• ঢাকা
  • রবিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০২৪, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২১ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬
শান্তি রক্ষা মিশনে নিহত

শরীফুলের শোকে স্তব্ধ বেড়াখারুয়া গ্রাম


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: অক্টোবর ৫, ২০২২, ০৩:২৫ পিএম
শরীফুলের শোকে স্তব্ধ বেড়াখারুয়া গ্রাম

শান্তিরক্ষা মিশনে দায়িত্ব পালনকালে বোমা বিস্ফোরণে নিহত হয়েছেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য শরিফুল (২৪)। তার মৃত্যুতে গ্রামের বাড়ি সিরাজগঞ্জের বেলকুচি পৌর এলাকার ১ নম্বর ওয়ার্ডের বেড়াখারুয়ায় চলছে শোকের মাতম।

বুধবার (৫ অক্টোবর) দুপুরে দিকে সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ওই বাড়িতে পরিবারের সদস্যদের সহমর্মিতা জানাতে আসেন।

সরেজমিন দেখা যায়, শহীদ শরীফুলের বাড়িতে নারী-পুরুষের ভিড়। কেউ কাঁদছে, কেউ অন্যকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করছে। তবে মা পাঞ্জু আরা বেগম (৪১) নির্বাক হয়ে পড়ে আছেন। আর বাকরুদ্ধ হয়ে আছেন বাবা লেবু শেখ (৬২)। অকালে সন্তান হারানোর শোক যেন কোনোভাবেই সইতে পারছে না মা-বাবা। এমন করুণ অবস্থা এখন ওই পরিবারের সবারই। পরিবারের আর্তনাদে ভারী হয়ে উঠেছে এলাকার পরিবেশ। কাঁদছেন প্রতিবেশীরাও।

শরীফুলের মা মাঝে মাঝে অস্পষ্ট কণ্ঠে শুধু বলছেন, “তোমরা আমার শরীফুলকে আইনা দাও, এইভাবে সে চইলা যাইতে পারে না। মিশন থেকে এসে একমাত্র বোনকে বিয়ে দেবে। বাড়িতে কত কিছু করবে। এখন আমাদের এসব স্বপ্ন কে পূরণ করবে? শরিফুলকে ছাড়া আমরা বাঁচতে পারুম না।”

শরিফুলের বাবা লেবু শেখ বলেন, “মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রম পরিচালনার সময় পুঁতে রাখা বোমা বিস্ফোরণে আমার ছেলে শহীদ হয়েছে। ছেলের সঙ্গে সব শেষ। গত ১৫ দিন আগে কথা হইছে। তখন একমাত্র ছোট বোনকে ভালো পাত্রস্থ করতে সব রকম প্রস্তুতি নেওয়া হবে, এ জন্য কোনো চিন্তা করতে মানা করেছে। মিশনের সব অর্থ দিয়ে হলে ভালো ছেলের সঙ্গে বোনকে বিয়ে দেওয়াটা তার প্রধান স্বপ্ন ছিল।”

এদিকে শরিফুলের নববিবাহিত স্ত্রী সালমা (১৮) বলেন, “আমি এখন কী নিয়ে থাকব। আমার এখন কী হবে। কত স্বপ্ন ছিল আমাদের।” বলতে বলতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেন।

একই অবস্থা একমাত্র ছোট ভাই কাউসার তালুকদার (২২)। তিনি এসএসসি পাস করে সৈনিকে চাকরির আশায় বহু চেষ্টা করেছেন। আর  ছোট বোন লাকী খাতুন (১৮)। খামারগ্রাম কলেজে এইচএসসিতে পড়াশোনা করছে। তারও বড় ভাইয়ের মৃত্যুর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছেন।

এছাড়া শরিফুলের চাচা মাহদুল হাসান বলেন, “শরিফুল ছোটবেলা থেকেই অনেক মেধাবী ও পরিশ্রমী ছিল। সে তাঁতের কাজ করে পড়াশোনা করেছে। তার বাবাও তাঁতশ্রমিক ছিল। শরিফুল চাকরি নেওয়ার পর বাবা বয়োবৃদ্ধ হওয়ায় শ্রমিকের কাজ ছেড়ে দিয়েছে। এখন শরিফুলই ছিল একমাত্র অবলম্বন। তবে ছেলে নিহত হওয়ায় এখন বাড়িতে কর্মক্ষম কেউ নেই। তার ছোট বোন বিয়ের উপযুক্ত। মিশন শেষে বোনকে বিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। তবে শরিফুলের ছোট ভাইকে যদি কোনো সরকারি চাকরির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে হয়তো বৃদ্ধ বাবা-মা শেষ বয়সের দিনগুলো ছেলে হারানোর কষ্ট বুকে নিয়েও দিনপাড় করতে পারবে। এজন্য প্রধানমন্ত্রী ও সেনাবাহিনী প্রধানের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”  

শরীফুল ২০১৭ সালের ২৩ নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে যোগদান করেন। মিশনে যাওয়ার ৬ মাস আগে বিয়ে করেন। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে শরীফুল সবার বড়। মিশন থেকে ফিরে একমাত্র বোন লাকী খাতুনের দিয়ে দেওয়ার কথা ছিল। গত বছরের ২ ডিসেম্বর মিশনে গিয়েছিলেন শরীফুল।

স্বদেশ বিভাগের আরো খবর

Link copied!