ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ঢুকে চিকিৎসাধীন এক রোগীর স্বামীকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে জখম করার মামলায় আসামিরা উচ্চ আদালত থেকে ২১ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন আগাম জামিন লাভ করেছেন।
তারা হলেন ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালের নার্স ইলা শিকদার ও দেবাশীষ নয়ন। জেলা ছাত্রলীগের সাবেক কমিটির সহ-সভাপতি ছিলেন দেবাশীষ নয়ন।
মঙ্গলবার (২২ মার্চ) ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সদর সার্কেল সুমন রঞ্জন সরকার এ তথ্য নিশ্চিত করে জানান, ওই মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে সব তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হয়েছে। শুধু মেডিক্যালের রিপোর্ট পেতে বাকি। সেটা পেলেই আদালতে চার্জশিট জমা দেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন ডা. মো. ছিদ্দীকুর রহমান বলেন, “ওই নার্স আমাকে ফোন করে আগাম জামিনের কথা জানিয়েছেন। তবে তাকে কর্মস্থলে যোগদানে নিষেধ করা হয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি নার্স ইলা শিকদারের সরাসরি সম্পৃক্ততা খুঁজে পেয়েছে। আমরা তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠিয়েছি। তাদের কাছ থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত পাইনি।”
জানা যায়, শহরের টেপাখোলা বিন্দাবনের মোড় এলাকার বাসিন্দা ফাহিম আহমেদ রাসেল তার স্ত্রী হীরা ওরফে বাঁধনকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি ফরিদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। হাসপাতালের চিকিৎসক তাকে প্রতিদিন দুবার রক্ত পরীক্ষার নির্দেশনা দেন। ২৩ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারি হাসপাতালের প্যাথলজি ল্যাব বন্ধ থাকায় বাইরের একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টার থেকে রক্ত পরীক্ষা করে আনার জন্য রাসেল কর্তব্যরত নার্স ইলা শিকদারকে স্ত্রীর শরীর থেকে সিরিঞ্জে রক্ত টেনে দিতে বলেন। ইলা এতে অপারগতা জানালে এনিয়ে কথাকাটাকাটি হয়।
এর জের ধরে ইলা মোবাইল ফোনে দেবাশীষ নয়নকে ডেকে আনেন। পরে হাসপাতালের ভিতরেই রাসেলকে কুপিয়ে জখম করেন দেবাশীষ। গুরুতর আহত রাসেলকে প্রথমে ফরিদপুর মেডিকেল হাসপাতালে ও পরে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়।
এ ঘটনায় ইলা, নার্সিং সুপারভাইজার জহুরা বেগম ও দেবাশীষ নয়নসহ অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা মামলা দায়ের করা হয়। জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ হতে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট আবু আহমেদ আব্দুল্লাকে প্রধান এবং ডেপুটি সিভিল সার্জন শাহ মো. বদরুদ্দোজাকে সদস্য সচিব করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়।
হামলার শিকার ফাহিম আহমেদ রাসেল বলেন, “এ মামলার একজন আসামিও গ্রেপ্তার হয়নি। এই সুযোগে তারা উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিয়ে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এ অবস্থায় আমি পুলিশকে আমার নিরাপত্তাহীনতার কথা জানিয়েছি। আসামিরা রাজনৈতিক আশ্রয়ের লোক। ”
ওই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার নিয়ে তিনি শঙ্কিত।