• ঢাকা
  • রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০২৪, ৩০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৩ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

রপ্তানি হচ্ছে কুমিল্লার কচু ও লতি


মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, কুমিল্লা
প্রকাশিত: মার্চ ৩, ২০২২, ০৮:৫০ এএম
রপ্তানি হচ্ছে কুমিল্লার কচু ও লতি

কুমিল্লা জেলার বরুড়া উপজেলায় উৎপাদিত কচু আর কচুর লতি দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের অনন্ত ২৫টি দেশে। দিন দিন বিদেশে কদর বেড়েই চলেছে এই কচু আর লতির। স্থানীয় কৃষি বিভাগও কচুর উৎপাদন ও রপ্তানি বাড়াতে নানা ধরনের কাজ করে যাচ্ছে বলে দাবি করেছে। 

রপ্তানিকারকরা বলছেন, ইতোমধ্যে বিদেশে বিখ্যাত হয়ে পড়েছে বরুড়ার কচু ও লতি। তবে স্থানীয় পর্যায়ে থেকে সরাসরি রপ্তানি না হওয়াতে ন্যায্য মূল্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন কৃষকরা। অনেক মধ্যস্বত্বভোগী না থেকে স্থানীয় কৃষকদের থেকে সরাসরি কচুর লতি সংগ্রহ করলে কৃষকদের লাভ বেড়ে যাবে কয়েকগুণ।

বরুড়ায় উৎপাদিত পানি কচু ও লতি বিশ্বের অন্তত ২৫টি দেশে রপ্তানি হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি যাচ্ছে, দুবাই, সৌদি আরব, কাতার, বাহরাইনসহ মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সকল দেশে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপের প্রায় সব দেশেই যাচ্ছে এই লতি ও কচু। আগে এই লতি ও কচু প্রবাসীদের মাধ্যমে গেলেও বর্তমানে বিভিন্ন এজেন্সির মাধ্যমে ব্যাপকহারে রপ্তানি হচ্ছে। 

চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস এন্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি হচ্ছে এ সবজি দুটি। তবে রপ্তানিকারকরা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে এসব কিনছেন না। আগে কৃষকরা স্থানীয় কয়েকটি বাজারে সাপ্তাহিক হাটের দিন কচু ও লতি নিয়ে যেতেন। এরপর ঢাকা ও চট্টগ্রাম থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে এগুলো কিনে নিয়ে যেতেন। তবে এখন চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকদের খুব একটা বাজারে যেতে হয় না। স্থানীয় ক্ষুদ্র পাইকাররা প্রতিদিনই কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কচু ও লতি সংগ্রহ করছেন। বাড়িতে নারীরা এসব লতি ও কচু পরিষ্কার করে আটি বাঁধেন।

কৃষি বিভাগ জানিয়েছে, কৃষকদের বাইরে এ কাজে প্রায় দেড় হাজার নারীর কর্মসংস্থান হয়েছে।

চিটাগং ফ্রেশ ফ্রুটস অ্যান্ড ভেজিটেবল এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশনের সহসভাপতি ইসমাইল চৌধুরী হানিফ বলেন, “বিদেশিদের পছন্দের শীর্ষে সবুজ লতি ও কচু। এজন্য বরুড়ার এই দুটি পণ্যই এখন বিখ্যাত। এছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানের তুলনায় বরুড়ার কচু ও লতি সুস্বাদু। আমরা পানি কচু আর লতি রপ্তানি করছি। চট্টগ্রাম বিমানবন্দর দিয়ে যাচ্ছে দুবাই। আর ঢাকা বিমানবন্দর দিয়ে যাচ্ছে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপসহ ২৫টির বেশি দেশে। রপ্তানিতে আমাদের একমাত্র সমস্যা হচ্ছে সড়কে চাঁদাবাজি। বরুড়া থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম পণ্য আনতে পথে পথে চাঁদা দিতে হয়। এতে ক্রেতা পর্যায়ে দাম অনেক বেড়ে যায়।”

cumilla

উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে ৯৪৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৬ লাখ ৬ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি টাকা। ২০১৮ সালে ৯৩৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৬ লাখ ৫৯ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে ১৩ কোটি। ২০১৯ সালে ৯৪৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৭ লাখ এক হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৪ কোটি ২৮ লাখ ৮৪ হাজার টাকা। ২০২০ সালে ৯৬৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৯ লাখ ৩০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৬ কোটি ২১ লাখ ২০ হাজার টাকা। আর ২০২১ সালে ৯৭৫ টন কচু ও লতি রপ্তানি থেকে পাওয়া গেছে ১৯ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ ১৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকা।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো.নজরুল ইসলাম বলেন, “সরকারের ‘কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্প’ নামের একটি প্রকল্পে বরুড়া উপজেলা রয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় বিষমুক্ত উপায়ে কচুসহ সবজি উৎপাদনে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, প্রদর্শনী করা হচ্ছে। এখন কৃষির আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে বিষমুক্ত সবজি উৎপাদন করা হচ্ছে। বিষমুক্ত সবজি উৎপাদনের সংখ্যাটা ব্যাপক হারে বাড়লে ওই প্রকল্পের মাধ্যমে রপ্তানিকারকদের আনা হবে। তারা সরাসরি কৃষকদের কাছ থেকে পণ্য কিনলে কৃষকরা আরও বেশি লাভবান হবে। আশা করছি চলতি বছরের মধ্যেই রপ্তানিকারকদের সঙ্গে কৃষকদের সরাসরি সম্পর্ক করিয়ে দিতে পারবো।”

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আনিসুল ইসলাম বলেন, “বরুড়ার কচু ও লতির পরিচিতি এখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। এটা আমাদের জন্য গৌরবের। পাশাপাশি কৃষি বিভাগকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে কৃষকদের নিয়মিত পরামর্শ দিয়ে এর উৎপাদন আরও বাড়ানোর জন্য। আমরাও এই বিষয়ে নিয়মিত খোঁজখবর রাখব। যেন কৃষকরা সরাসরি রপ্তানিকারকদের কাছে তাদের কচু বিক্রি করতে পারেন।” 
 

Link copied!