রাজবাড়ীতে পদ্মার পানি ইতিমধ্যে কমতে শুরু করেছে আর সেই সঙ্গে দেখা দিয়েছে ভাঙন আতঙ্ক। ভাঙনের ঝুঁকিতে রয়েছে পদ্মাপাড়ের শতাধিক স্থাপনা। যার মধ্যে বসতভিটা, ব্যসবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও রয়েছে স্কুল ও মসজিদ। রাজবাড়ী শহর থেকে তিন কিলোমিটার দূরে সিলিমপুর গ্রাম। এই গ্রামের একটি মাত্র সরকারি প্রথমিক বিদ্যালয় হলো চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। যেটিও রয়েছে চরম ঝুঁকির মুখে।
শনিবার (২৮ আগস্ট) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, নদী ভাঙতে ভাঙতে স্কুলটি থেকে কয়েক হাত দূরে নদীর বর্তমান অবস্থান। স্থানীয়রা আশঙ্কা করছেন পদ্মার পানি আরেকটু কমলেও হয়তো এই স্কুলটি নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে।
এই বিদ্যালয়ের তৃতীয় শ্রেণীতে পড়া মনিরের সঙ্গে কথা বললে সে জানায়, তার বাড়ি এই স্কুলের পাশেই। সে বর্তমানে বেশ চিন্তিত। তবে তার বাড়ি নিয়ে নয়। তার স্কুলটি নিয়ে। সে গভীর মায়াভরা মুখ নিয়ে প্রতিবেদকের কাছে জিজ্ঞাস করে, স্কুলটি ভেঙে গেলে আমরা পড়ব কোথায়?
পাশেই খেলা করছিলে আরও ২/৩ জন। তারাও এই স্কুলের শিক্ষার্থী। মনিরের সঙ্গে কথা বলতে দেখে তারাও এগিয়ে আসে এবং তাদের উদ্বেগের কথা জানাই।
পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী মুনিয়া বলে, “আব্বা-আম্মার কাছে শুনছি নদী নাকি আগে আরও দূরে ছিল। কিন্তু এখন ভাঙতে ভাঙতে তো আমাদের স্কুলের কাছে চলে আসছে। সবাই বলতেছে পানি কমলে নাকি স্কুলটা ভেঙে যেতে পারে।”
এমন সময় তারই সহপাঠী রহিমা বলে, “আমরা যখন বড় হব। আমরা পড়ালেখা করে ঐ যে বড় বড় গাড়ি করে এসে যখন নদীর এমন অবস্থা দেখব। তখন আমরা ঠিকই একটা ব্যবস্থা করে ফেলব।”
স্থানীয় হোসেন মণ্ডল জানান, চর সিলিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়টি একদম নদীর পাড়ে। যেকোন সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। সেই সঙ্গে শতাধিক বাড়ি ঘর ভাঙনের মুখে।
আব্দুর রব বলেন, “আমরা খুবই চিন্তায় আছি। পাঁচবার নদীতে বাড়ি ভাঙছে। সব হারিয়ে কয়েক বছর আগে এখানে একটু জমি কিনে আশ্রয় নিছি। এখন সেটাও হুমকির মুখে। কখন যেন বাড়ি ঘর ভেঙে যায় সেই দুচিন্তায় ঘুম আসে না।”
রাজবাড়ী পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল আহাদ বলেন, “পদ্মার পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে যে ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছিল,পদ্মার পানি কমতে শুরু করলেও যাতে ভাঙন না হয় সেদিকে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা ইতিমধ্যে বালি ভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলছি। প্রতিনিয়ত ডাম্পিং চলছে। আশা করছি ভাঙনের সম্মুখীন হতে হবে না।”
নদীর মফোলজিক্যাল সমস্যার কারণে গতি পথ পরিবর্তনের জন্যই এই ভাঙনের সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান তিনি।
গত দেড় মাসে নদী প্রতিরক্ষা কাজের ৯টি স্থানে প্রায় ৪০০ মিটার এলাকার সিসিব্লক ধসে গেছে। এতে করে ঝুঁকিতে রয়েছে রাজবাড়ী শহর রক্ষা বাঁধও।