অপরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা আর পানি নিষ্কাশনের অপ্রতুলতায় সামান্য বৃষ্টিপাতে নাকাল পাবনা পৌরবাসী।
মঙ্গলবার (২৩ আগস্ট) সকালে পাবনা পৌর এলাকার শালগাড়িয়া, উত্তর শালগাড়িয়া, মুজাহিদ ক্লাব সড়ক, আতাইকুলা সড়ক, রাধানগর, আটুয়া, বৈরামখান সড়ক, বড় বাজার গুড় পট্টি, দিলালপুর পাথরতলা, কালাচাঁদপাড়া, ছোট শালগাড়িয়া, মাঠপাড়া, পাবনা শহরের প্রেসক্লাব সড়ক, মোশাররফ ডাক্তারের গলি, নিউ মার্কেট সড়কসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ পাড়া মহলার সড়কগুলোতে সামান্য বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।
এমনও পাড়া মহল্লা রয়েছে, যেখানে কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা নেই। সে সব এলাকার মানুষ আরও দুর্বিষহ যন্ত্রণার মধ্যে বসবাস করছেন। এর মধ্যে অন্যতম ৯নং ওয়ার্ডের উত্তর শালগাড়িয়ার সরদার পাড়া, আজিজল মেম্বার সড়কসহ বেশ কিছু মহল্লা। যেখানে নেই কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা।
উত্তর শালগাড়িয়া এলাকার বাসিন্দা এনামুল হক বলেন, “আমাদের মহল্লায় কোনো ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানিতে নিমজ্জিত হয়ে যায়। যে কারণে দৈনন্দিন কাজেও আমাদের বিঘ্ন ঘটছে। ড্রেনেজ ব্যবস্থার পাশাপাশি নেই বর্জ্য ফেলার ব্যবস্থা। উত্তর শালগাড়িয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় সংলগ্ন সড়কে গড়ে তোলা হয়েছে ময়লা আবর্জনার ভাগাড়। স্কুলে আসা শিক্ষার্থীদের ক্লাস-রুমে বসে থাকাই দায়। বিষয়টি স্থানীয় কাউন্সিলর ও মেয়রকে বলা হয়েছে। কিন্তু কোনো সমাধান এখন পর্যন্ত হয়নি।”
পৌরবাসীর অভিযোগ, ময়লা আবর্জনা ফেলানোর স্থায়ী কোনো ডাস্টবিন না থাকায় যত্রতত্র ময়লা আবর্জনা ফেলা হচ্ছে। বৃষ্টি হলে ওই ময়লা আবর্জনা সড়কে ছড়িয়ে গিয়ে চলাচলে দেখা দেয় মারাত্বক স্বাস্থ্য ঝুঁকিসহ পরিবেশ বিপর্যয়ের আশঙ্খা। এছাড়াও অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও নির্দিষ্ট স্থানে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় পৌরবাসীর জন্য এটি অভিশাপে পরিণত হয়েছে।
পৌর এলাকার ১৩নং ওয়ার্ডের বাবলা তলার বৈরামখান সড়কের বাসিন্দা মনোয়ারুল ইসলাম মুন্নু বলেন, “এই মহল্লার ২৫-৩০টি পরিবার সামান্য বৃষ্টি হলেই চরম ভোগান্তির মধ্যে পড়েন। এতে তাদের বাসা থেকে বের হওয়া দায় হয়ে যায়।”
ওই মহল্লার শিক্ষার্থী মারজিয়া ইসলাম মিতু ও নাবিলা তাবাসসুম বলেন, “বৃষ্টি হওয়া মানেই সেদিনে স্কুল-কলেজে যাওয়া অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। প্রয়োজনে জুতা সেন্ডেল খুলে হাতে নিয়ে কাপড় উচু করে গন্তব্যে যেতে হয়। আমরা মহল্লাবাসী খুব বিপর্যয়ের মধ্যে আছি। দ্রুত এই ভোগান্তি থেকে মুক্তি চাই।”
শালগাড়িয়া ৭নং মহল্লার বিদ্যুৎ চক্র কালীবাড়ি মন্দির মহল্লার বাসিন্দা কাজী শর্মিলা সিদ্দিকী জানান, সামান্য বৃষ্টির পানি জমলেই আমরা ঘর থেকে বেরুতে পারি না। এই মহল্লায় কমপক্ষে ৪০টি পরিবার এই সমস্যার মধ্যে রয়েছে। নেই পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা।
নানা শ্রেণিপেশার কমপক্ষে ২০ জন পৌর নাগরিকের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, “বর্তমান মেয়র আমাদের ঘোষিত বাজেটে পৌর নাগরিকদের হতাশ করেছন। সব খানে যখন বার্ষরিক বাজেট বৃদ্ধি পায়, সেখানে পাবনা পৌরসভার বাজেট কমপক্ষে অর্ধশতকোটি টাকা কম হওয়ায় নাগরিক সুযোগ সুবিধা পাওয়ায় আমরা সংকিত, হতাশ আর ক্ষুব্দ।”
তারা আরও বলেন, “সরকারি অ্যাডওয়ার্ড কলেজ গেট সংলগ্ন কবি বন্দে আলী মিয়া পৌর মার্কেট নির্মাণ বন্ধ হয়ে আছে। শহরে সড়কের দু-পাশের ফুটপাত ভাড়া দিয়ে হকার্স দোকান বসানোয় পথচারীদের চলাচলে বাধা, রিকশা, অটোরিকশায় যানজটে নাকানি চুবানি অবস্থার সঙ্গে কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বড় বড় বাস প্রবেশ করায় ভালো নেই পৌরবাসী।”
পাবনা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আফরোজ অসাদ বলেন, “পরিকল্পিত নগরায়ন না হলে বসবাসের অযোগ্য হয়ে যায়। সেটা পাবনা পৌরসভা তার একটি উদাহরণ। বিভিন্ন পাড়া মহল্লা ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলো ময়লার ভাগাড় আর বৃষ্টির পানিতে একাকার হয়ে পৌরবাসীর বসবাসে নাভিশ্বাস তুলেছে। জরুরিভাবে পরিকল্পিত সড়ক নির্মাণ, ড্রেনেজ ব্যবস্থা ও পানি নির্ধারিত স্থানে যাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় এবং যুগোপযোগী পদক্ষেপ জরুরি হয়ে পড়েছে।”
পাবনা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পরিচালক ফজলুর রহমান বলেন, “অপরিকল্পিতভাবে নগরায়ন করার ফলে পৌরবাসীকে সীমাহীন দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হয়েছে। পৌর নাগরিক তথা ব্যবসায়ীসহ ক্রেতা-বিক্রেতারা জলাবদ্ধতার কারণে নাজেহালে শেষ। এই সমস্যা থেকে পরিত্রাণ পেতে দ্রুত পরিকল্পিতভাবে সড়ক ও ড্রেনেজ নির্মাণ এবং নিষ্কাশনের পানি সঠিক জায়গায় পৌছাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।”
পাবনা নাগরিক মঞ্চের অন্যতম নেতা কমরেড জাকির হোসেন বলেন, “পূর্ববর্তী মেয়রের চেয়ে বর্তমান মেয়র অনেক আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করছেন। ইতোমধ্যে পৌর নাগরিকদের জন্য বেশ কিছু কাজ করছেন এবং চলমান রয়েছে। আশা করছি সাময়িক সমস্যাগুলো দ্রুত সমাধান হবে।”
পৌরসভার মেয়র শরীফ উদ্দিন প্রধান বলেন, “নাগরিক সুযোগ সুবিধা প্রদানে আন্তরিকতার ঘাটতি নেই। অসচেতন পৌরবাসী যত্রতত্র পলিথিনসহ ব্যবহৃত জিনিস ফেলার কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এছাড়াও মাছ ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন কার্টুন, পলিথিন, মোড়ক ড্রেনের মধ্যে ফেলার কারণে ড্রেন আটকে গিয়ে জলাবদ্ধতা তৈরি হচ্ছে। বাড়িওয়ালারা নির্মাণ সামগ্রী ড্রেনের ওপরে রাখার কারণে সমস্যা হচ্ছে।”
মেয়র শরীফ প্রধান বলেন, “আমাদের কর্মীরা নিয়মিত কাজ করছেন। পূর্বের মেয়রদের অপরিকল্পিত কাজগুলো পরিকল্পনার মধ্যে আনতে কিছুটা সময় লাগছে।”
গত বছরের বাজেটের চেয়ে সদ্য ঘোষিত বাজেট প্রায় অর্ধশত কোটি টাকা কম হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “বাজেট কম হলেও নাগরিক সুযোগ সুবিধায় কোনো সমস্যা হবে না। অন্যান্য মেগা প্রকল্প দিয়ে সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধি করা সম্ভব হবে।”