সোমবার (২১ মার্চ) উদ্বোধন হতে যাচ্ছে দেশের সর্ববৃহৎ ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট পায়রা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশরীরে উপস্থিত থেকে এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি উদ্বোধন করবেন। পরে সেখানে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য রাখবেন প্রধানমন্ত্রী।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে সাগর কন্যা পটুয়াখালী। করোনা মহামারির পর প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে উচ্ছ্বসিত স্থানীয়রা।
বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল) সূত্র জানায়, বাংলাদেশ ও চীনের যৌথ বিনিয়োগে ২০১৪ সালে বাংলাদেশ নর্থওয়েস্ট পাওয়ার কোম্পানি ও চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি করপোরেশনের (সিএমসি) মধ্যে পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১৬ সালের ১৪ অক্টোবর পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার ধানখালীতে কয়লা ভিত্তিক এ বিদ্যুত কেন্দ্রের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নির্মাণ শুরুর পর ২০২০ সালের ১৫ মে প্রথম ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন করে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড (বিসিপিসিএল)। পরে একই বছরের ৮ ডিসেম্বর আল্ট্রা সুপার প্রযুক্তি ব্যবহার করে দ্বিতীয় ইউনিটের ৬৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করে এ বিদ্যুত কেন্দ্রটি।
এক হাজার একর জমির ওপর নির্মিত এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির প্রথম ফেজ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে ২.৪৫ বিলিয়ন ডলার। প্রতিদিন এ কেন্দ্র চালু রাখতে প্রয়োজন হবে ১৩ হাজার মেট্রিক টন কয়লা। এ কেন্দ্র থেকে দ্বিতীয় ফেজে আরও ১৩২০ মেগাওয়াট, অর্থাৎ ২৬৪০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে ২০২৪ সাল নাগাদ যুক্ত হবে বলে আশাবাদী কোম্পানি সংশ্লিষ্টরা।
পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট থার্মাল পাওয়ার প্লান্টের প্রকল্প পরিচালক শাহ মোহাম্মদ গোলাম মাওলা সাংবাদিকদের জানান, কোভিড মহামারির প্রতিকূলতার মধ্যেও কোনো রকম ব্যয় বৃদ্ধি ছাড়া প্রথম ফেজে দুটি ইউনিটকে উৎপাদনে আনতে সক্ষম হয়েছেন তারা। তিনি দাবী করেন, ২.৪৫ বিলিয়ন ডলারের এ প্রকল্পে একশ মিলিয়ন ডলার কম খরচ হয়েছে। বর্তমানে তারা ১৩২০ মেগাওয়াট উৎপাদনে সক্ষম হলেও সঞ্চালন লাইনের কাজ সমাপ্ত না হওয়ায় পুরো ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে দিতে পারছে না। পায়রা থেকে গোপালগঞ্জ পর্যন্ত সঞ্চালন লাইন নির্মাণ শেষ হলেও গোপালগঞ্জ থেকে আমিন বাজার পর্যন্ত লাইনের কাজ এখনও শেষ হয়নি। আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে লাইনের কাজ শেষ হলে পুরো ১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুত জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।
এদিকে প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে প্রস্তুত জেলাবাসী। তার আগমনকে কেন্দ্র করে বর্ণিল সাজে সজ্জিত হয়েছে পুরো জেলা। প্রধানমন্ত্রীকে বরণ করতে ২২০টি নৌকাকে সজ্জিত করা হয়েছে বর্ণিল সাজে। রামনাবাদ নদীর মোহনায় এ নৌকা থেকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে অভিবাদন জানাবেন উপকূলের প্রায় এক হাজার একশ মানুষ।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর জানান, পায়রা সেতু, কুয়াকাটা পর্যটন কেন্দ্র এবং প্রস্তাবিত ইপিজেট এ অঞ্চলের চেহারা পাল্টে দেবে।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ জানান, প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়েছে। এই নিরাপত্তা পরিকল্পনার মধ্যে কোভিড প্রটোকলও রয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর কর্মসূচিতে যারা অংশ গ্রহণের সুযোগ পাবেন তাদের অবশ্যই করোনা নেগেটিভ রিপোর্ট সাথে নিয়ে যেতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, শুধু পায়রা ১৩২০ মেগাওয়াট তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের উদ্বোধন নয়, ঐ দিন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশের শতভাগ বিদ্যুতায়নের ঘোষণা করবেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সেখানে একটি মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেবেন। এ সফরে চায়নাসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, মন্ত্রী পরিষদের সদস্য, সংসদ সদস্য, সরকারি কর্মকর্তাসহ পাঁচ শতাধিক সদস্য উপস্থিত থাকবেন।