লঞ্চে আগুনের ঘটনায় বরগুনা ৩৭টি মরদেহের ১৩টি স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৩টি মরদেহ গণদাফন করা হয়েছে। এখনো পর্যন্ত মোট কতজন নিখোঁজ রয়েছে এর সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। নিখোঁজদের প্রকৃত সংখ্যা বের করতে জেলা প্রশাসন থেকে সেল গঠন করা হয়েছে।
ঝালকাঠি হাসপাতাল থেকে ৩৭টি জনের লাশ বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন। সেখান থেকে শনাক্ত হওয়া পাথরঘাটা পৌরশহরের তালতলা এলাকার রাজ্জাক মাস্টার, বেতাগী উপজেলার রিয়াজ হাওলাদার, বরগুনা সদর উপজেলা বরগুনা সদর ইউনিয়নের আমতলী গ্রামের জাহানারা বেগম, বামনা উপজেলার সপ্নিল এই চারজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেয় বরগুনা জেলা প্রশাসন।
এছাড়া বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেলে চিকিৎসাধীন সদরের কেওড়াবুনিয়া এলাকার তাইফা নামের এক শিশুর মরদেহ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করে জেলা প্রশাসন। ৩২টি মরদেহ নিয়ে শুক্রবার রাত পৌনে ১২টার দিকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে পৌঁছায় লাশবাহী গাড়ি। হাসপাতাল প্রাঙ্গনে কান্নায় ভেঙে পড়েন অপেক্ষমান স্বজনরা। হাসপাতাল প্রাঙ্গনে ভিড় করা উৎসুক মানুষ শোকে স্তব্ধ হয়ে যান। সারিসারি মৃতদেহ নামিয়ে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালের মর্গে নিয়ে যান স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেডক্রিসেন্ট বরগুনার সদস্যরা। রাত ১২টার দিকে মনোয়ারা নামের একজন নারীর মরদেহ তার জামাতা স্বপনের কাছে বুঝিয়ে দেয় জেলা প্রশাসন।
শনিবার দুপুর ১২টায় দাফনের আগ নিখোঁজদের স্বজনদের মরদেহ শনাক্ত করার সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বাকি ৩২টি মরদেহ কফিনে করে জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়। শনিবার সকালে হাসপতালের মর্গ থেকে তালতলী উপজেলার লামিয়া ও সামিয়া নামের চারবছরের দুটি শিশু শনাক্ত করে নিয়ে যান নিহতের মামা। সকাল ১০টায় মর্গ থেকে ৩০ জনের মরদেহ জানাজার জন্য সার্কিট হাউজ মাঠে নিয়ে যায়। বেলা ১১টায় সেখানে গণজানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজায় হাজার হাজার মানুষ অংশ নেয়। এসময় নিহত ও নিখোঁজদের স্বজনরা সেখানে ভিড় জমান। কান্নায় ভেঙে পড়েন অনেকে। জানাজা শেষে পাথরঘাটার কালমেঘা ইউনিয়নের তাবাসসুম (৪) ও একই উপজেলার চরদুয়ানী ইউনিয়ের মায়িদা (১৪) নামের এক শিশু চাঁদপুরের রুপসী এলাকার মনোয়ারাসহ মোট তিনজনের মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়। ২৭ জনের মরদেহ দাফনের জন্য বরগুনা সদর উপজেলার পোটকালী গণকবরে দাফনের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে থেকে মাদারীপুরের একই পরিবারের মনোয়ারা (৭০) অহনা (২) রুমা (২৫) ও পাথরঘাটা উপজেলার কালমেঘা ইউনিয়নের রাকিব (১৪) এই চারজনের মরদেহ শনাক্ত করে নিয়ে যান স্বজনরা।
পরে ২৩ জনের মরদেহ ২১টি কবরে দাফন করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুজন নারী রয়েছেন যারা শিশু সন্তান কোলে আকড়ে ধরে মৃত্যুবরণ করেছেন। ওই চারজনকে দুটি কবরে দাফন করা হয়।
বরগুনার জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান জানান, ঝালকাঠি জেনারেল হাসপাতাল থেকে মোট ৩৭ জনের মরদেহ বুঝে নেয় জেলা প্রশাসন। এদের মধ্যে শনিবার দুপুর ১২টায় দাফনের আগ মুহুর্ত পর্যন্ত ১৩ মরদেহ স্বজনদের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। বাকি ২৩ জনের মরদেহ সার্কিট হাউজ মাঠে সম্মিলিত জানাজা শেষ করে ধর্মরীতি অনুযায়ী ১২টার মধ্যে সদর উপজেলার ঢলুয়া ইউনিয়নের পোটকাখালী এলাকায় গণদাফন করা হয়েছে। প্রত্যেকটি মরদেহ ময়না তদন্ত ও ডিএনএ পরীক্ষার জন্য নমুনা রাখা হয়েছে।
নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য সম্পর্কে জেলা প্রশাসক হাবিবুর রহমান বলেন, এখনো পর্যন্ত কতজন নিখোঁজের নির্দিষ্ট তথ্য জেলা প্রশাসনের কাছে নেই, তবে তথ্য সংগ্রহের জন্য সেল গঠন করা হয়েছে। আমরা স্বজনদেও আহবান জানিয়েছি নিখোঁজের তথ্য দিয়ে সহায়তা করতে। দুএকদিনের মধ্যে নিখোঁজ ব্যক্তিদের তথ্য জানা যাবে। যদি কেউ ডিএনএ নমুনা নিয়ে আসেন তবে শনাক্ত করে তাকে পরবর্তিতে কবর শনাক্ত করে দেওয়া হবে।
জানাজা ও দাফনের সময় বরগুনা -১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট ধীরেন্দ্র দেবনাথ শমভু, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন ও বরগুনার পৌর মেয়র অ্যাডভোকেট কামরুল আহসান মহারাজ উপস্থিত ছিলেন।