ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত ও হিমেল বাতাসে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে উত্তরের জনজীবন। এ অঞ্চলের ৮০ লাখ দরিদ্র মানুষ কাবু হয়ে পড়েছে শীতের হানায়। আকাশ ভেঙে ঝরা হিম কুয়াশায় অচল জীবনযাত্রা। ডিসেম্বরে মৃদু ও মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পর নতুন বছরে চলতি সপ্তাহে উত্তরাঞ্চলে ফের মাঝারি শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাসের কথা জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।
রংপুর আবহাওয়া অফিসের তথ্যমতে, রোববার (৯ জানুয়ারি) রংপুরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১৩.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস আর বিভাগের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় ১০ ডিগ্রি সেলসিয়াস।
এরই মধ্যে দ্বিতীয় দফায় শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়েছে রংপুর আবহাওয়া অফিস। শনিবার (৮ জানুয়ারি) থেকে ঘন কুয়াশার সঙ্গে কনকনে শীত ও হিমেল হাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। ব্যাহত হচ্ছে স্বাভাবিক কাজকর্ম। ঠান্ডায় নাকাল হয়ে পড়ছে চরাঞ্চলসহ ছিন্নমূলের অসহায় মানুষ। শীতের এ তীব্রতা দুই এক দিনের মধ্যে আরও বাড়তে পারে।
এদিকে ঘন কুয়াশা আর কনকনে শীত চেপে বসেছে তিস্তা, ঘাঘট, দুধকুমার, যমুনেশ্বরী ও করতোয়া নদী বেষ্টিত এলাকাগুলোতে। কনকনে শীত আর বেলা গড়িয়ে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় ঠান্ডা বাতাস। রংপুর অঞ্চলে বেলা দুপুর নাগাদ সূর্যের দেখা মিললেও নেই তেমন উষ্ণতা।
করোনা মহামারিতে এমনিতেই বিপর্যস্ত উত্তর জনপদ। এখন বেড়েছে শীতের প্রকোপ। এই অঞ্চলে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ওঠানামা করছে ১০ থেকে ১১ ডিগ্রিতে। নদী তীরবর্তী বেশির ভাগ এলাকার মানুষ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করছেন। শীতের এই হানায় প্রভাব ফেলেছে কৃষকের ধানের বীজতলাতেও।
এদিকে নতুন বছরের শুরু থেকে রংপুর মেডিকেলে শীতজনিত রোগীর সংখ্যাও বেড়েছে চার গুণে।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু মেডিসিন বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা. মো. ফখরুল আলম বলেন, “শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে শুরু করেছে শীতজনিত রোগাক্রান্তের সংখ্যা। শীতে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অনেকে। এদের মধ্যে শিশু ও বৃদ্ধদের সংখ্যাই বেশি। শীতজনিত কারণে চার দিনে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শিশু ওয়ার্ডে ভর্তি হয়েছে সাড়ে চারশত শিশু।”
আবহাওয়া অফিসের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবহাওয়াবিদ এ কে এম কামরুল হাসান জানান, ডিসেম্বরের শেষে একটি শৈত্য প্রবাহের পর গত এক সপ্তাহ তাপমাত্রার কিছুটা উন্নতি হলেও ফের তাপমাত্রা কিছুটা কমতে শুরু করেছে। দিনে ও রাতের তাপমাত্রা কাছাকাছি হওয়ায় এ অঞ্চলে শৈত্য প্রবাহ আরও তীব্র হতে পারে।
সরকারি হিসেবে এ অঞ্চলের মোট জনসংখ্যার ৪০ ভাগ দরিদ্র। পশ্চাৎপদ উত্তরাঞ্চলে দারিদ্র্য আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এবারের তীব্র এই শীত গৃহহীন ছিন্নমূল মানুষের জীবনে নেমেছে দুর্বিষহ কষ্ট।