• ঢাকা
  • সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২, ২২ শাওয়াল ১৪৪৬

যমুনার ভাঙনে দিশেহারা সিরাজগঞ্জের মানুষ


সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি
প্রকাশিত: সেপ্টেম্বর ১৯, ২০২২, ০৯:৩৩ এএম
যমুনার ভাঙনে দিশেহারা সিরাজগঞ্জের মানুষ

সিরাজগঞ্জের দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ যমুনার ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে। যমুনা নদীতে তীব্র স্রোতের কারণে ঘূর্ণাবর্তের সৃষ্টি হয়ে জেলার চৌহালী, শাহজাদপুর ও এনায়েতপুর থানার দক্ষিণে আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। এক মাসে যমুনার দু’পাড়ের শতাধিক বসতভিটাসহ বিস্তীর্ণ ফসলি জমি বিলীন হয়ে গেছে। এনায়েতপুরে ভাঙন ঠেকাতে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ হলেও কাজে গতি নেই। চৌহালীতে ভাঙন রক্ষা প্রকল্প এখনো অনুমোদন হয়নি।

জানা যায়, বছরজুড়ে যমুনার ভাঙন দেখতে দেখতে ক্লান্ত মানুষ। নদী ভাঙনে দিশেহারা চৌহালী, এনায়েতপুর ও শাহজাদপুর উপজেলার পূর্বাঞ্চলের নদী পাড়ের মানুষ। নদী ভাঙনে ঘরবাড়ি হারাচ্ছে এনায়েতপুর থানার খুকনী, জালালপুর, চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া, খাসপুখুরিয়া ও শাহজাদপুর উপজেলার কৈজুরী ইউনিয়নের শত শত পরিবার। যমুনা নদীতে পানি বাড়া কমার সঙ্গে সঙ্গে নদী পাড়ে ব্যাপক নদী ভাঙন শুরু হয়। ভাঙনে ঘর-বাড়ি, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

বিশেষ করে এনায়েতপুর থানার জালালপুর ইউনিয়নের গুচ্ছগ্রাম আবাসন প্রকল্পের ৯০টি ঘর এবং পাকুরতরা ও জালালপুরের ৩৪ বসতভিটা নদী গর্ভে চলে গেছে। এই সুযোগে সরকারি এসব প্রকল্পের বেশ কয়েকটি ঘরের রডসহ মূল্যবান নির্মাণ সামগ্রী লুট করে নিয়ে যাচ্ছেন স্থানীয় প্রভাবশালীরা—এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

এদিকে অব্যাহত নদী ভাঙনের কারণে হুমকির মুখে পড়েছে জালালপুর আবাসনের ১৪৮টি ঘরসহ তিনটি গ্রামের বহু বাড়ি ঘর-বাড়ি, এনায়েতপুর-সিরাজগঞ্জ আঞ্চলিক সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও বহু স্থাপনা। স্থানীয়দের অভিযোগ, এনায়েতপুর থেকে পাচিল পর্যন্ত সাড়ে ৬ কিলোমিটার এলাকায় নদী তীর রক্ষায় সরকার সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়। এরপর সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কিছু কাজ করেছে। বর্তমানে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের গাফিলতি ও পাউবো কর্মকর্তাদের তদারকির অভাবে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ভাঙন রুদ্রমূর্তি ধারণ করছে।

এ বিষয়ে জালালপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান সুলতান মাহমুদ জানান, ভাঙন এলাকা রক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে স্থায়ী বাঁধের কাজ দ্রুত করা হোক। আর সরকারি আবাসনের রডসহ অন্যান্য নির্মাণ সামগ্রী সুবিধাভোগীরাই নিয়ে গেছে। কেউ লুট করেনি।

এ বিষয়ে শাহজাদপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ তরিকুল ইসলাম বলেন, “ভাঙন এলাকা পরিদর্শনে গিয়েছিলাম। গুচ্ছগ্রামের সরকারি সম্পদ লুটের বিষয়ে অভিযোগের কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।”

এদিকে কয়েক বছরের ভাঙনে মানচিত্র থেকে মুছে যেতে বসেছে চৌহালী উপজেলার বাঘুটিয়া ও খাষপুখুরিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৪টি গ্রাম। নদীতে ঘরবাড়ি বিলীন হওয়ায় খোলা আকাশের নিচে বসবাস করছে শত শত পরিবার।

বিনানই গ্রামের জাকির হোসেন বলেন, “আমরা নদী ভাঙন নিয়ে আতঙ্কে আছি। নদীতে বাড়িঘর বিলীন হয়ে যাচ্ছে। এলাকার মানুষ বিপদগ্রস্ত। আমরা ত্রাণ সহায়তা পাচ্ছি না। কেউ খোঁজও নিচ্ছে না।”

চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফসানা ইয়াসমিন বলেন, “চৌহালীবাসীর প্রধান সমস্যা যমুনা নদীর ভাঙন। ভাঙনে এক দশকে বহু স্থাপনা বিলীন হয়েছে। বর্তমানে দক্ষিণাঞ্চলে ভাঙনের বিষয়টি ঊর্ধ্বতন মহলকে অবগত করা হয়েছে।”

সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম বলেন, “জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন ঠেকাতে বালির বস্তা নিক্ষেপ করা হচ্ছে। এনায়েতপুর-শাহজাদপুর এলাকায় স্থায়ী ভাঙন রোধে সাড়ে ৬০০ কোটি টাকা ব্যয়ে একটি প্রকল্পের কাজ চলমান। বর্ষা মৌসুম এখন নদীতে অনেক স্রোত। তাই কাজ করা সমস্যা হচ্ছে। এছাড়া চৌহালীর দক্ষিণাঞ্চকে রক্ষায় একটি প্রকল্প জমা দেওয়া আছে। অনুমোদন হলে কাজ শুরু হবে।”

Link copied!