি ধরা পড়বে।”

প্রধান শিক্ষক  ধরণীকান্ত বর্মণ, শিক্ষক রবিউল ইসলামের শাস্তি চেয়ে সহকারী শিক্ষক শাহাদাত হোসেন রতন আরো বলেন, “স্কুলে কোটি টাকার নিয়োগ বাণিজ্য হয়েছে। এসব ঘটনা আড়াল করতেই আমোদিনী ম্যাডামের নামে এমন মিথ্যাচার করা হচ্ছে, এবং বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করা হয়েছে। এর সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া উচিত।”

গত কয়েক দিন ধরেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়, হিন্দু ধর্মাবলম্বী শিক্ষিকা ‘হিজাব পরার কারণে’ তার শিক্ষার্থীদের মারধর করেছেন। বিভিন্ন অনলাইন মাধ্যমে সেই রকম খবরও প্রকাশ করে। তবে কিছু কিছু অনলাইন খবরটি পরে তুলে নেয়।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!