জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে শুক্রবার (৫ আগস্ট) মধ্যরাতে পাম্পগুলোতে ভিড় করেন মোটরসাইকেল চালকরা। ট্যাংকি ভরাই ছিল তাদের মূল লক্ষ্য। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বিভিন্ন পাম্প খবরটি জানার পর থেকে ঠিকমতো তেল দেয়নি।
কক্সবাজার
জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে মধ্যরাতে কক্সবাজার শহরের পেট্রলপাম্পগুলোয় মোটরসাইকেল চালকসহ ক্রেতাদের ভিড় জমে। রাত সাড়ে ১২টার দিকে দেখা গেছে, কক্সবাজার শহরের বাস টার্মিনাল ও সদর উপজেলার হাজী আশরাফ আলী পেট্রলপাম্পে শত শত ক্রেতা ভিড় করেছেন পেট্রল কেনার জন্য।
হাজী আশরাফ আলী পেট্রলপাম্পের মালিক মাসুদ হোসেন বলেন, “রাত ১১টা থেকে পাম্পে মোটরবাইকচালকদের ভিড় জমে। বাইক ও গাড়িচাকলদের কাছে তেল বিক্রি করেছি। যারা কনটেইনার নিয়ে আসছে, তাদেরকেও তেল দিয়েছি।”
শহরের ভোলা বাবুর পেট্রলপাম্প, বাস টার্মিনাল, সদর উপজেলা ও লিংকরোড়ের পাম্পগুলোতে খবর নিয়ে জানা যায়, তারা রাত ১২টা পর্যন্ত প্রতি বাইকে ১ লিটার পর্যন্ত তেল বিক্রি করেছেন। এর বেশি কাউকে দেননি। রাত সোয়া ১টার দিকে তেল বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন।
তবে শহরের বাইরের বিভিন্ন পেট্রলপাম্প থেকে তেল নেই বলে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
শহরের বাস টার্মিনাল পেট্রলপাম্পে তেল না পেয়ে সায়ীদ আনোয়ার বলেন, “অকটেন ও পেট্রলের দাম বাড়ার কারণে মালিকরা তেল দিচ্ছেন না। মালিকরা বলছেন, তেল নেই। কিন্তু রাত পার করে সকালে আসলে ঠিকই বেশি দামে তেল কিনতে পারব। দাম বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সিন্ডিকেট তৈরি হয়ে গেছে।”
কুড়িগ্রাম
কুড়িগ্রামের পাম্পগুলোতে রাতে হঠাৎ করে দেখা যায় পেট্রল কিনতে ভিড় করছেন মোটরসাইকেল চালকরা। বলা যায়, তেল বিক্রিতে ধুম পড়েছে পাম্পগুলোতে। চালকদের একটাই লক্ষ্য গাড়ির ট্যাংকি পরিপূর্ণ করা। তেল বিক্রিতে ব্যস্ততাও দেখা যায় পাম্পে কর্মরত শ্রমিকদের। তেল কিনতে কুড়িগ্রাম শহরের অন্যান্য পাম্পগুলোতে দেখা যায় বাইকারদের দীর্ঘ লাইন।
মোটরসাইকেল চালক অমিত পাল বলেন, “শুনলাম শনিবার সকাল থেকে নাকি পেট্রল-অকটেনের দাম বাড়বে, তাই রাতেই ১ হাজার টাকার তেল কিনে নিলাম।”
মেসার্স বি আর ফিলিংস্টেশনের মালিক মো. আলী হোসেন আকিব বলেন, “শুক্রবার রাত ১২টার পর থেকে জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার কারণে মূলত রাত ১০টার পর থেকে পাম্পে তেল নিতে ভিড় করেন বাইকাররা। আমরা রাত ১২টা পর্যন্ত পুরোনো দামেই তেল বিক্রি করেছি।”
পঞ্চগড়
দেশের সর্ব উত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের সব পেট্রলপাম্পে রাতে হঠাৎ করেই মোটরসাইকেলচালকদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে। তেঁতুলিয়া উপজেলার তেঁতুলিয়া ফিলিংস্টেশনে কথা হয় মোটরসাইকেল আরোহী আব্দুল রউফের সঙ্গে। তিনি জানান, গাড়িতে তেল না থাকায় পাম্পে তেল নিতে এসেছি। যে যার মতো পারছে তেল নিচ্ছে।
বৈশ্বিক পরিস্থিতির কথা জানিয়ে দেশে জ্বালানি তেলের দাম আরেক দফা বাড়িয়েছে সরকার। শুক্রবার (৫ আগস্ট) রাত ১০টার দিকে তেলের দাম বাড়িয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। এতে বলা হয়, বিশ্ববাজারের সঙ্গে জ্বালানি তেলের মূল্য সমন্বয় করতেই ডিজেল, কেরোসিন, পেট্রল ও অকটেনের নতুন দাম নির্ধারণ করা হয়েছে।
ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ৩৪ টাকা বাড়ানো হয়েছে। নতুন দাম অনুযায়ী এক লিটার ডিজেল ও কেরোসিন কিনতে হবে ১১৪ টাকায়।
অন্যদিকে অকটেনের দাম লিটারে বাড়ানো হয় ৪৬ টাকা। এখন প্রতি লিটার অকটেন কিনতে ১৩৫ টাকা গুনতে হবে।
এর বাইরে লিটারপ্রতি ৪৪ টাকা বাড়ানো হয় পেট্রলের দাম। এখন থেকে জ্বালানিটির প্রতি লিটার ১৩০ টাকা।
শতকরা হিসাবে ডিজেলের দাম বাড়ানো হয় ৪২ দশমিক ৫ শতাংশ। আর অকটেন ও পেট্রলের দাম বৃদ্ধি করা হয় ৫১ শতাংশ।
জ্বালানি তেলের বর্ধিত এ দাম কার্যকর হয় শুক্রবার মধ্যরাত থেকে। এর আগেই দেশের বিভিন্ন প্রান্তে জ্বালানি তেল নিতে পেট্রলপাম্পে ভিড় জমান গাড়িচালকরা, তবে অনেক জায়গায় বন্ধ করে দেওয়া হয় পেট্রলপাম্প।