‘লুটপাটকারীদের কাছে ভবদহ সোনার ডিম পাড়া হাঁস’


যশোর প্রতিনিধি
প্রকাশিত: আগস্ট ২৪, ২০২১, ০৭:১১ পিএম
‘লুটপাটকারীদের কাছে ভবদহ সোনার ডিম পাড়া হাঁস’

যশোরের ভবদহ অঞ্চলের জলাবদ্ধতা লুটপাটকারীদের জন্য সোনার ডিম পাড়া হাঁসে পরিণত করা হয়েছে। এখানে প্রকল্পের নামে প্রতিবছর কোটি কোটি টাকা লুটের স্থায়ী ব্যবস্থা করে নিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড, মন্ত্রণালয়, ঠিকাদার, রাজনৈতিক দুর্বৃত্ত ও ঘের মালিকদের সমন্বয়ে গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট। ফলে ভবদহ জনপদের ২০০ গ্রামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ১০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় জিম্মি হয়ে পড়ছেন। তাদের জীবনে মহাবিপর্যয় নেমে আসছে।

মঙ্গলবার (২৪ আগস্ট) যশোরে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করা হয়।

লিখিত বক্তব্যে ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে’। এই চক্র প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে ভবদহ স্লুইচ গেট থেকে মোহনা পর্যন্ত ৫০-৬০ কিলোমিটার নদী ভরাট করে ফেলেছে। পানি বের হওয়ার পথ রুদ্ধ। এই পরিণতির কথা বারবার বলা সত্ত্বেও পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও তাতে কর্ণপাত না করে গণদুশমনের ভূমিকায় অবর্তীণ হয়েছে। ইতোমধ্যে নদী বাঁচানোর বিপরীতে রাষ্ট্রের টাকা লুটপাটের জন্য ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে, যা প্রক্রিয়াধীন। সেচ করে সে পানি সরানোর পথ এখন বন্ধ এবং বিল কপালিয়ার শেষ প্রচেষ্টাও যে ব্যর্থ তা প্রমাণিত। আমডাঙ্গা খাল উজানের পানি মাত্র ২৫ শতাংশের মতো নিষ্কাশন করতে পারে। 

রনজিত বাওয়ালী আরও বলেন, আমডাঙ্গা খালই জলাবদ্ধতার সমাধান জনগণকে বিভ্রান্ত করছে কুচক্রি মহল। ২০০৭ সালে আন্দোলনকারী জনগণ স্বেচ্ছাশ্রমে আমডাঙ্গা খাল খনন করেছিলেন। তখন খালটি পরিপূর্ণ সংস্কারের দাবি করা হয়। ভৈরব নদের সঙ্গে সংযোগ খালের প্রশস্ততা বৃদ্ধি, অধিগ্রহণকৃত জমির ক্ষতিপূরণ এবং সংযোগস্থলে অবস্থিত বসতবাড়ির নিরাপত্তার জন্য মজবুত কাঠামো নির্মাণের দাবি করা হয়। সে দাবি মেনে নেওয়া হলেও তা কার্যকরী করা হয়নি। এখন বাড়িগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ওই সব বাড়ির মালিকেরা সম্মিলিতভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিকার চেয়ে ব্যর্থ হয়ে খাল বন্ধ করে দেবার উদ্যোগ নিয়েছেন। ফলে বড় ধরনের আঞ্চলিক সংঘাত সৃষ্টির ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সরকার কর্তৃক প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও বাড়িঘর সুরক্ষার ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাচ্ছি। এমন পরিস্থিতিতে যদি দ্রুত  টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট (টিআরএম) চালু ও আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত করে সংস্কার না করলে ২০০ গ্রামের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ লক্ষ মানুষ শুধু পানিবন্দি হবে। শুধু তাই নয়, এলাকার হাটবাজার, বাড়িঘর, স্কুল-কলেজ, কবরস্থান-শ্মশান, মসজিদ-মন্দির পানির তলে চলে যাবে। জনপদের মানুষকে রোহিঙ্গাদের মতো পরিণতি ভোগ করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সমস্যা সমাধানে ৬ দফা দাবি তুলে ধরা হয় 

দাবিগুলো হলো এই মুহূর্তে বিল কপালিয়ায় টিআরএম চালু করে নদীকে রক্ষা করতে হবে। অবিলম্বে বিল কপালিয়ায় টিআরএম বাস্তবায়ন, হরি শ্রী নদীতে পড়া পলি অপসারণ ও পলি মাটি নদীগর্ভে নয়, নদী পাড়ের বাইরে ফেলতে হবে। পলিতে ভরাট হয়ে যাওয়া টেকা-মুক্তেশ্বরী নদী সংস্কার করতে হবে। আমডাঙ্গা খাল প্রশস্ত ও গভীর করতে হবে। আমডাঙ্গা খালের স্লুইচগেটের পূর্বাংশে অবিলম্বে খালের দুই পাশে স্থায়ী টেকসই প্রাচীর নির্মাণ করতে হবে এবং ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। লুটপাটের লক্ষ্যে প্রস্তাবিত ৫০ কোটি টাকার সেচ প্রকল্প বাতিল করতে হবে।  সমগ্র কাজ সেনাবাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে কার্যকরী করতে হবে এবং আন্দোলনকারী সংগঠনগুলোকে কাজ মনিটরিংয়ের সুযোগ দিতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা ইকবাল কবির জাহিদ, যুগ্ম আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা গাজী আব্দুল হামিদ, সদস্য সচিব অধ্যাপক চৈতন্য কুমার পাল, উপদেষ্টা জিল্লুর রহমান ভিটু, তসলিমুর রহমান, মুক্তিযোদ্ধা নারায়ণ চন্দ্র মল্লিক, শিবপদ বিশ্বাস, রাজু আহমেদ, শিশির মন্ডল, আব্দুল মজিদ, অমিতাব মল্লিক, কিংকর বিশ্বাস, রবি মল্লিক প্রমুখ।

Link copied!