• ঢাকা
  • বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪, ২৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

শেরপুরে বড়ই চাষে দুই লাভ 


সুজন সেন, শেরপুর
প্রকাশিত: মার্চ ৬, ২০২২, ০৮:৩০ এএম
শেরপুরে বড়ই চাষে দুই লাভ 

বড়ই আবাদে দুই লাভ দেখছেন শেরপুরের বনাঞ্চল ঘেরা শ্রীবরদীর চাষিরা। বড়ই চাষিরা জানান, এই ফল আবাদের জন্য গারো পাহাড়ের মাটি উপযুক্ত হওয়ায় স্বল্প খরচে অধিক উৎপাদন যেমন হচ্ছে, তেমনি এই গাছ কাঁটাযুক্ত হওয়ায় বন্যহাতির দল ভয়ে লোকালয়ে হানা দিতে সাহস হারাচ্ছে। ফলে বড়ইয়ের বেশী উৎপাদনে যেমন তারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন, সেই সাঙ্গে হাতির আক্রমণ কিছুটা ঠেকাতে পেরে রাতে নিজ ঘরে নিশ্চিন্ত মনে ঘুমাতে পারছেন। 

জানা যায়, অন্য ফসল চাষ করে কয়েক দফা বন্যহাতির আক্রমণে লোকসান গুনে এবার মিশ্র জাতের বড়ই আবাদে সফলতা পেয়েছেন উপজেলার কর্ণঝোড়া বাবেলাকোনা গ্রামসহ আশপাশের অন্যান্য গ্রামের কৃষকরা। চলতি মৌসুমে ওইসব এলাকায় আপেল কুলসহ কাশ্মীরি ও বল সুন্দরী জাতের বড়ই চাষ হচ্ছে।

শামীম মোল্লা নামে এক চাষি জানান, বাবেলাকোনায় তার চার বিঘা জমিতে কাশ্মীরি, আপেল ও বল সুন্দরী জাতের বড়ই চারা রোপণ করেন। প্রায় ১০ মাস আগে ওইসব চারা তিনি বগুড়া জেলা থেকে সংগ্রহ করে আনেন। বর্তমানে সেসব গাছে ব্যাপক পরিমাণ বড়ই ধরে গাছ ঝুঁকে পড়েছে। এরমধ্যে পাকা বড়ই বিকি-কিনিও শুরু হয়েছে। 

শামীম মোল্লা বলেন, বাগানের ৬০০ গাছের মধ্যে এখন ৪০০ গাছে ফলন হচ্ছে। সার ও পরিচর্যা বাবদ খরচ হয়েছে প্রায় দেড় লাখ টাকা। 

তিনি আশা করছেন এ বছরই তার খরচের সব টাকা উঠিয়ে লাভের মুখ দেখবেন। আর পরবর্তী বছর থেকে লাভের পরিমাণ আরও বাড়বে।  

স্থানীয় পাইকার আফজাল মিয়া জানান, পাহাড়ে উৎপাদিত বড়ই মান ভেদে প্রতিমণ ১৬০০ থেকে দুই হাজার টাকা মণ দরে তারা কিনে থাকেন। 

serpur

জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বনাঞ্চলে ঘুরতে আসা পর্যটকরা জানান, পাহাড়ের বাগানে থোকা থোকা বড়ই ঝুলে থাকার দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে যায়। 

পর্যটক রাইসুল ইসলাম ও তার স্ত্রী রেহেনা পারভীন বলেন, তারা এই সুস্বাদু বড়ই খেয়েছেন। সেই সঙ্গে আত্মীয়-স্বজনদের জন্য কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। 

রেজাউল করিম নামে এক উদ্যোক্তা বলেন, শামীমের বাগানে তিন প্রজাতির বড়ইয়ের মধ্যে বল সুন্দরী দেখতে ঠিক আপেলের মতো। ওপরের অংশে হালকা সিঁদুর রং। বাউকুল ও আপেল কুলের সংকরায়নের মাধ্যমে সেটি উদ্ভাবিত হয়েছে। অপরদিকে কাশ্মীরি বড়ইয়ের রঙ ঠিক যেন আপেলের মতো সবুজ ও হালকা হলুদের ওপর লাল। তার বাগানে ফলন হওয়া প্রতিটি জাতের বড়ই বেশ মিষ্টি। 

বন বিভাগের বালিঝুড়ি রেঞ্জ কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, স্থানীয়রা তাদের নিজস্ব জমিতে বড়ই চাষ করছে। এতে বন্য হাতির আক্রমণ কিছুটা কমে আসবে। কারণ হাতি কাঁটাযুক্ত গাছ এড়িয়ে চলে। এ কারণে বড়ই আবাদের পাশাপাশি স্থানীয়দের লেবু চাষেও উৎসাহিত করা হচ্ছে।

শ্রীবরদীর কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা হুমায়ুন দিলদার বলেন, “আমরা বরাবরই পাহাড়ি কৃষকদের উচ্চমূল্যের ফল বাগান তৈরি করতে উদ্বুদ্ধ করে আসছি। তারই ধারাবাহিকতায় এবার গারো পাহাড়ে বড়ই আবাদ শুরু হয়েছে।” 

আগামীতে বড়ই চাষে পাহাড়ি কৃষকদের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন। 

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!