পাটের উৎপাদনে রাজবাড়ীর জেলার সুনাম রয়েছে আগে থেকেই। চলতি মৌসুমে রেকর্ড পরিমাণ পাটের আবাদ হয়েছে রাজবাড়ীতে। জেলা কৃষি অধিদপ্তরের সূত্র অনুযায়ী এ বছর লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৫৩৫ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।
তবে, দেশের সোনালি আঁশ খ্যাত পাটের কদর কমেছে সময়ের পালাক্রমে। সোনালি আঁশ অনেক আগেই হারিয়েছে তার সোনালি দিন। তাই ফলন বেশি হওয়াতেও দুশ্চিন্তার ভাঁজ পাট চাষিদের কপালে।
ইতিমধ্যে বন্ধ হয়েছে দেশের বড় বড় পাটকল। তবুও প্রতিবছরই লাভ ক্ষতির অঙ্ক না কষেই জেলার কয়েক লাখ কৃষক পাটচাষ করেন।
এ বছর কঠোর বিধিনিষেধে থাকায় পাট চাষ করে বেশি বিপাকে পড়েছেন জেলার কৃষকেরা। প্রথম থেকেই উৎপাদন খরচ বেশি, শ্রমিক সংকট, পর্যাপ্ত জলাশয় না থাকা এবং অনেক জায়গায় কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় হতাশ তারা।
রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এস এম শহীদ নূর আকবর জানান, জেলার ৫ উপজেলায় এ বছর ৪৮ হাজার ২০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। এ বছর জেলার সদর উপজেলায় ১০ হাজার ১৪০ হেক্টর, পাংশায় ১১ হাজার ৭০০ হেক্টর, কালুখালীতে ৯ হাজার ৩৫০ হেক্টর, বালিয়াকান্দিতে ১২ হাজার ৫৫০ হেক্টর, গোয়ালন্দতে ৪ হাজার ২৮০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়। গত বছর এ জেলায় পাটের আবাদ হয়েছিল ৪৬ হাজার ৪৮৫ হাজার হেক্টর জমিতে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বেশিরভাগ মাঠের পাট কাটা শেষ। এখন তারা পাট জাগ দেওয়া, পাটের আঁশ ছাড়ানো এবং শুকানোতে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তবে, এখনও ‘রিবন রেটিং’ পদ্ধতি চালু না হওয়ায় সনাতনী পদ্ধতিতেই চলছে পাটের আঁশ ছাড়ানোর কাজ। গ্রামগুলোতে পুরুষদের সঙ্গে বাড়ির মহিলারাও কাজে অংশ নিচ্ছেন।
রাজবাড়ী সদর উপজেলার খানখানপুর ইউনিয়নের ইউসুফ আলী মন্ডল বলেন, “পাটের ফলন ভালো হলেও পাট জাগ দেওয়ার জন্য পানি পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে, ভ্যান ভাড়া করে দূরে নিয়ে পাট জাগ দিতে হচ্ছে। এছাড়া এ বছর শ্রমিক সংকটের ফলে যে শ্রমিক পাওয়া যাচ্ছে তাদের বেশি পারিশ্রমিক দিতে হচ্ছে।”
সদর উপজেলার মূলঘর ইউনিয়নের পাটচাষি হোসেন আলী জানান, “এবার বীজ, সার, নিরানি, পাট কাটা, জাগ দেওয়ার জন্য কামলা, জাগ দেওয়ার জন্য পরিবহন বাবদ বিঘা প্রতি ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। আর প্রতি বিঘায় ৮-১০ মণ পাট উৎপাদন হয়েছে। প্রতি মণ পাট বিক্রি হচ্ছে ২৫০০-৩০০০ টাকায়।”
গোয়ালন্দ উপজেলার কৃষক আব্দুল বারেক বলেন, “এ বছর পাট আবাদের সময় বৃষ্টি হয়নি। সে কারণে বেশ কয়েকবার মাঠে সেচ দিতে হয়েছে। যে কারণে প্রথমদিকে খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে। আবার, পাট কাটার সময় শ্রমিক সংকটে বেশি দাম দিয়ে শ্রমিক আনতে হয়েছে। সব মিলিয়ে উৎপাদনে খরচ যা হয়েছে সে হিসাবে মন মতন দাম পাওয়া যাচ্ছে না।”
খানখানাপুর বাজারের পাট ব্যবসায়ী প্রদীপ কুন্ডু জানান, “এবারে রাজবাড়ীতে পাটের ফলন ভালো হয়েছে। পাটের মানও বেশ ভালো। তবে জলাশয়ের অভাবে পাট ভালোভাবে জাগ দিতে না পারায় পাটের মান হ্রাস পেয়েছে। সেজন্য অনেক কৃষকই আশানুরূপ দাম পাচ্ছে না।”
এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের উপপরিচালক এস.এম. শহীদ নূর আকবর বলেন, “করোনাকালেও পাটের আবাদ গতবছরের চেয়ে বেশি হয়েছে। গতবারের তুলনায় পাটের বাজারদাম কম নয় কিন্তু এবার উৎপাদন খরচ কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।”
এস. এম. শহীদ নূর আকবর আরও বলেন, “কিছুদিন পর পাটের দাম আরও বাড়বে। তখন কৃষকেরা লাভবান হবে। আশা করছি দ্রুতই সুদিন ফিরবে পাট চাষিদের।”